Advertisement
E-Paper

আইপ্যাক নিয়ে উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করুন! এটা পিকের সংস্থা নয়, মমতার হুঁশিয়ারি তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের

আইপ্যাক যে এখন আর প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-এর সংস্থা নয়, তা জানান দিয়ে দলের নেতাদের উদ্দেশে তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিরূপ মন্তব্য না করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Stop using backbiting in the name of IPAC, says CM Mamata Banerjee to party leaders

প্রতীক জৈন-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৬:০০
Share
Save

তিনি নিজেই কিছু দিন আগে দলীয় বৈঠকে বলেছিলেন, ‘‘কোনও প্যাক-ফ্যাকের কথা শুনবেন না!’’ শুনে তৃণমূলের অন্দরে আইপ্যাক-বিক্ষুব্ধেরা মনে করেছিলেন, এত দিনে তাঁদের বক্তব্যের সমর্থন মিলল দলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে। কিন্তু সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দলের মহাসমাবেশের মঞ্চ থেকে বলে দিলেন, ‘‘পিকের আইপ্যাক এটা নয়। ওরা অন্য জায়গায় কাজ করে। ও (পিকে বা প্রশান্ত কিশোর) একটা রাজনৈতিক দলও করেছে। এটা একটা নতুন টিম। সবাই জানে। এদের কো অপারেশন করতে হবে। এদের নামে উল্টোপাল্টা বলা বন্ধ করুন! তার কারণ, আপনাদের বুঝতে হবে, কাজটা সবাইকে মিলে একসাথে করতে হবে।’’

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের সভা থেকে মমতা যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা থেকে স্পষ্ট যে, ‘ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি’ (আইপ্যাক)-র বিরুদ্ধাচরণ তিনি চাইছেন না। ঘটনাচক্রে, সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন আইপ্যাকের প্রধান প্রতীক জৈন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য বক্তব্যে তারই ছাপ পড়েছে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। দ্বিতীয়ত, বক্তৃতায় মমতা বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে ‘এজেন্সি’ এনে কাজ করাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। শাসকশিবিরের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘নেত্রী বুঝেছেন, বিজেপির ওই সব পেশাদার এজেন্সির মোকাবিলায় আমাদেরও পেশাদার এজেন্সিকে নামাতে হবে। তা ছাড়া, এ রাজ্যে আইপ্যাক তো দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছে। খারাপ কাজ করলে কি আর এত দিন তাদের রাখা হত?’’

ঘটনাপ্রবাহ বলছে, বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের আগে তৃণমূল পরিষদীয় দলের সঙ্গে বৈঠকে মমতা আইপ্যাক নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন, যা খুব ‘প্রশংসাসূচক’ ছিল না। সেই সূত্রেই তৃণমূল বিধায়কদের একটা বড় অংশের মনে হয়েছিল, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আইপ্যাককে ছাড়াই চলবেন মমতা। সেই ‘হাওয়া’ বুঝে তৃণমূলের একাধিক নেতা আইপ্যাক নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে ‘আক্রমণাত্মক’ ছিলেন মদন মিত্র। খানিকটা একই সুরে আইপ্যাকের সমালোচনা করেছিলেন দলের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু বৃহস্পতিবার ‘হাওয়া’ ঘুরে গিয়েছে। যে ভাবে মমতা আইপ্যাক সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে ওই পরামর্শদাতা সংস্থাকে নিয়ে মুখ খোলার প্রবণতা থাকবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিভিন্ন সময়েই তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা আইপ্যাক নিয়ে তাঁদের ক্ষোভের কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভের মূল কারণ?— আইপ্যাক দলের মধ্যে দল তৈরি করে ফেলছে। কুণাল ঘোষের মতো নেতাও একদা বলেছিলেন, প্রতীক জৈনকে দলের সভাপতি বানিয়ে দেওয়া হোক। সম্প্রতি প্রাক্তন মন্ত্রী মদন বলে বসেন, ‘‘আমাদের পার্টিতে টাকাপয়সার লেনদেন ছিল না। এই একটা এজেন্সি পার্টিতে ঢুকল। তারা এ সব শুরু করল। ২০২১ সালের আগে এ সব শুরু হয়েছিল। টাকা নিয়েও নমিনেশন দেওয়া হয়নি। লোককে কাঁদতে দেখেছি।’’ মদনোচিত ভঙ্গিতে কামারহাটির বিধায়ক বলেছিলেন, ‘‘কামারহাটিতে আমাকে শেখানো হচ্ছে, সকালে উঠে কী ভাবে ব্রাশ করব! তার পরে ডান দিকে তাকাব না বাঁ দিকে তাকাব। অনেক গুরুত্বপূর্ণ নামীদামি ছেলের কাছে শুনেছি, যে তাঁরা কেউ ২৫ লাখ, কেউ ৫০ লাখ দিয়েছেন এই এজেন্সির ছেলেদের। কেউ নমিনেশন পাননি। লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছেন না। এত বড় বড় নাম তাঁদের।’’ শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণের অভিযোগ ছিল, ‘‘আইপ্যাকের লোকেরা টাকার বিনিময়ে লোকাল এরিয়ায় গিয়ে যাকে-তাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়ে দিচ্ছেন। তার পরে সারা রাত ধরে পার্টি চলছে।’’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন পিকে। তাঁরই সংস্থা আইপ্যাক দু’বছর কাজ করে বাংলায়। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২১৩টি আসন জিতে মমতা তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন। তাতে আইপ্যাকের ভূমিকা অনস্বীকার্য ছিল। ওই বিধানসভা ভোটের পর ভোটকুশলীর কাজ থেকে অবসর নেন পিকে। ২০২২ সালে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূল। তবে আইপ্যাকের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক এখনও অটুট। তারা শাসকদল এবং রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে মিলেই কাজ করে। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটেও তৃণমূলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করেছিল আইপ্যাক। রাজ্যে বিজেপিকে অনেকটা পিছনে ফেলে তৃণমূল ২৯টি আসনে জয়ী হয়। বস্তুত, মমতা বৃহস্পতিবারের সভায় বলেছেন, পাঁচটি আসনে কারচুপি করে তাঁদের হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। নইলে তৃণমূল লোকসভায় ৩৪টি আসন পেত।

আইপ্যাক নিয়ে মমতার বৃহস্পতিবারের অবস্থানে স্পষ্ট যে, আগামী বছরের বিধানসভা ভোটেও বড় ভূমিকা নেবে প্রতীকের নেতৃত্বাধীন আইপ্যাক। তাই নাম না-করলেও আইপ্যাক নিয়ে দলের নেতাদের আগাম সতর্কবার্তা শুনিয়ে রাখলেন মমতা। পাশাপাশি বলে রাখলেন, ‘‘কাজটা সবাইকে মিলে একসাথে করতে হবে।’’

ঘটনাচক্রে, সদ্যসমাপ্ত দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে আইপ্যাক আম আদমি পার্টির (আপ) হয়ে কাজ করেছিল। কিন্তু তাদের ফল হয়েছে শোচনীয়। আতিশী মার্লেনা ছাড়া দলের সব বড় নেতাই হেরেছেন। ৬২ আসন থেকে আপের আসনসংখ্যা নেমে এসেছে ২২-এ।

CM Mamata Banerjee IPAC Netaji Indoor Stadium Party Meeting Pratik Jain

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}