প্রতিবাদ মিছিল। ছবি: পিটিআই।
‘কলরব থামে না’! ‘ফাসিস্ত শক্তি দূর হটো’! পাঁচ বছর আগের এক বৃষ্টি-ভেজা কলকাতার আবেগেই যেন আবার সওয়ার হল যাদবপুর। ঠিক পাঁচ বছর আগে রবীন্দ্রসদন থেকে ধর্মতলা, প্লাবন তোলে কলরবের মহা-মিছিল। শুক্রবার বিকেলে যাদবপুর থেকে গোলপার্কের পথে কিছুটা হলেও সেই স্মৃতি ফিরে এল।
দুপুরে এইট বি-র মোড়ে লাউডস্পিকারে মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আটকে রাখার প্রতিবাদে প্রচার চলছিল পুরোদমে। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গেরুয়া হামলা’র প্রতিবাদে কয়েক হাজার ছাত্র-শিক্ষক-প্রাক্তনী-সহমর্মীর মিছিল পাল্টা ঢেউ তুলে গেল।
এ দিন দুপুরে প্রায় একই সময়ে যাদবপুর থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল দুই প্রতিপক্ষ-শিবির। তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে হেনস্থা নিয়ে বিজেপি শিবির-ভুক্ত ফ্যাশন ডিজ়াইনার অগ্নিমিত্রা পাল অভিযোগ করেন। কলা বিভাগের ইউনিয়নের এসএফআই নেতৃত্বও তখনই ইউনিয়ন রুম ভাঙচুর নিয়ে অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, ক্ষতি হয়েছে লক্ষাধিক টাকার। বেশিরভাগই অচেনা মুখ, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনস বিভাগের এক পড়ুয়ার নামও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। এসএফআই-এর একটি প্রতিবাদ-মিছিল দুপুরে ঢাকুরিয়া থেকে যাদবপুর ক্যাম্পাসে পৌঁছয়। সেই মিছিলের মুখেরা বলছিলেন, কী ভাবে যাদবপুরে হামলার রাতেই এইট বি-র মোড়ে লেনিন মূর্তি ভাঙার ‘চক্রান্তে’র খবরও ছড়িয়ে পড়ে। বিজয়গড়ের বাসিন্দা সিপিএম কর্মী পৃথা তা বলেন, ‘‘আমরা লেনিন মূর্তি পাহারা দেওয়ার সময়েও বাইক-বাহিনী চক্কর দেয়।’’
তবে যাদবপুরে মন্ত্রীর উপস্থিতি-পরবর্তী হামলা নিয়ে প্রতিবাদী আবেগ তুঙ্গে ওঠে ধিক্কার-মিছিলকে ঘিরে। মিছিল এনআরসি-র উপদ্রব এবং শিক্ষাঙ্গনে ‘গেরুয়া দখলদারি’ নিয়ে সরব হয়েছে। জেএনইউ-কাণ্ড থেকেই বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের প্রতিবাদের চেনা লব্জ আজাদি স্লোগান। সঙ্গে রোল উঠেছে, ‘এক ধাক্কা অউর দো, ক্যাম্পাস বেচনেওয়ালো কো’ কিংবা ‘দেশ বেচনেওয়ালো কো’! পড়ুয়ারা মুখে মুখে স্বতঃস্ফূর্ত গান বেঁধেছেন ‘বিজেপি দূর হটো’! আবার ঢাকুরিয়ার আমরি-র সামনে এসে রোগীদের কথা ভেবে মিছিল স্তব্ধ। অন্ধকার ঢাকুরিয়া সেতু থেকে নামার মুখে জ্বলে উঠেছে অজস্র মোবাইল ফোন।
যাদবপুরের ১৯৮০-র দশকের ছাত্রী মৌসুমি ভৌমিক বা একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী ও শিক্ষক— এমন অনেকেই মিছিলের মুখ। এক শিখ বৃদ্ধ আগাগোড়া মিছিলে হাঁটলেন। স্লোগানে গলা মেলালেন। ‘‘এটা তো গাজোয়ারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, তাই এসেছি।’’— রামধনুরঙা পতাকা হাতে বলল সমকামীদের একটি ছোট দল। বাবুল সুপ্রিয়ের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁদের অনেককেও দেখা গিয়েছে মিছিলে। উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা পবন শুক্ল তুলনামূলক সাহিত্যে এমএ পড়ছেন। কপালের ক্ষতে ব্যান্ডেজ নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘পড়ার নেশায় ভর্তি হয়েছি যাদবপুরে। এক সময়ে মুম্বইয়ে চাকরি করতাম।’’ এসেছিলেন সল্টলেক ক্যাম্পাস ও সেন্ট জ়েভিয়ার্সের ছাত্ররাও। প্রেসিডেন্সিতেও যাদবপুরকে সংহতি জানিয়ে মিছিল হয়েছে। রাতে সিপিএমের তরফেও মিছিল হয়।
না-থেকেও মিছিলের মনে ছিলেন হাসপাতালে ভর্তি উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। এসএফআই ইউনিয়নের তরফে দেবরাজ-উষসীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে চিঠিতে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy