অনুব্রতের সঙ্গে থাকা তিন জনের মধ্যে কচি কলাপাতা রঙের লম্বা ঝুলের উঁচু কলারের পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিকে ঘিরেই দানা বেঁধেছে রহস্য। নিজস্ব ছবি।
কলকাতায় যাওয়ার পথে বর্ধমানে শক্তিগড়ের রেস্তরাঁয় প্রাতরাশ সেরেছেন অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট)। কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেও সেই রেস্তরাঁয় দুই ব্যক্তির পৌঁছে যাওয়া এবং প্রায় আধঘণ্টা ধরে নিভৃতে তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতির সঙ্গে তাঁদের কথা বলা নিয়ে ইতিমধ্যেই কৌতূহল তৈরি হয়েছে। ওই তিন জনের মধ্যে কচি কলাপাতা রঙের লম্বা ঝুলের উঁচু কলারের পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিকে ঘিরেই দানা বেঁধেছে রহস্য। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, পাঞ্জাবি পরা ওই ব্যক্তির নাম কৃপাময় ঘোষ। তিনিই শক্তিগড়ের রেস্তরাঁয় অনুব্রতদের জলখাবারের বিল মিটিয়েছেন।
আদালতের নির্দেশ মতো মঙ্গলবার, দোলের দিন সকালে অনুব্রতকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয় আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ। পথে শক্তিগড়ে এক বার থামে ওই কনভয়। সেখানে একটি দোকানে প্রাতরাশ সারেন অনুব্রত। রাস্তার ধারের ওই রেস্তরাঁয় তিনি ঢোকার কিছু ক্ষণ পরেই দুই ব্যক্তিকে তাঁর টেবিলে গিয়ে বসতে দেখা যায়। সবুজ পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি ছাড়া আর এক জন যিনি ছিলেন, তাঁর নাম তুফান মিদ্দা। তিনি অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের গাড়িচালক। তাঁর নাম ওই তিন জনকে অনুব্রতের সঙ্গে জলখাবারে কচুরি, ছোলার ডাল, ল্যাংচা ও রাজভোগ খেতে দেখা গিয়েছে। সূত্রের দাবি, খেতে খেতে তাঁদের সঙ্গে অন্তত আধঘণ্টা ধরে কথা বলেছেন তিনি। অনুব্রতের সঙ্গে তৃতীয় এক জন ছিলেন। তাঁর পরনে ছিল কালো ফুল স্লিভ শার্ট। দাবি, তিনি আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি। তাঁর নাম কৃশানু গঙ্গোপাধ্যায়।
যে রেস্তরাঁয় বসে খাওয়াদাওয়া করেছেন অনুব্রত, সেখানকার কর্মীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ওই তৃণমূল নেতা বা সঙ্গীরাই নন, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীরাও খাবার খেয়েছেন। সব মিলিয়ে জলখাবারের বিল হয় ৯৯৫ টাকা। সেই টাকা মিটিয়েছেন সবুজ পাঞ্জাবি পরা ওই ব্যক্তি। এই বিষয়টি নিয়েই অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তাঁদের বক্তব্য, অনুব্রতকে আসানসোল সংশোধনাগার থেকে কলকাতায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব যাদের উপর দেওয়া হয়েছে, সেই জেল কর্তৃপক্ষ জলখাবারের বিল মেটালেন না কেন? তাদের নজর এড়িয়ে কী ভাবে এক জন বাইরের লোক সব খরচ মেটালেন? তা কি ‘প্রোটোকলে’ আটকাল না? শুধু তা-ই নয়, ওই তিন ব্যক্তি কী ভাবে অনুব্রতের কাছে পৌঁছে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও সেই সময় সেখানে থাকা বর্ধমানের এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের অজান্তেই ওই সবুজ পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি পুরো বিল মিটিয়ে দিয়েছেন!’’
ঘটনাচক্রে, রবিবার নীল টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তির আসানসোল জেলে যাওয়া নিয়ে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছিল। জেল সূত্রে খবর মেলে, ওই ব্যক্তির নাম কৃপাময় ঘোষ। তিনি অনুব্রতের সঙ্গে জেলে দেখা করতে এসেছিলেন। যদিও সংবাদমাধ্যমের সামনে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে দেখা যায়নি ওই ব্যক্তিকে। কেন জেলের ভিতরে তিনি ঢুকেছিলেন, তা জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পাঞ্জাবি দিলাম।’’ শুধু তা-ই নয়, সূত্রেরই দাবি, জেলবন্দি অনুব্রতকে যত বারই আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে হাজির করানো হয়েছে, তত বার আদালত চত্বরে পৌঁছে যেতে দেখা গিয়েছে ওই ব্যক্তিকে। বেশ কয়েক বার কেষ্টর সঙ্গে কথাও বলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
রবিবারের সেই নীল টি-শার্ট পরা ব্যক্তি আর এই সবুজ পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তি এক কি না, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি সূত্রেরও দাবি, ওই দু’জন একই ব্যক্তি। মঙ্গলবার শক্তিগড়ের রেস্তরাঁয় অনুব্রতের সঙ্গে দেখা করার আগে তিনি চুল-দাড়ি কেটে এসেছেন। যদিও এ ব্যাপারে পুলিশ বা আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। যার জেরে আরও ঘনীভূত হচ্ছে জল্পনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy