রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, সকলে যাতে ভাল ভাবে ভোট দিতে পারেন, সেটাই কমিশনের উদ্দেশ্য। — ফাইল চিত্র।
মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু হয়েছে। শনিবার, ভোটের দিনেও রাজ্যের ছ’জেলায় হিংসার জেরে প্রাণহানির অভিযোগ উঠেছে। যদিও সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, ভোটের দিন রাজ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অশান্তির দায়িত্ব তিনি ঠেলেছেন রাজ্য পুলিশের উপর। স্পষ্টই জানিয়েছেন, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা রাজ্য পুলিশের বিষয়। নির্বাচন কমিশনের কাজ ‘ব্যবস্থাপনা’। সেই কাজ তারা করে গিয়েছে। অভিযোগ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন এসপি এবং জেলাশাসককে। নিজের তাগিদে পুলিশ তদন্ত করবে। গ্রেফতার করবে।
শনিবার রাজ্যের ছয় জেলায় হিংসার জেরে প্রাণহানি হয়েছে। শুধু মুর্শিদাবাদেই শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। যদিও নির্বাচন কমিশনার রাজীব জানিয়েছেন, শনিবার রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। আর এই নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দায়িত্ব ঠেলেছেন পুলিশের উপর। তিনি বলেন, ‘‘এটা তো অপরাধ। অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করবে, তদন্ত করবে। আশা করি, পুলিশ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করবে।’’ তার পরেই নির্বাচন কমিশনার জানিয়ে দেন, যাঁরা জেলাস্তরে রয়েছেন, সন্ত্রাস আটকানোর দায়িত্ব তাঁদের। নির্বাচন কমিশনের কাজ কী, তা-ও তিনি শনিবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাজ ব্যবস্থাপনা। কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না, কে কাকে গুলি করে মেরে দেবে। কিন্তু ব্যবস্থার দিক থেকে বলতে পারি, আমরা সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে ভোটারেরা ভোট দিতে পারেন।’’ রাজীব জানিয়েছেন, অভিযোগ এলেই তিনি সংশ্লিষ্ট জেলার ডিএম, এসপিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা কী ব্যবস্থা নিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে কমিশনকে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের হাতে রয়েছে ব্যবস্থাপনা। আমাদের কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা, সাত দিন কাজ করছে।’’
সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন পোলিং অফিসার থেকে সাধারণ ভোটার। অনেকেই নিজেদের প্রাণহানির আশঙ্কা করেছেন। এই প্রসঙ্গে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব জানিয়েছেন, ফিল্ড থেকে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ১২০০ থেকে ১৩০০টি অভিযোগ এসেছে। তার মধ্যে ৬০০ অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘কোথাও ভোটদান আটকে গিয়েছে। কোথাও দুষ্কৃতীরা ব্যালট বাক্স নিয়ে পালিয়ে গিয়েছে। এই ধরনের অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে পেরেছি।’’ তার পরেই তিনি বলেছেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা রাজ্য পুলিশের বিষয়। আমাদের কাছে খবর এলে পুলিশকে বলি সঙ্গে সঙ্গে। পুলিশ নিজের তাগিদে এফআইআর করবে, দরকারে গ্রেফতার করবে, তদন্ত করবে।’’
যদিও ভোটে অশান্তির কথা পুরোপুরি মানতে চাননি রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট না এলে ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে, না কি অশান্তিতে হচ্ছে, দুটোই বলা সম্ভব না। সব কিছু শান্তিপূর্ণ হয়েছে এটাও বলা যাবে না, অশান্তি হয়েছে তা-ও বলা যাবে না।’’ যত ক্ষণ ভোট না মিটছে, তিনি কিছু বলতে পারছেন না বলেই জানিয়েছেন। তবে তিন-চারটে জেলায় বেশি অশান্তির কথা মেনে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘তিন-চারটে জেলায় বেশি অশান্তি হয়েছে। দুই ২৪ পরগনা, কোচবিহারে শুধু দিনহাটা, মুর্শিদাবাদে কিছু অশান্তি হয়েছে। আমি এ সব দাবি করছি না। যা অভিযোগ এসেছে, ডিএম, এসপিদের বলা হচ্ছে। রাজ্য পুলিশও যাচ্ছে। যাতে সকলে ভাল করে ভোট দিতে পারেন, সেটাই উদ্দেশ্য।’’
হাই কোর্টের নির্দেশ থাকলেও রাজ্যের অনেক ভোটকেন্দ্রেই পৌঁছতে পারেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। এ ক্ষেত্রে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ যদিও মানতে চাননি রাজীব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy