শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সকন্যা শোভন চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
কলকাতার পরিবেশ নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় ততটা ‘সক্রিয়’ হতে পারেননি বলে মেনে নিচ্ছেন নবাগত পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়। তবে এ বার মন্ত্রী হিসেবে পরিবেশ সুরক্ষার চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তিনি। শুক্রবার মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মেয়র শোভনবাবু। বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যাপাধ্যায় ঘোষণা করেন পরিবেশ, আবাসন এবং দমকল— এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতার মেয়রকে। বৃহস্পতিবারই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছিলেন শহরের মেয়রকে মন্ত্রী করা হবে। এবং মেয়রের দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এমনই দফতরের দায়িত্ব পাবেন তিনি। দফতর বণ্টনের পরে মমতা নিজেও উল্লেখ করেন, এ সব দফতরই পুরসভার কাজের সঙ্গে যুক্ত।
পুরসভার সঙ্গে যুক্ত বলা হলেও বাস্তবে পরিবেশ ও আবাসন দফতরের কাজ কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে মেয়রকে। কলকাতা শহরে পরিবেশ দূষণ এবং পরিবেশের সুরক্ষা নিয়ে বারবার ‘অপদার্থতা’র অভিযোগ ওঠে পুরসভার বিরুদ্ধে। শহরের পরিবেশ অনেকটা অবহেলিত, এমন কথাও বারবার শুনতে হয় তাঁকে।
শহরের ঘিঞ্জি এলাকায় এখনও অহরহ পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এক দিকে যত্রতত্র চামড়া, প্লাস্টিক-সহ নানা কারখানা অন্য দিকে, শহরের নোংরা দূষিত জল গিয়ে পড়ছে গঙ্গায়। কলকাতার মতো শহরে যা ভয়ানক আকার নিচ্ছে। সেই সঙ্গে শহর জুড়ে বেআইনি নির্মাণ এবং নিয়ম না মেনে অলিগলিতে নির্মাণ, এ সবই শহরের পরিবেশ ও সৌন্দর্য বিঘ্নিত করছে। এ সব নানা ‘অবৈধ’ কাজে মদত দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে পুরসভার বিরুদ্ধে। পুকুর বুজিয়ে, সবুজ ধ্বংস করে নির্মাণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে পুরসভার অধিবেশন কক্ষও।
ট্রাম সাজিয়ে অভ্যর্থনা নতুন সরকারকে। শুক্রবার ধর্মতলায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কলকাতা শহরে গভীর নলকূপের সাহায্য মাটির নীচ থেকে জল তোলার বিষয়টিও পরিবেশ সুরক্ষার বিরুদ্ধে। তবুও কলকাতাবাসীর কথা ভেবে মাটির তলা থেকে এক সময়ে ব্যাপক হারে জল তোলায় বিঘ্নিত হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য। এ দিন সে সব প্রসঙ্গ তুলতেই সদ্য দায়িত্ব পাওয়া পরিবেশমন্ত্রী শোভনবাবু বলেন, ‘‘এক সময়ে তা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদনের পরিমাণ তিনগুণ বেড়েছে। তাতে অনেক গভীর নলকূপ তুলে ফেলা হয়েছে এবং আরও হবে।’’
এ সব ব্যাপারে ওঠা অভিযোগ অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল পুরকর্তাদের। কিন্তু এ বার পরিবেশ দফতরের দায়িত্বে থেকে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে মন্ত্রীকে। অর্থাৎ, মেয়র বনাম মন্ত্রীর সংঘাত অনিবার্য হওয়ার প্রবল আশঙ্কা। এক ব্যক্তি দুটো পদেই থেকে কী ভাবে তা সামাল দেবেন? চিন্তায় পুরকর্তারাও। শহর জুড়ে পরিবেশ সুরক্ষিত না হওয়ার দায় নিতে হবে মেয়রকেই। আবার একাধিক আমলার কথায়, এ বার সাপ হয়ে কামড়ে ওঝা হয়ে ঝাড়ার অবস্থা হবে কি মেয়রের? কোন দিক সামলাবেন তিনি?
তবে এ সব নিয়ে এতটুকুও চিন্তিত নন মেয়র। তাঁর সোজাসাপটা বক্তব্য, ‘‘রোম তো এক দিনে হয়নি।’’ কোনও কাজকে জটিল ভেবে পিছিয়ে যেতে রাজি নন তিনি। বললেন, ‘‘বহু দায়িত্ব, বহু ভাবে পেয়েছি। মানুষের সহযোগিতা পেলে সবই করা যায়।’’ যা-ই বলুন, বাস্তবে মেয়র পদে থেকে ওই দুটো কাজের সঙ্গে কতটা আপস করতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে। এ সব বিষয়কে সমস্যা বলেই মনে করছেন না তিনি। তাঁর একমাত্র লক্ষ্য, দরিদ্রদের জন্য বাড়ি তৈরির ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্প সফল করা। বলেন, ‘‘দায়িত্ব দেওয়ার আগে এই নির্দেশই আমাকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy