Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Election Commission

কমিশনের নিখুঁত হোমওয়ার্ক দেখে তটস্থ প্রশাসন

কমিশন নিজস্ব নিখুঁত তথ্য পেশ করে তাদের সমান্তরাল প্রশাসনের যে-নমুনা তুলে ধরেছে, তা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোড়া।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোড়া। ছবি: পিটিআই।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৫৪
Share: Save:

দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী রাজ্য ও জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকেই আইনশৃঙ্খলা-সহ যাবতীয় বিষয়ে রিপোর্ট নেয় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। এ বারের বঙ্গ সফরেও তা নিয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। কিন্তু তার পাশাপাশি কমিশন নিজস্ব নিখুঁত তথ্য পেশ করে তাদের সমান্তরাল প্রশাসনের যে-নমুনা তুলে ধরেছে, তা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা। নির্বাচনের মাস দুয়েক আগে কমিশনের ‘হোমওয়ার্কে’ কার্যত অস্বস্তিতে পড়েছেন তাঁরা।

এ বারের সফরে কমিশন নির্বাচনী বিধি এব‌ং ভোট পরিচালনা নিয়ে একের পর এক নির্দেশ তো দিয়েছেই। সেই সঙ্গে পদে পদে বুঝিয়ে দিয়েছে, রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসনের অতীত ও সাম্প্রতিক নানা খুঁটিনাটি তথ্য তাদের ঠোঁটের ডগায়। ২১ জানুয়ারি, বৃহস্পতিবার কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে জেলাশাসক ও পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোড়ার নেতৃত্বাধীন ফুল বেঞ্চ। সেই বৈঠকে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের সামনে নানা গোপন তথ্য তুলে ধরে অরোড়া জানান, সমান্তরাল প্রশাসনের মাধ্যমে সব খবরই রাখছে কমিশন। এবং তাঁর দেওয়া সব খুঁটিনাটি তথ্যই একদম ঠিক বলে জানাচ্ছেন বৈঠকে উপস্থিত জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা। কমিশন সূত্রের খবর, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী পুলিশ ও প্রশাসনের রদবদল নিয়ে নানান প্রশ্ন তুলেছিল ফুল বেঞ্চ। সেই সব প্রশ্নের প্রেক্ষিতে বৈঠকের পরে পরেই দুই পুলিশকর্তা ও আমলাকে বদলি করা হয়েছে।

সে-দিন প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টার বৈঠকে জেলাশাসক ও পুলিশকর্তাদের বিভিন্ন বিষয়ে সতর্ক করে দেন কমিশন-কর্তারা। পক্ষপাতমূলক আচরণ ধরা পড়লে চাকরিতে কালো দাগ পড়তে পারে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা। কমিশনের সমান্তরাল প্রশাসনের সূত্রটি কী বা কোথায়, তা ভেবেই কপালে ভাঁজ পড়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের।

সে-দিনের বৈঠকে ছিলেন, এমন এক পুলিশ সুপার জানান, শুধু পুলিশকর্তা নয়, একেবারে নিচু তলার আইসি-ওসি রদবদলের খুঁটিনাটি তথ্যও রয়েছে কমিশনের কাছে। গত কয়েক বছরে কোনও কোনও জেলায় তিন থেকে চারটি পুলিশ-জেলা গড়া হয়েছে। একই জেলায় এক পুলিশ-জেলা থেকে অফিসার-কর্মী বদলি করা হয়েছে অন্য পুলিশ-জেলায়। ফলে কার্যত সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীরা একই জেলায় থেকে গিয়েছেন। অথচ দেখানো হয়, নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী এক পুলিশ-জেলা থেকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। কিন্তু ওই বিধি অনুযায়ী এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করাটাই নিয়ম। শুধু পুলিশের রদবদল নয়, প্রশাসনিক কর্তাদের রদবদল নিয়েও ঠিক তথ্য রয়েছে কমিশনে।

ওই দিনের বৈঠকের পরে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারেরা কার্যত আড়ষ্ট হয়ে পড়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। কোনও রকম গাফিলতি বা পক্ষপাত ধরা পড়লেই যে বিপদ আছে, সেটা বুঝে গিয়েছেন পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্তারা। রাজ্য সরকারের ঘনিষ্ঠ পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের তালিকাও কমিশনের হাতে রয়েছে বলে সূত্রের খবর। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একটি তালিকা তৈরি করেছে কমিশন। গত দু’বছরের কিছু ঘটনা বিশেষ ভাবে যাচাই করছে তারা। সেই সব ঘটনায় সরকার-ঘনিষ্ঠ অফিসারদের ভূমিকা কী ছিল, কমিশনের নজর সে-দিকেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Election Commission West Bengal Assembly Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy