প্রশাসক: উত্তরকন্যার সর্বদল বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
প্রথমে নবান্ন। তার পরে উত্তরকন্যা। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দ্বিতীয় সর্বদল বৈঠকের পরেও পাহাড়ে বন্ধ উঠবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেল। মুখ্যমন্ত্রী এ দিনের বৈঠকে পাহাড়ের দলগুলির বেশ কিছু দাবি মেনে নিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে বন্ধ তোলার যাবতীয় দায়িত্ব ছেড়ে দিলেন বিনয় তামাঙ্গদের উপরে। আর বৈঠকের পরই ফের নিজের অসন্তোষ জানিয়ে এক অডিও-বার্তায় বন্ধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করলেন বিমল গুরুঙ্গ।
বৈঠক শেষে অবশ্য বিনয় তামাঙ্গ বলে গেলেন, ‘‘বন্ধ তোলার আবেদন করা হবে সকলের কাছে।’’ কিন্তু সংশয় তৈরি করেছে গুরুঙ্গের একটি অডিও-বার্তা। সেই বার্তায় ‘ফেরার’ মোর্চা সভাপতি জানান, এই বৈঠকেও তিনি খুশি নন। তিনি চান ত্রিপাক্ষিক আলোচনা হোক। যত দিন তা শুরু না হবে, পাহাড়ে বন্ধ চলবে।
এর পরেই পাহাড়ের মানুষ চিন্তিত, তা হলে কি গুরুঙ্গের কট্টরপন্থী সমর্থকদের হাঙ্গামা চলবে? পাহাড়বাসীদের একাংশের বক্তব্য, গত বৈঠকের পরে পাহাড়ে ফিরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক সেরে বন্ধ শিথিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন তামাঙ্গ। কিন্তু গুরুঙ্গ আপত্তি জানানোয় কট্টরপন্থীদের ভয়ে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি পরিস্থিতি। এ বারেও কি তেমনই কিছু ঘটবে?
এ দিন অবশ্য বিনয়কে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। গুরুঙ্গের নাম না করে তিনি বলেছেন, ‘‘পাহাড়ে কেউ তালিবানি ফতোয়া দিলে চলবে না।’’ গুরুঙ্গপন্থী দুই বিধায়ক যে তাঁদের দিকে চলে এসেছেন, সে কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘পাহাড়ের বিধায়করা মোর্চার প্রতিনিধি হিসেবেই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁরা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নন।’’
এ দিনের বৈঠকে হাজিরাও বেড়েছে। এই দুই বিধায়ক তো বটেই, মোর্চার তরফে ছিলেন বিনয় তামাঙ্গ, অনীত থাপারা। আগের দিনের মতো ছিল মন ঘিসিঙ্গের জিএনএলএফ, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর জন আন্দোলন পার্টি। এ দিনের বৈঠকে যোগ দেন মদন তামাঙ্গের স্ত্রী ভারতী ও তাঁর দল গোর্খা লিগ। প্রায় সকলেই প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন, বন্ধ তুলে পাহাড় স্বাভাবিক করাটা মূল কাজ।
আরও পড়ুন:পাহাড় মেটাতে হবে মমতাকেই
মোর্চার একটি অংশের অবশ্য দাবি, পাহাড়ে গুরুঙ্গের ভয় ধীরে ধীরে কাটছে। এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের একাধিক দাবি মেনে নিয়েছেন, গোর্খাল্যান্ড এবং ত্রিপাক্ষিক প্রসঙ্গ শুনেছেন। এগুলো গণতন্ত্রের লক্ষণ। সে জন্যই গুরুঙ্গপন্থী দুই বিধায়কও শুধু গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আটকে থাকেননি। বা সেই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা যখন এগোল না, তখন ‘ওয়াকআউট’ করেননি। পাহাড়ের দলগুলির দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, মজুরি বৃদ্ধি, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত, আন্দোলনে মৃত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ দিতেও তাঁর আপত্তি নেই। ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকার আর্জিও খারিজ করলেন না। জানিয়েছেন, পরবর্তী বৈঠক হবে ১৬ অক্টোবর, নবান্নে।
এই অবস্থায় বন্ধ তোলা নিয়ে বল এখন পাহাড়ের দলগুলির কোর্টে। কিন্তু কী ভাবে হবে সেই কাজ?
বৈঠক শেষে বিনয় জানান, আজ, বুধবার দলীয় পর্যায়ে আলোচনার পরে তাঁরা ফের জনসভার দিনক্ষণ ঠিক করবেন। সেখানেই পরের পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করবেন। দল সূত্রের খবর, সব ঠিক থাকলে বৈঠকে উপস্থিত পাহাড়ের সব দল একযোগেও জনসভা করার পথে হাঁটতে পারে। কারণ, পাহাড়ের নেতাদের অনেকেই মনে করেন, দলবদ্ধ মিছিল থেকে বন্ধ তোলার কথা ঘোষণা করা হলে গুরুঙ্গের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করার সাহস পেতে পারে পাহাড়বাসী। আর সেই পরিকল্পনা সফল হলে পাহাড় কার্যত ঢুকে পড়বে বহুদলীয় গণতন্ত্রে।
সুবাস ঘিসিঙ্গ তো বটেই, গুরুঙ্গেও আমলেও যা ছিল বিরলতম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy