Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

বালিকাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা, ধৃত ছাত্র

রাত তখন সাড়ে ৮টা। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে করতে বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে দৌড়চ্ছিল বছর দশেকের মেয়েটি। শরীরের বেশির ভাগটাই পুড়ে ঝলসে গিয়েছে। বিকৃত মুখ। মেয়েটিকে ওই অবস্থায় দেখে থ হয়ে গিয়েছিলেন পড়শি প্রৌঢ়া কৃষ্ণারানি পোদ্দার। মেয়েটি বলে ওঠে, ‘‘দিদা, ভয় পেও না। আমায় তুমি চেন। এখানেই থাকি। আমায় বাঁচাও।’’

সীমান্ত মৈত্র
অশোকনগর শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৯:২১
Share: Save:

রাত তখন সাড়ে ৮টা।

বাঁচার জন্য চিৎকার করতে করতে বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে দৌড়চ্ছিল বছর দশেকের মেয়েটি। শরীরের বেশির ভাগটাই পুড়ে ঝলসে গিয়েছে। বিকৃত মুখ। মেয়েটিকে ওই অবস্থায় দেখে থ হয়ে গিয়েছিলেন পড়শি প্রৌঢ়া কৃষ্ণারানি পোদ্দার। মেয়েটি বলে ওঠে, ‘‘দিদা, ভয় পেও না। আমায় তুমি চেন। এখানেই থাকি। আমায় বাঁচাও।’’

কৃষ্ণাদেবী এগিয়ে যান। পড়শিদের ডাকেন। এক জন গামছা দিয়ে মেয়েটির শরীর ঢেকে দেন। তার পরে অটোতে চাপিয়ে নিয়ে যান হাবরা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখান থেকে মেয়েটিকে প্রথমে বারাসত জেলা হাসপাতাল, পরে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, মেয়েটির শরীরের ৬৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছে।

শুক্রবার অশোকনগরের মানিকতলা এলাকার বাসিন্দা, পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্রীটিকে তার ঘরের মধ্যেই কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে এলাকারই দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে। সেই সময় ছাত্রীটি ঘরে একাই ছিল। ছাত্রটিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কেন ছাত্রীটিকে এ ভাবে খুনের চেষ্টা করা হয় তা নিয়ে পুলিশ অন্ধকারে। ছাত্রীটির মায়ের অনুমান, ‘‘বোধহয় বড় মেয়েদের সঙ্গে যে অসভ্যতা করা হয়, তেমন কিছু করতে গিয়েছিল ওরা।’’

থানায় অবশ্য ধর্ষণ বা শারীরিক নির্যাতনের কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি ছাত্রীটির বাবা-মা। শুধু খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশের কাছে মেয়েটটি জানায়, ওই রাতে তিন জন তার ঘরে ঢুকে মুখ চেপে ধরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয়। তার পরে লাইটার জ্বেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

শনিবার রাতে মানিকতলা থেকেই অভিযুক্ত ছাত্রটিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মেয়েটি ছবি দেখে ছেলেটিকে শনাক্ত করে। পুলিশ জানিয়েছে, জেরার সময় নানা ভুল তথ্য দিয়ে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে ছেলেটি। রবিবার তাকে বারাসত আদালতে হাজির করানো হয়। ছাত্রটি বয়সের প্রমাণপত্র পুলিশকে দেখাতে পারেনি। বিচারক তাকে ছ’দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। এ দিনই ফরেন্সিক দল ছাত্রীটির বাড়িতে গিয়ে পোড়া জামাকাপড়ের নমুনা সংগ্রহ করে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনার কারণ পরিষ্কার নয়। তদন্তে সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাকি দু’জনের খোঁজ চলছে।’’

পুলিশের কাছে মেয়েটির মা দাবি করেছেন, ছাত্রীটি তাঁর প্রথম পক্ষের মেয়ে। কিন্তু আনন্দবাজারের কাছে ওই মহিলা আবার দাবি করেন, ‘‘মেয়েটি আসলে তাঁর দিদির। দিদি মারা যাওয়ায় পরে মেয়েটিকে তিনি নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তাঁকে এবং স্বামীকে মেয়েটি বাবা-মা বলেই জানে।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মানিকতলায় আগে অন্য একটি ভাড়াবাড়িতে থাকত ওই ছাত্রীরা। ফেব্রুয়ারিতে তারা অন্য একটি ভাড়াবাড়িতে উঠে আসে। সেই ছেড়ে আসা ভাড়াবাড়িতে বর্তমানে ওই ছাত্র ও তার বাবা-মা থাকে। ছাত্রীটির মা দমদম ক্যান্টনমেন্টে একটি আয়া-কেন্দ্রে কাজ করেন। বাবা বেসরকারি সংস্থার অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সম্প্রতি ঠান্ডা পানীয়ের ব্যবসাও শুরু করেছেন। শুক্রবার ঘটনার সময়ে দম্পতির কেউই ঘরে ছিলেন না। এমনকী, তাঁদের পাশের ঘরের ভাড়াটিয়ারাও কেউ ছিলেন না। অভিযোগ, সেই সুযোগে তিন জন ঘরে ঢুকে ছাত্রীটির গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয়। এরপর ঘরের থেকেই লাইটার জোগার করে মেয়েটির গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। হামলাকারীরা চলে গেলে ছাত্রীটিই জল ঢেলে আগুন নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। ওই রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কেরোসিনের পাত্র ও লাইটার সংগ্রহ করে। নিরাপত্তার জন্য বাড়ির সামনে দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। ধৃত ছাত্রটিকে তাঁরা কেউ চেনেন না বলে দাবি করেছেন মেয়েটির বাবা-মা।

অন্য বিষয়গুলি:

Ashiknagar Manicktala Attempt to Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy