Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আচমকা চুমুতে থতমত বাবুল, লকেটের মুখে একলা চলো

ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষণ থেকে উসখুস করছিলেন দুই তরুণী। সকাল থেকে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে তৈরি। সুযোগ ঠোঁট-ছাড়া করলেন না তাঁদেরই এক জন। গোপালনগরের পাল্লায় তুমুল ভিড় তখন ঘিরে রেখেছে বাবুল সুপ্রিয়কে। ঠেলেঠুলে এগিয়ে প্রায় চুল ধরে টেনে নামিয়ে বাবুলের গালে চকাস করে একটা চুমু খেলেন তিনি। তার পরেই বিশ্বকাপ জয়ের হাসি হেসে মিলিয়ে গেলেন ভিড়ের মধ্যে। প্রথমটায় থতমত, কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ সপ্রতিভতায় সামলে নিয়ে একগাল হেসে বাবুল বললেন, “এই পাল্লায় এসে মেয়েদের পাল্লায় পড়েও কিন্তু গোল্লায় যাইনি!”

ঠাকুরনগরে দলের প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়।   দেখছেন মঞ্জুল ঠাকুরও। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

ঠাকুরনগরে দলের প্রার্থী সুব্রত ঠাকুরের প্রচারে বাবুল সুপ্রিয়। দেখছেন মঞ্জুল ঠাকুরও। নির্মাল্য প্রামাণিকের তোলা ছবি।

সীমান্ত মৈত্র
নির্মল বসু  শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে অনেক ক্ষণ থেকে উসখুস করছিলেন দুই তরুণী। সকাল থেকে শাড়ি পড়ে সেজেগুজে তৈরি। সুযোগ ঠোঁট-ছাড়া করলেন না তাঁদেরই এক জন।

গোপালনগরের পাল্লায় তুমুল ভিড় তখন ঘিরে রেখেছে বাবুল সুপ্রিয়কে। ঠেলেঠুলে এগিয়ে প্রায় চুল ধরে টেনে নামিয়ে বাবুলের গালে চকাস করে একটা চুমু খেলেন তিনি। তার পরেই বিশ্বকাপ জয়ের হাসি হেসে মিলিয়ে গেলেন ভিড়ের মধ্যে। প্রথমটায় থতমত, কিন্তু স্বভাবসিদ্ধ সপ্রতিভতায় সামলে নিয়ে একগাল হেসে বাবুল বললেন, “এই পাল্লায় এসে মেয়েদের পাল্লায় পড়েও কিন্তু গোল্লায় যাইনি!”

চুমু পর্যন্ত আর কেউ না গেলেও সোমবার দিনভর বিজেপির তারকা সাংসদকে একটু কাছ থেকে দেখা, হাত মেলোনার জন্য তুমুল উন্মাদনা ছিল বনগাঁয়। ঠাকুরনগরে বেলা দেড়টা নাগাদ আসার কথা থাকলেও বাবুল পৌঁছন সাড়ে ৩টে নাগাদ। তাতে ভিড় তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। তাঁর গাড়ি যখন অন্তত দু’কিলোমিটার দূরে, রাস্তার দু’পাশে উপচে পড়েছে অনুরাগীদের ভিড়। সেই ভিড়ে বারবার আটকে পড়েছে বাবুলের গাড়ি। ঠান্ডা মাথায়, হাসিমুখে ভক্তদের সামলেছেন বাবুল। হেসেছেন, হাত মিলিয়েছেন, কেউ ছবি তুলতে চাইলে অকাতরে সেই সুযোগও দিয়েছেন।

মঞ্চে মিনিট পনেরোর জন্য বলতে উঠেও হাততালির চোটে একটু বাদে-বাদেই থমকে যেতে হয়েছে বাবুলকে। বাবুল বলেন, “পদ্মফুল কোথায় ফোটে জানেন? পাঁকে। দিদি রাজ্যের আনাচ-কানাচে অনেক পাঁক তৈরি করেছেন। সেখানে এখন পদ্মফুল ফুটবে।” আর সভা জুড়ে হাততালির ঝড় বয়ে যায়। ঠাকুরনগর থেকে পাল্লার দিকে যাওয়ার সময়ে বেলতার কাছে রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে চায়ের দোকান থেকে গেলাসে দুধ নিয়ে যখন চুমুক দিচ্ছেন, তখনও জনতা তাঁকে ঘিরে। বনগাঁ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুব্রত ঠাকুর অবশ্য তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। তিনি অন্যত্র ব্যস্ত ছিলেন প্রচারে। যা নিয়ে দলের কর্মীদের একাংশ ক্ষুব্ধ।

এমনিতেই প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ রয়েছে। এ দিনই ঠাকুরনগরে অন্য এক সভায় সুব্রতকে পাশে নিয়ে বিজেপি নেতা কেডি বিশ্বাস বলেন, “জানি, আপনাদের মধ্যে দুঃখ-যন্ত্রণা আছে। আমার মধ্যেও আছে। কিন্তু প্রার্থী যে-ই হোন, পদ্মফুল ফোটান।” সেখানেই প্রথম বারের মতো ছেলের হয়ে প্রচারে দেখা গেল সদ্য তৃণমূলের মন্ত্রিত্ব ছেড়ে আসা মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে। তিনি দাবি করেন, “তৃণমূলের আশি শতাংশ লোকই খারাপ। বাকি যে কুড়ি শতাংশ আছেন, তাঁরা দল ছাড়বেন।” খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই সভায় হাজির ছিলেন সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডের অন্যতম সাক্ষী, নিহত বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমীলা রায়। তিনি বলেন, “এখন প্রতিবাদীদের খুন করা হচ্ছে। মৃত্যু নিয়ে খেলা চলছে।”

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি, রাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, দলের এক মাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্যও এ দিন প্রচারে আসেন স্বরূপনগরে। নকভি দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রীর পুরো পরিবার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।” সিদ্ধার্থনাথ বলেন, “বসিরহাটে এক বার নাড়া দিয়েছেন। বনগাঁর ভোটে আর একবার তৃণমূলকে নাড়া দিন। তা হলে ২০১৬-য় ‘ভাগ মমতা ভাগ’ সম্পন্ন হবে।” শমীকের দাবি, “রাজ্যে হানাহানি বন্ধ করে শান্তি, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা চাইলে বনগাঁ কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী করতে হবে।”

বাবুল বাজিমাত করলেও, সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসা অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় কিন্তু প্রথম বারের জন্য বনগাঁয় প্রচারে এসে তেমন দাগ কাটতে পারলেন না। স্বরূপনগরের সভায় জনতার উদ্দেশে লকেট প্রশ্ন “আপনারা সকলে সুব্রত ঠাকুরকে ভোট দেবেন তো?” সকলের মুখে কুলুপ। আরও বার দুয়েক একই প্রশ্ন সত্ত্বেও দু’একটা ঘাড় নাড়া ছাড়া কোনও জবাব না পেয়ে লকেট গাইতে শুরু করেন, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে...।” পিছন থেকে টিপ্পনী ভেসে আসে, “আরে, এ তো মুখ্যমন্ত্রীর প্রিয় গান!” মুচকি হেসে পাশ থেকে এক জনের কটাক্ষ, “সবে দিদিমণিকে ছেড়ে এসেছেন তো, এখনও পুরনো দিনের গান পিছু ছাড়েনি!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE