শনিবার সকালে বিলেত সফরে রওনা হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কলকাতায় ফেরার কথা পরের শনিবার, আগামী ২৯ মার্চ রাতে। এই এক সপ্তাহে সরকারের কাজ দেখভাল করার জন্য যেমন টাস্ক ফোর্স গড়ে দিয়েছেন তিনি, তেমনই দলের কাজ দেখভালের জন্যও দায়িত্ব বণ্টন করেছেন। সেই সূত্রেই দলের অন্দরে বার্তাও দিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী। যে বার্তা বলছে, দলের কাজকর্ম দেখবে ‘যৌথ নেতৃত্ব’। সেই ‘যৌথতা’ তৈরি হবে প্রবীণ-নবীনের মিশেলে।
বৃহস্পতিবার মমতা জানিয়েছেন, তিনি বিদেশে থাকার সময়ে দলের কাজকর্ম দেখবেন সুব্রত বক্সী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ, দল চালাবেন রাজ্য সভাপতি এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অর্থাৎ, প্রবীণ এবং নবীন প্রজন্মের দুই প্রতিভূ। মমতা বলেছেন, ‘‘দলের কাজটা সুব্রত বক্সী আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়েরা মিলে দেখে নেবে।’’
মমতার ওই ঘোষণা গত কয়েক মাসের ঘটনাক্রমের নিরিখে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। এর মধ্যে তিনটি বার্তা রয়েছে বলে অভিমত শাসক শিবিরের। প্রথমত, মমতা কোনও নির্দিষ্ট এক জনকে দায়িত্ব দিলেন না। দু’জনকে দলের কাজ দেখতে বললেন। যাঁদের এক জন রাজ্য সভাপতি, অন্য জন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। দ্বিতীয়ত, ‘প্রবীণ’ বক্সী এবং ‘নবীন’ অভিষেককে যৌথ দায়িত্ব দিয়ে মমতা সার্বিক ভাবে গোটা সংগঠনকে বার্তা দিলেন, নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ের ভিত্তিতেই দল চলবে। তৃতীয়ত, তিনি কয়েক দিন থাকবেন না বলে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এবং তিনি নিজেই তা ঠিক করে দিয়েছেন। অর্থাৎ, দলের ‘নিয়ন্ত্রণ’ তাঁর হাতেই।
আরও পড়ুন:
গত কয়েক মাস ধরে সংগঠনের মূল ধারা থেকে অভিষেকের ‘দূরে সরে থাকা’ নিয়ে তৃণমূলে জল্পনা এবং আলোচনা চলেছে। এই পর্বে অভিষেক নিজেকে নিজের সংসদীয় কেন্দ্র ডায়মন্ড হারবারের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ রেখেছিলেন। ব্যস্ত ছিলেন স্বাস্থ্য পরিষেবার কর্মসূচি ‘সেবাশ্রয়’ নিয়ে। যে পর্বে গোটা রাজ্যের সংগঠনে অভিষেককে ‘নিষ্প্রভ’ দেখিয়েছিল সেই পর্বে মমতা একাধিক বার বার্তা দিয়েছেন এই মর্মে যে, সরকার, সংসদীয় দল, দলীয় সংগঠন— সব ক্ষেত্রে তিনিই ‘শেষ কথা’ বলবেন। বস্তুত, মমতা বলেছিলেন, আরও ১০ বছর দলের কাজ তিনিই সামলাবেন। কিন্তু ভোটার তালিকা সংশোধনের কর্মসূচি নিয়ে অভিষেক ফের ‘সক্রিয়’ হয়েছেন সংগঠনে। গত শনিবার ৪,৫০০ নেতাকে নিয়ে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন অভিষেক। তাঁর ক্যামাক স্ট্রিটের অফিস থেকে সেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন রাজ্য সভাপতি বক্সী। তখনই দলের অনেকে সেই ‘যুগলবন্দি’তে নেত্রীর বার্তা দেখতে পেয়েছিলেন। উপরন্তু, বৈঠক থেকে অভিষেক সংগঠন সংক্রান্ত বিষয়ে যা যা বলেছিলেন তাতে এ-ও স্পষ্ট হয়েছিল যে, মমতার অনুমোদন সাপেক্ষেই তিনি কর্মসূচির রূপরেখা, রদবদল সংক্রান্ত বক্তব্য পেশ করেছেন। ওই বৈঠকের শুরুতে এবং শেষে সভাপতি হিসাবে কয়েকটি কথা বলেছিলেন বক্সী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের সকলের নেতা।’’
এক সপ্তাহের বিদেশ সফর সময়েও নেতৃত্বের সেই ‘যৌথতা’ বজায় রাখলেন মমতা। বক্সী এবং অভিষেকের কাঁধেই দলের কাজ দেখভালের দায়িত্ব দিলেন দিদি।