‘অ্যাক্টিভিটি টাস্ক’ বা গৃহপাঠের উত্তর দেওয়ার জন্য পাঠ্যপুস্তক বা নোটস নয়, ইউটিউবে ভরসা রাখছে অনেক পড়ুয়া। ইউটিউব চ্যানেলেই লিখে দেওয়া হচ্ছে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের প্রশ্ন। তৎক্ষণাৎ তার উত্তর পাঠাচ্ছে ইউটিউব। অনেক ছাত্রছাত্রী সেই উত্তর হুবহু টুকে নিচ্ছে বলে শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ।
গত বছরে করোনাকালে অ্যাক্টিভিটি টাস্কের খাতা দেখতে গিয়ে হাওড়ার এক শিক্ষিকা দেখেন, পড়ুয়া নোটস বই দেখে হুবহু টুকেছে তো বটেই, সেই সঙ্গে একটি উত্তরে লিখেছে, ‘ওই প্রশ্নের উত্তর নোট বইয়ের ৭৫ নম্বর পাতায় পাওয়া যাবে।’ প্রশ্ন উঠছে, এই ভাবে নোটবই বা ইউটিউব চ্যানেল দেখে গৃহপাঠের উত্তর টুকে আদৌ কি কিছু শিখতে পারছে পড়ুয়ারা?
খোঁজ নিয়ে শিক্ষকেরা দেখেছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেই চ্যানেল খুলে দেখা গিয়েছে, জুলাইয়ের দশম শ্রেণির বাংলার মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্কের প্রশ্নের সঙ্গে উত্তর লিখে তা ওই চ্যানেলে দেখানো হচ্ছে। সঙ্গে ভয়েস ওভারেও বলা হচ্ছে উত্তর। কোনও শিক্ষক বা অন্য কাউকে পর্দায় দেখা যাচ্ছে না। শুধু খাতা আর সেই খাতার প্রশ্নোত্তরগুলো পর্দায় দেখা যাচ্ছে। পড়ুয়ারা খাতা দেখে লিখতে পারছে, প্রশ্নের উত্তর শুনেও লিখছে। পর্দার আড়ালে থেকে যিনি উত্তর বলছেন ও দেখাচ্ছেন, তিনি বলছেন, ‘তোমরা উত্তরগুলো পরপর লিখে নাও।’ এ ভাবে ইউটিউব চ্যানেল দেখেই সে অ্যাক্টিভিটি টাস্ক করছে বলে জানাল হাওড়ার বালির এক দশম শ্রেণির ছাত্র। তার কথায়, “নোট বইয়ের থেকেও এটা সুবিধাজনক। হাতের সামনে উত্তর দেখে লিখে দিতে পারছি। প্রয়োজনে কিছু ক্ষণ ভিডিয়ো থামিয়ে পর্দায় ফুটে ওঠা খাতার উত্তর দেখে লিখে নিয়ে ফের তা চালিয়ে দিচ্ছি।”
এ ভাবে কি আদৌ কিছু শিখছে পড়ুয়ারা? স্কুলের পাঠ্যপুস্তকই তো খুলে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না তারা। হিন্দু স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক প্রদীপ বসু বলেন, “বই খুলে বা নোটবই খুলে লিখতে দিলেও কিছুটা পড়তে হয়। উত্তর খুঁজে বার করে লিখতে গেলে কিছুটা পড়া হয়ে যায় পড়ুয়াদের। এখানে তো পাঠ্যপুস্তক দেখে বা নোটবই দেখে উত্তর খোঁজারও দরকার নেই। কার্যত চামচ দিয়ে খাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমন শর্টকাটের পন্থা একেবারেই মানা যায় না।” প্রদীপবাবু জানান, ওই ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে যদি অ্যাক্টিভিটি টাস্কের উত্তর বুঝিয়ে দেওয়া হত, তা হলেও হয়তো পড়ুয়ারা কিছুটা বুঝে নিয়ে প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারত। তা করা হয়নি। ফলে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে পড়ুয়াদের। “করোনার সময়ে সেল্ফ লার্নিং-এর উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ইউটিউব চ্যানেলে লেখা উত্তর দেখে টুকে দেওয়াটাকে আর যা-ই হোক, সেল্ফ লার্নিং বলা যায় না,” বলেন শিক্ষাবিদ সমীর ব্রহ্মচারী।
ইউটিউবের মাধ্যমে পড়ান দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার এলাকার শিক্ষক অনিমেষ হালদার। তিনি বলেন, “করোনাকালে পড়ুয়াদের পাশে থাকার জন্য ইউটিউবে পড়ানোর কাজও করেছি। কিন্তু এ ভাবে টাস্কের প্রশ্নের সব উত্তর লিখে দিয়ে তা টুকতে বললে পড়ুয়ারা তো কিছুই শিখবে না। কারা এই কাজটা করছে, তা জানার চেষ্টা করছি। ওই ইউটিউবের ভিডিয়োটি বেশি সংখ্যক লাইক পেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে উপার্জন হয়তো হবে, কিন্তু তাতে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে পড়ুয়াদের পড়াশোনা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy