লাভপুরে চলছে পরীক্ষা। ছবি: কল্যাণ আচার্য
আশঙ্কা ছিল মূলত সাইবার-সরণি নিয়েই। খুব সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া বেগ দিল সেই ইন্টারনেট। নড়বড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা ভোগাল পরীক্ষার্থীদের। কলকাতা ও জেলায় বাড়ির বদলে অনেকেই পরীক্ষা দিলেন কলেজে বসে। কলেজের মাঠে বা গাছতলায় পরীক্ষা দেন অনেকে। সেই দলবদ্ধ পরীক্ষা এবং কলেজে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার হুড়োহুড়িতে উবে গেল করোনা স্বাস্থ্যবিধি। তাতেও নির্দিষ্ট আধ ঘণ্টার মধ্যে তো নয়ই, সন্ধ্যা পর্যন্তও সব খাতা জমা পড়েছে কি না, নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি।
অতিমারির মধ্যে বৃহস্পতিবার, রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের চূড়ান্ত সিমেস্টার এবং চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার প্রথম দিনে এই ছবি দেখা গিয়েছে বঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তরে। বিভিন্ন কলেজ যে যেমন ভাবে পারে, পরীক্ষা নিয়েছে। কলকাতার আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কলেজের অধ্যক্ষ পূর্ণচন্দ্র মাইতি জানান, ৩১ জন কলেজের শ্রেণিকক্ষে দূরত্ব বজায় রেখেই পরীক্ষা দিয়েছেন। মালদহ, মুর্শিদাবাদ, এমনকি বিহারেরও অনেক পড়ুয়া আছেন তাঁর কলেজে।
সেই পড়ুয়ারা তাঁকে জানিয়েছিলেন, তাঁদের ইন্টারনেট নেই, অনেকের স্মার্টফোন নেই। কারও কারও গ্রামে বিদ্যুৎই পৌঁছয়নি। ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমরা ওই পরীক্ষার্থীদের জন্য কলেজেই পরীক্ষা ব্যবস্থা করেছি,’’ বলেন অধ্যক্ষ। সেই খবর বিকাশ ভবনে পৌঁছলে উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অধ্যক্ষ জানান, ইউজিসি-র নিয়ম মেনেই তিনি পরীক্ষা নিয়েছেন।
আরও পড়ুন: জেলায় জেলায় মাস্কে অনীহা, উদ্বেগে ডাক্তাররা
কারণ ইউজিসি-র নির্দেশ, পরীক্ষা অফলাইন বা অনলাইন অথবা ‘ব্লেন্ডেড মোডে’ নিতে হবে। অধ্যক্ষ আরও জানালেন, এর পরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১০০ হয়ে যাবে। তাই কলেজের ১০টি কক্ষ জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয়েছে। পরীক্ষা নিতে অসুবিধা হবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কিছু ছাত্র কলেজে থেকে যাচ্ছেন। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি যাবেন।
আরও পড়ুন: অনুব্রতের সামনে বুথ দখলের ‘আশ্বাস’
এই নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি আমায় কেউ জানায়নি। তাই মতামত দিতে পারছি না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কলেজের পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে।’’ইউজিসি জানিয়েছিল, দু’ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা নিতে হবে এবং প্রশ্নপত্র ডাউনলোড আর উত্তরপত্র আপলোড করার জন্য পরীক্ষার্থীরা আধ ঘণ্টা সময় পাবেন। এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১১টার মধ্যে সব কলেজে প্রশ্নপত্র পৌঁছে যায়। কলেজ তাদের ওয়েবসাইটে সেই প্রশ্নপত্র আপলোড করে। লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানান, তাঁর কলেজে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর— দু’টি স্তরেরই পরীক্ষা হয়েছে। সব পরীক্ষার্থীই অনলাইনে উত্তরপত্র জমা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: উৎসবের মরসুমে রেশন দোকানে মিলবে সর্ষের তেল
কাকদ্বীপ সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ প্রবীর দাস জানান, তাঁরা সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা নিতে পেরেছেন। অনলাইনে খাতা জমা দিতে পেরেছেন ৯০% পরীক্ষার্থী। অনেকে কলেজের কাছে আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাঁরা কলেজে এসে খাতা জমা দেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিদ্যানগর কলেজের মাত্র ২০% পরীক্ষার্থী ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপ করে উত্তরপত্র জমা দিতে পেরেছেন বলে জানান অধ্যক্ষ সূর্য আগরওয়াল। তিনি বলেন ৮০% পরীক্ষার্থী কলেজে এসে উত্তরপত্র জমা দেন। অনেকে কলেজের কাছে ক্যাম্প
করে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন। নামখানা শিবানী মণ্ডল মহাবিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ দয়ালচাঁদ সর্দার জানান, তাঁদের কলেজের সার্ভার ডাউন হয়ে গিয়েছিল। ফলে পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করতে কিছুটা অসুবিধা হয়। তাঁদের প্রশ্নপত্র পাঠানো হয় ই-মেল বা হোয়াটসঅ্যাপে। প্রায় সকলেই অনলাইনে খাতা জমা দিতে পেরেছেন। এক জন পরীক্ষার্থীর অসুবিধা হয়েছিল। উত্তরপত্র কী ভাবে আপলোড করতে হবে, এক জন শিক্ষক এবং এক জন প্রযুক্তিকর্মী তাঁর বাড়িতে গিয়ে সেটা বুঝিয়ে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy