গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
পঞ্চায়েত ভোটের জন্য কেন্দ্রের কাছে ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চাইল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। বুধবার এ ব্যাপারে কলকাতা হাই কোর্ট একটি নির্দেশ দিয়েছিল কমিশনকে। সেই নির্দেশ অনুসারে ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যে পরিমাণ কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, অন্তত সেই সংখ্যক তার বেশি আধাসেনা জওয়ান এ বারের ভোটেও মোতায়েন করতে বলেছিল আদালত। একই সঙ্গে কমিশনকে বলা হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করতে হবে কমিশনকে। বুধবার বিকেলের সেই রায়ের পর বৃহস্পতিবার বিকেলের আগেই বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন কমিশন। কিন্তু এর পরও কমিশন কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করেননি বলে দাবি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। কমিশনের বাহিনী চাওয়ার খবর দেওয়ার পরই তিনি পাল্টা জানিয়েছেন, এখনও অনেক গলদ রয়ে গিয়েছে। সেই গলদ কোথায়, তা দেখিয়ে দিতে তাঁরা আবার আদালতে যাবেন।
২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে ৮২ হাজার আধাসেনা জওয়ান মোতায়েন করা হয়েছিল বলে হাই কোর্টে জানিয়েছিল বিজেপি। বিজেপির তরফে মামলা করেছিলেন শুভেন্দু। পরে তাঁর সঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আরও বেশ কিছু জনস্বার্থ মামলা জুড়েছিল। বুধবার যার শুনানি হয় হাই কোর্টের প্রধান বিচাররপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। বিচারপতি বলেন, ‘‘বলতে বাধ্য হচ্ছি এত কিছুর পরে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। আপনারা দয়া করে হাই কোর্টের নির্দেশ পালন করুন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে ৮২ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্যে। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার জন্যও অন্তত ওই সংখ্যক বা তার বেশি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’’
এর আগে গত ১৫ জুন কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, গোটা রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতেই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ওই নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চাইতেও হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, হাই কোর্টের ওই নির্দেশ সত্ত্বেও বাহিনী আনার জন্য অনুরোধ করে কমিশনের তরফে যোগাযোগ করা হয়নি কেন্দ্রকে। পরে মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন জানায় গোটা রাজ্যের ২২ টি জেলায় ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য কেন্দ্রকে অনুরোধ করেছে তারা। কিন্তু বিরোধীরা বলে, ২২ জেলায় স্রেফ ২২ কোম্পানি (জেলাপিছু এক কোম্পানি করে) কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকা আর না থাকা সমান। বিরোধীদের সেই বক্তব্যের সারবত্তা আছে বলেই মত দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি তাঁর পর্যবেক্ষণে জানান, ‘‘২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো নিরাপত্তা এই নির্বাচনে দেওয়া প্রয়োজন। আমরা বিস্মিত হয়েছি জেনে যে, সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল স্বয়ং কমিশন। আমরা আশা করব, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কমিশন এ বারও স্বাধীন এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।’’
বুধবারের সেই নির্দেশের পরই কমিশন কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে আগের ২২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি আরও ৮০০ কোম্পানি বাহিনী চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু মামলাকারী তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুর যুক্তি, ২০১৩ সালের থেকে এ বছর বুথ সংখ্যা অনেক বেশি, ভোটার সংখ্যাও বেশি। আদালত বলেছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারিতে পঞ্চায়েত ভোটের সমস্ত বুথ, সমস্ত সেক্টর, থানা, কুইক রেসপন্স টিম, সমস্ত স্পর্শকাতর এলাকা রাখতে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে স্রেফ ৮২২ কোম্পানি বাহিনীতে তা সম্ভব নয়। কারণ শুভেন্দুর মতে, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের ভোটগ্রহণের পরিবেশ আরও খারাপ হয়েছে। যদিও ভোট নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতিই জানিয়েছেন, এ বারের পঞ্চায়েত ভোট অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ। মমতা গত বেশ কয়েক বছরের পঞ্চায়েত ভোটের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বলেছেন, এর আগে এত শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি রাজ্যে। গত তিন বারের ভোটের তুলনায় এ বারের ভোট ঘিরে অশান্তি এবং তার জেরে মৃত্যুর সংখ্যা নগণ্য বলেও মন্তব্য করেছিলেন মমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy