বহরমপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্য। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরেও তাঁর কংগ্রেস-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে জল্পনা ছিল বহরমপুরে। সোমবার বহরমপুর পুরসভার নয়া প্রশাসকের নাম ঘোষণার পর বহরমপুর শহরের অলিগলিতে একটাই জল্পনা— এবার কী হবে প্রাক্তন চেয়ারম্যান নীলরতন আঢ্যের। এরই মধ্যে মঙ্গলবার বহরমপুর পুরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান জয়ন্ত প্রামাণিক ওরফে ডনু। জেলা তৃণমূলের অন্দরে যিনি নীলরতন-বিরোধী হিসেবেই পরিচিত।
নীলরতন বহরমপুর পুরসভায় ২০০২ সাল থেকে টানা চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। ২০১৮ তে পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত ওই পদে বহাল ছিলেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নীলরতন প্রায় ৪ দশক ধরে বহরমপুর পুরসভার কাউন্সিলর। ২০১৮ ডিসেম্বর মাসের পর থেকে এসডিও (সদর) পুর প্রশাসকের পদে বসেন। তবে নীলরতন পদ থেকে সরে যেতেই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। পুরসভার ‘ফান্ড ডাইভারশন’-সহ স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। জেলা তৃণমূলের একাংশই তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিল।
২০০২ সালের জুন মাসে আকবর কবীরের হাত থেকে যখন নীলরতন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তখন স্থায়ী কর্মীদের প্রাপ্য বাবদ বহরমপুর পুরসভার ‘দায়’ ছিল মাত্র ৮০ লাখ টাকা। তারপর সময় যত গড়িয়েছে, আর্থিক দায়ভার তত বেড়েছে।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, চেয়ারম্যান পদ যাবার পর নীলরাতন নিজেকে দলের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে কার্যত সরিয়ে নেন। লোকসভা নির্বাচনে সে ভাবে তাঁকে দলীয় প্রার্থীর প্রচারে দেখা যায়নি। জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান এবং বহরমপুর টাউন তৃণমূল সভাপতি নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি হলে, সৌমিক হোসেন এবং অরিৎ মজুমদারকে ধরে তৃণমূলের ‘মূল স্রোতে’ ফেরার চেষ্টা করেছিলেন নীলরতন। কিন্তু সফল না হয়ে তিনি পুরানো দল কংগ্রেসের কিছু নেতার সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন বলে অভিযোগ।
কয়েকমাস আগে নীলরতন প্রকাশ্যে তৃণমূলের দুর্নীতি প্রসঙ্গে সরব হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘বহরমপুরে তৃণমূল কামিয়ে খাবার দলে পরিণত হয়েছে। শহরে একাধিক বেআইনি নির্মাণ এবং অন্যান্য কিছু বেআইনি কাজ নিয়ে আমি আবু তাহেরকে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আমার মত একজন বর্ষীয়ান নেতার অভিযোগেও তাহের কোনও গুরুত্ব দেয়নি। তার ফলে বহরমপুরে তৃণমূল পার্টি অফিস একটি কামিয়ে নেওয়ার আখড়ায় পরিণত হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেছিলেন, ‘‘গত এক বছরে তৃণমূলে থেকে আমি যে ভাবে অসম্মানিত হয়েছি, আমার সারা রাজনৈতিক জীবনে এত অসম্মান আমাকে কোনও দিন হতে হয়নি।’’
সে সময়ই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, শীগ্রই রাজনীতির নতুন ইনিংস শুরু করবেন। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার সময় চলে এলেও এখনও নীলরতন তার সিদ্ধান্ত জানাননি। মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল ইতিমধ্যেই তাঁকে সমস্ত পদ থেকে ছেঁটে ফেলেছে। জেলার কোনও কমিটিতে স্থান পাননি এই বর্ষীয়ান নেতা।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বাড়িতে বসে রাজনৈতিক জল মাপা কাল হল নীলরতনের। পার্টি ওঁকে অনেক সুযোগ দিয়েছিল। কিন্তু উনি তলে তলে অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন।’’ তবে সূত্রের খবর চেয়ারম্যানের পদ যাওয়ার পর পুর প্রশাসক হওয়ার জন্য তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছিলেন নীলরতন। কিন্তু সে সময় তাঁর আবেদন উপেক্ষা করে মহকুমা শাসককেই প্রশাসকের পদ দেওয়া হয়েছিল। ঘনিষ্ট মহলে তিনি আশা প্রকাশ করেছিলেন সঠিক সময় পুরভোট হলে তিনি জিতে আবার চেয়ারম্যান হতেন।
নীলরতন অবশ্য এখনও তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বলতে নারাজ। মঙ্গলবার তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখনই আমি কিছু বলছি না। যখন কিছু জানানোর হবে, সমস্ত সংবাদমাধ্যমকে জানাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy