Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

বিষ্ণুপুর হাসপাতালে হল না কমিটি, শো-কজ়

সুশান্ত জানাচ্ছেন, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বুলাকে (২৬) বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থজিৎ ঘোষের বাইরের ‘চেম্বার’-এ দেখানো হচ্ছিল।

গ্রামে সাংসদ। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে সাংসদ। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৫
Share: Save:

প্রসূতি বুলা বারিক এবং তাঁর সদ্যোজাত সন্তানের মৃত্যুর পরে কেটেছে দু’দিন। বুধবার মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল জানান, চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগের তদন্ত কমিটি না গড়ায় বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার সুব্রত রায়কে শো-কজ় করা হচ্ছে। তবে সুব্রতবাবুর দাবি, তাঁরা তদন্তের জন্য অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চার-পাঁচ জন বিভাগীয় চিকিৎসক থাকছেন কমিটিতে। ছ’-সাত জনও থাকতে পারেন। কারা থাকছেন, সেটা এখনই বলতে পারছি না।’’ স্ত্রী এবং সন্তানকে হারিয়ে সোমবার সুপারের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন পাত্রসায়রের বলরামপুরের সুশান্ত বারিক। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘আমি জানতাম, কোনও তদন্তই হবে না। তাই তখন বলেছিলাম, দু’জন ডাক্তারকে সামনে নিয়ে আসতে। কেন ওঁরা এমন করলেন, সেটাই শুধু জানতে চাইতাম।’’

সুশান্ত জানাচ্ছেন, তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বুলাকে (২৬) বিষ্ণুপুর হাসপাতালের চিকিৎসক পার্থজিৎ ঘোষের বাইরের ‘চেম্বার’-এ দেখানো হচ্ছিল। তাঁর পরামর্শ মতো প্রসবের জন্য রবিবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুলা ভর্তি হন ডাক্তার সুমনকল্যাণ পোড়ের অধীনে। সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বধূটির। বুলার ননদ শ্যামলী দাসের অভিযোগ, ‘‘বারবার বললেও কোনও ডাক্তার আসেননি।’’ সুমনকল্যাণবাবুর দাবি, তিনি সোমবার বেলা ১০টা নাগাদ বুলাদেবীকে দেখেছেন। তখন যা করার দরকার ছিল, তা করাও হয়েছে। তবে পরিবারের অভিযোগ, বুলাদেবীকে দেখতে সোমবার বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ পৌঁছন ডাক্তার সুশান্ত রায়। তাঁর আগে কেউ আসেননি। কিছু পরে সদ্যোজাত ও বুলাদেবীর মৃত্যু হয়। মৃতার পরিজন বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) জানান, সুপারের ফোন পেয়ে ওই দিন হাসপাতালে যান মহকুমা প্রশাসনের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সোমনাথ পাল। তদন্ত কমিটি গড়ার আশ্বাসে বেশ কয়েক ঘণ্টা পরে বিক্ষোভ থামে। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘আটচল্লিশ ঘণ্টা পরেও কেন সুপার তদন্ত কমিটি গড়তে পারলেন না, জানি না। তাঁকে শো-কজ় করতে বাধ্য হচ্ছি।’’

বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক দাবি করেছেন, বুধবার সকাল থেকে ফোনে না পেয়ে তিনি সুপারের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু কমিটিতে কারা থাকবেন, তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। সুপার এ দিন বলেন, ‘‘তদন্ত কমিটিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আমিও থাকব। তবে প্রশাসনের প্রতিনিধি কেউ থাকছেন না। কারণ, বিষয়টি অভ্যন্তরীণ।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ‘পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্ট’ নামে একটি সংগঠনের সভাপতি চিকিৎসক কুণাল সাহার দাবি, এই পরিস্থিতিতে মৃতার পরিবার ক্রেতাসুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। প্রয়োজনে ফৌজদারি আদালতেও যেতে পারেন।

তবে সোমবারের ঘটনার পরে ডাক্তারদের ওয়ার্ডে ‘বেশি করে’ দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন অন্য প্রসূতিরা। বিষ্ণুপুরের কৈলাসতলার সারদা মণ্ডলের এ দিন ছুটি হয়েছে। সদ্যোজাত সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন তিনি। বলেন, ‘‘কয়েক দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। আগে কোনও দিন এক বার ডাক্তার আসতেন, কোনও দিন আসতেনই না। সোমবারের পরে দিনে দু’-তিন বার করে এসেছেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Death Bishnupur Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy