প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি স্তরে শুধু বড়, কর্পোরেট হাসপাতালই কেন করোনার টিকা দেওয়ার সুযোগ পাবে, এই প্রশ্ন তুলে ছোট ও মাঝারি মাপের বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোম দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিল। স্বাস্থ্য ভবন তথা রাজ্য সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কয়েক দফা আলোচনার পরে ঠিক হয়েছে, ওই সব নার্সিংহোম-হাসপাতালও টিকা দিতে পারবে।
ছোট ও মাঝারি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমের কর্তাদের অভিযোগ ছিল, বেসরকারি ক্ষেত্রে নামমাত্র কিছু নামী কর্পোরেট হাসপাতালের হাতে টিকা কুক্ষিগত রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। সেই ক্ষোভ নিরসনেই নতুন ব্যবস্থা করছে রাজ্য।
স্বাস্থ্য শিবির সূত্রের খবর, ‘কোভিড ভ্যাকসিন সেন্টার’ আইডি বা কোভিসি আইডি রয়েছে, এমন বড়-ছোট সব ধরনের হাসপাতালই এ বার থেকে প্রতি মাসে কোন ধরনের কত টিকা তাদের দরকার, সেই তালিকা রাজ্যের কাছে জমা দেবে। সব তালিকা কেন্দ্রের কাছে যাবে এবং কেন্দ্র তা সংশ্লিষ্ট উৎপাদক সংস্থার (সিরাম, ভারত বায়োটেক বা স্পুটনিক ভি-র উৎপাদক) কাছে পাঠাবে। সংস্থাগুলি সেই পরিমাণ টিকা বিমানে পাঠাবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কাছে। তার পরে রাজ্য সরকারই সেগুলি ওই সব হাসপাতালের হাতে পৌঁছে দেবে।
রাজ্যের করোনা টিকাকরণের নোডাল অফিসার অসীম দাস মালাকার জানান, ১০ জুন থেকে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। এই নিয়মে টিকা সরবরাহ শুরু হবে ২১ জুনের পরে। ‘‘৮১৭টি বেসরকারি হাসপাতাল জুলাই ও অগস্টে তাদের কত ভ্যাকসিন দরকার, ইতিমধ্যে তা আমাদের জানিয়েছে। আমরা শনিবার সেই তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার পরেও কিছু হাসপাতাল টিকা চেয়েছে। সেই তালিকা সোমবার (আজ) দিল্লিতে পাঠানো হবে। তবে হাসপাতালগুলি কী ভাবে টাকা দেবে, তা এখনও আমাদের স্পষ্ট করে জানানো হয়নি,’’ বলেন অসীমবাবু।
‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার, কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’র স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান অলোক রায় জানান, সিরাম বা ভারত বায়োটেকের খুচরো হারে টিকা সরবরাহের অভিজ্ঞতা বা পরিকাঠামো ছিল না। নতুন নিয়মে একসঙ্গে ৮০০ বা ১০০০ হাসপাতালের টিকা আলাদা আলাদা বাক্সে বিমানে পাঠানো হবে। তার টাকা হাসপাতালগুলি আলাদা ভাবে সংশ্লিষ্ট উৎপাদক সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দেবে।
সিরামের পূর্বাঞ্চলীয় ডিভিশনাল বিজনেস ম্যানেজার চন্দন চক্রবর্তী জানান, এত দিন কোনও হাসপাতাল ন্যূনতম ৩০০ ভায়াল অর্থাৎ ৩০০০ ডোজ় (দাম প্রায় ১৮ লক্ষ টাকা) টিকা না-নিলে তাদের তা সরবরাহ করা যাচ্ছিল না। নতুন নিয়মে কেউ ৫০ ভায়াল চাইলেও পাবে। ‘‘এই প্রক্রিয়ায় সরকারের নজরদারি থাকায় টিকা নিয়ে কালোবাজারি বা বেশি দামে টিকা বিক্রির আশঙ্কা থাকবে না,’’ আশ্বাস চন্দনবাবুর। সল্টলেকের ‘ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিক অ্যান্ড হসপিটাল’-এর তরফে কোভিড নোডাল অফিসার শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, জুনের প্রথমে সিরাম বলেছিল, ন্যূনতম ৩০ হাজার ডোজ় অর্থাৎ এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকার ভ্যাকসিন কিনতে হবে। সেই টাকা আগাম পাঠালে টিকা সরবরাহ হবে দেড় মাস পরে!
কলকাতা ও জেলার মাঝারি বা ছোট মাপের প্রায় ১৬০০ নার্সিংহোম-হাসপাতালের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর প্রধান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, ‘‘এপ্রিল থেকে ১০ জুন পর্যন্ত হাতে গোনা কর্পোরেট হাসপাতালকে টিকার একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ করে দিয়ে সরকার এখন আঘাতে মলম লাগাতে চাইছে। কত মানুষ এই সময়ে টিকা নিতে চেয়েও পাননি!’’ ৪ জুন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, মে মাসে সব রাজ্য মিলিয়ে নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালগুলি ১ কোটি ২৯ লক্ষ ডোজ় ভ্যাকসিন কিনেছে। কিন্তু দিতে পেরেছে মাত্র ২২ লক্ষ ডোজ়। আলহাজউদ্দিনের অভিযোগ, কিছু কর্পোরেট হাসপাতালের হাতে বেসরকারি স্তরে টিকাকরণ কেন্দ্রীভূত করে রাখাতেই এই পরিণতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy