মেজর চিরাগ চট্টোপাধ্যায় এবং পিয়ালি বসাক। ফাইল চিত্র।
এক জন নৈহাটির বছর চৌত্রিশের যুবক, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। অন্য জন চন্দননগরের বছর বত্রিশের প্রাথমিক স্কুলশিক্ষিকা। এক জনের লক্ষ্য এভারেস্ট, অন্য জনের এ বারের ‘পাখির চোখ’ আট হাজারি মাকালু। বুধবার সকালে এই দু’জনের পায়ে ভর দিয়েই জোড়া শৃঙ্গ ছোঁয়ার স্বপ্ন সফল হল বাঙালির। এ দিন সাতসকালেই এভারেস্টের (৮৮৪৮ মিটার) শীর্ষে পৌঁছন আদতে নৈহাটির বাসিন্দা, মেজর চিরাগ চট্টোপাধ্যায়। আর তার পরেই বিশ্বের পঞ্চম উচ্চতম মাকালুর (৮৪৮১ মিটার) শীর্ষ ছুঁয়ে ফেললেন পিয়ালি বসাক। তবে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ থাকছে। শৃঙ্গজয়ের পরে তিনি ক্যাম্প ৪-এ নামতে পারেননি বলে আয়োজক সংস্থার তরফে রাতে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে আজ, বৃহস্পতিবার উদ্ধারকারী দল পাঠানো হবে।
মেজর চিরাগের পাহাড়প্রেম ছোট থেকেই। তবে আট হাজারি পথে পা বাড়ানো এই প্রথম। সেই অভিযানের লক্ষ্য হিসাবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন এভারেস্টকেই। আর প্রথম বারেই কেল্লা ফতে! এ দিন সাতসকালে তাঁর সামিটের খবর আসে দিল্লিবাসী স্ত্রী নির্মলা রাইয়ের কাছে। তাঁর অভিযান আয়োজককারী সংস্থা পায়োনিয়ার অ্যাডভেঞ্চারের কর্ণধার পাসাং শেরপা এ দিন সন্ধ্যায় বলেন, ‘‘প্রথম আট হাজারি অভিযান হিসেবে এভারেস্ট সামিট করে ক্যাম্প ৪-এ নেমে এসেছে চিরাগ। আজই লোৎসে অভিযান করার কথা রয়েছে। এত ক্ষণে হয়তো লোৎসের পথে বেরিয়েও পড়েছে।’’
সেনাবাহিনী থেকে পর্বতারোহণের পথে পাড়ি দেওয়া নতুন কথা নয়। তবে চিরাগ ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এই পথে হাঁটতে চেয়েছিলেন। নৈহাটির বাড়িতে রয়েছেন মা-বাবা-ভাই। দিল্লিতে কর্মরত স্ত্রী নির্মলা। তিনি জানাচ্ছেন, বছর দুয়েক আগে লাদাখের সাত হাজারি কুন শৃঙ্গে অভিযান করেন চিরাগ। তার পরেই সোজা এভারেস্ট! নির্মলার কথায়, ‘‘গত সাত-আট মাস ধরে অমানুষিক পরিশ্রম আর প্রশিক্ষণে নিজেকে তৈরি করেছে চিরাগ। গত ১৪ এপ্রিল, বাংলা নববর্ষের দিন দিল্লির বাড়ি থেকে রওনা দেয়। সোমবার ক্যাম্প ৪ থেকে সামিটের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা থাকলেও খারাপ আবহাওয়ার জন্য পারেনি। আবহাওয়া আর শরীর ঠিক থাকলে লোৎসের জন্যও আপ্রাণ চেষ্টা করবে।’’
অন্য দিকে, অসুস্থ বাবার হাসপাতালে ভর্তির খবর পেয়ে জোড়া অভিযানের মাঝপথে বাড়ি ফিরে এসেছিলেন বড় মেয়ে পিয়ালি। তবে লক্ষ্যবিচ্যুত হননি। বরং দু’দিন বাবার পাশে থেকে ফিরেছেন নেপালে। গত মাসে অন্নপূর্ণার (দশম উচ্চতম, ৮০৯১ মিটার) পরে এ দিন সকালেই মাকালুতেও সফল আরোহণ করলেন তিনি। সেই সঙ্গে ভারতীয় মহিলা হিসাবে ছ’টি আট হাজারি শৃঙ্গজয়ের (মানাসলু, ধৌলাগিরি, এভারেস্ট-লোৎসে, অন্নপূর্ণা-মাকালু) কৃতিত্ব নিজের পকেটে পুরেছেন। হিমাচলকন্যা বলজিৎ কৌরের সঙ্গেই এই কৃতিত্ব ভাগ করে নিচ্ছেন পিয়ালি। এ ছাড়া ২০২২ সালে নেপালের দিক দিয়ে চো ইউ শৃঙ্গে শীতকালীন অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।
পাসাং শেরপা জানাচ্ছেন, গত শনিবার বেসক্যাম্প থেকে সামিটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন পিয়ালি ও তাঁর সঙ্গীরা। পরিকল্পনামতো গত সোমবার সন্ধ্যায় ‘সামিট পুশ’-এ বেরনোর কথা ছিল। কিন্তু হাওয়ার গতি বেশি থাকায় ক্যাম্প ৩-তেই অপেক্ষা করেন তাঁরা। মঙ্গলবার রাতে সেখান থেকে শীর্ষের দিকে রওনা দেন। এ দিন সকালে পৌঁছন অভীষ্ট লক্ষ্যে।
এভারেস্টের চেয়েও কঠিন মাকালু ছোঁয়ার খবরে কিছুটা স্বস্তিতে ছিলেন পিয়ালির মা স্বপ্না বসাক। ফোনে সুখবর পেয়ে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া, ‘‘যাক বাবা! এ বার ভালয় ভালয় নেমে আসুক।’’ পিয়ালির বাবা, শয্যাশায়ী তপন বসাক অবশ্য কিছুই বুঝতে পারছেন না। ‘‘গত কয়েক দিন ধরেই বড় মেয়ের নাম ধরে ডাকছেন উনি। মেয়েকে অনেক দিন ধরে দেখতে পাচ্ছেন না বলেই হয়তো...’’— বলছেন স্বপ্না।
তবে রাতে পাসাং বলেন, ‘‘দলের মধ্যে সবচেয়ে দেরিতে সামিট করেছে পিয়ালি। হয়তো অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্য ছাড়াই চেষ্টা করেছে, তাই দেরিতে পৌঁছেছে। এখনও পর্যন্ত ক্যাম্প ৪-এ পৌঁছতে পারেনি ও। অক্সিজেন ছাড়া যেতে আগেই বারণ করেছিলাম, শোনেনি। বেসক্যাম্পে ইতিমধ্যেই জানিয়েছি, বৃহস্পতিবার প্রয়োজনে উদ্ধারকারী দল উপরে যাবে পিয়ালির জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy