Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
mukul roy

জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি, মুকুলের গলায় বৈরাগ্য

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল ভাঙতে তৎপর ছিলেন মুকুলবাবু। লোকসভা নির্বাচনের আগেও তাঁর কৌশলে এক দফা ভাঙন হয় তৃণমূলে।

মুকুল রায়।

মুকুল রায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:০৮
Share: Save:

তৃণমূল থেকে তিনি বিজেপিতে গিয়েছেন অন্তত তিন বছর আগে। আর দলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি হয়েছেন মাত্র কয়েক মাস। এরই মধ্যে মুকুল রায়ের গলায় বৈরাগ্যের সুর। তাঁর কথা, ‘‘এখন জায়গা ছেড়ে দেওয়ার পালা শুরু হয়েছে। আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। জায়গা ছাড়াটাও একটা আর্ট। এটাও শিখতে হয়। কখন ছাড়তে হবে, সেটা শিখতে হয়।’’
সোমবার কালনায় দলীয় সভায় বক্তৃতা করেন মুকুলবাবু। অপর বক্তা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ওই সভাতেই মুকুলবাবুর বক্তব্যের সুর পর্যবেক্ষকদের নজরে পড়েছে। ভোট ভাগাভাগির অঙ্কেও মুকুলবাবুর তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘শুধু বলছি, পরীক্ষাটা একশোয় দেব। যদি তিরিশ বাদই দিয়ে দাও, তা হলে সত্তরে একান্ন পেতে হবে।’’ উল্লেখ্য, রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোট তিরিশ শতাংশের মতো আর সেখানে তৃণমূলেরই আধিপত্য বেশি থাকা সম্ভব বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। মুকুলবাবু বলেন, ‘‘আমি কট্টর হিন্দু। কিন্তু সবাইকে সম্মান করি।’’

পূর্ব বর্ধমানের একাধিক বিজেপি নেতার নাম করে মুকুলবাবু বলেন, ‘‘আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। যাতে এঁরা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেন।’’ এই সূত্রে তাঁর ছেলে, দু’বারের তৃণমূল বিধায়ক শুভ্রাংশুর কথাও তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘আমার একটি পুত্র আছে। সে দু’বারের বিধায়ক। আমি যদি এখন বলি, আমিই রাজনীতি করব, তা হলে ওদের কী হবে?’’

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল ভাঙতে তৎপর ছিলেন মুকুলবাবু। লোকসভা নির্বাচনের আগেও তাঁর কৌশলে এক দফা ভাঙন হয় তৃণমূলে। এ বার বিধানসভা ভোটের আগে শুভেন্দু, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মন্ত্রী থেকে সাংসদ, বিধায়ক-সহ বিভিন্ন স্তরে তৃণমূল নেতারা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি আলোড়ন হয় শুভেন্দুর ক্ষেত্রে। দু’দিন আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ বিমানে দিল্লি গিয়ে রাজীবের যোগদান এই পর্বে নতুন মাত্রা আনে।

তবে তৃণমূল থেকে বড় নেতা-মন্ত্রীদের বিজেপির শিবিরে চলে আসার পরিপ্রেক্ষিতে মুকুলবাবু কি কিছুটা ‘ঢাকা’ পড়ে যাচ্ছেন? এই প্রশ্ন ঘুরছে বিজেপির অন্দরমহলেই। সূত্রের খবর, ভোটের বাজারে তৃণমূল ভাঙিয়ে দল ভারী করার যে প্রবণতা বিজেপিতে দেখা যাচ্ছে এবং তৃণমূল থেকে আসা লোকজনেরা যে ভাবে ‘গুরুত্ব’ পেতে শুরু করেছেন, তা নিয়ে পদ্ম-শিবিরে ক্ষোভ চাপা নেই। একই ভাবে আদি পর্বে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়ে মুকুলবাবু সেখানে যে স্থান পেয়েছিলেন, তার তুলনায় আড়ালে চলে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা। কারণ, বিজেপিতে শুভেন্দু-রাজীবদের মতো নতুন মুখের ‘উত্থান’ দেখা যাচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মুকুলবাবুর এ দিনের বক্তব্যে হয়তো তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

পাশাপাশি, আরও একটি বিষয় বিজেপি শিবিরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে। তা হল, শুভেন্দু এবং রাজীবের মধ্যে কে আগামী দিনে বেশি ‘গুরুত্ব’ পেতে পারেন? সাংগঠনিক দক্ষতা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় শুভেন্দু তুলনায় এগিয়ে বলেই ধরে নেওয়া হয়। অন্য দিকে, রাজীবের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিতে এখনও কালি লাগেনি। শাহও গত কয়েক দিন বার বার রাজীবের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন। এমনকি, তিনি যে ডুমুরজলার সভায় ভার্চুয়াল বক্তৃতা করবেন, সেই তথ্য প্রথম শোনা যায় রাজীবের মুখেই।

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, তবে কি শুভেন্দু এবং রাজীব সম্পর্কেও আলাদা আলাদা ‘মূল্যায়ন’ করতে শুরু করেছেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় রবিবার বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, রাজ্যে যে কোনও ভাবে সরকার দখল করা। তবে এ বার আমরা যোগদান আটকাব।’’ তাঁর এই বক্তব্যে স্ববিরোধিতা রয়েছে বলে বিজেপির অনেকের ধারণা। কৈলাসের এই বক্তব্যের দু’রকম ব্যাখ্যা ঘুরছে বিজেপি শিবিরে। এক, যোগদানের তালিকা হয়তো ছোট হয়ে আসছে। দুই, অন্য দল থেকে আসাদের নিয়ে বিজেপিতে ক্ষোভ বাড়ছে। সেটা দলের ভাবমূর্তির পক্ষে হয়তো ভাল হচ্ছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

BJP mukul roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy