আলাপচারিতায় পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার ও দেবাশিস বসু। ছবি: অমিত দত্ত।
গত ১৮ মে, আখর বাংলার অধিবেশনে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও পূর্ব পশ্চিমের যৌথ উদ্যোগে ‘দ্য কনক্লেভ’-এ এক অনন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই দিন স্বনামধন্য ব্যতিক্রমী রবীন্দ্রচর্চাকারী, বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকারের রবীন্দ্রনাথের সমস্ত গান ও কবিতার ডিজিটাল সঙ্কলন ও তাঁর বই নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেন জনপ্রিয় উপস্থাপক ও বাচিক শিল্পী দেবাশিস বসু। অনুষ্ঠানের ডিজিটাল পার্টনার ছিল আনন্দবাজার অনলাইন।
আমার শৈশব:
আলোচনার শুরুতেই দেবাশিস বসু পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকারের শৈশবের কথা জানতে চান। পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার গোবরডাঙার বাসিন্দা। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই যে আমি রবীন্দ্রভক্ত ছিলাম এমনটা নয়। রবীন্দ্রনাথের লেখা, কবিতা, গান জানতাম, শুনতাম কিন্তু তেমন একটা চর্চার বিষয় ছিল না। বরং ওই সময় ওখানকার একটি বিজ্ঞান ক্লাবের সদস্য ছিলাম। পরবর্তীকালে জীবনে যখন একটু স্থিতু হয়েছি তখন থেকে রবীন্দ্রচর্চা আরম্ভ করি। বাড়িতেও ছোটবেলায় তেমন রবীন্দ্রচর্চা দেখিনি। আর্থিক কারণ বশত আমার মা-বাবাকে দৈনন্দিন জীবনযাপনের হিসেব-নিকেশ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হত যে, সাংস্কৃতিক কোনও চর্চা সম্ভব ছিল না।’
রবীন্দ্রসঙ্গীত আর্কাইভ:
রবীন্দ্রনাথের গান যখন প্রথম শুনতে শুরু করি তখন ক্যাসেটের যুগ। কোনওদিন কোনও গান শুনতে ইচ্ছে করলে ক্যাসেট খুঁজে গান বার করে তার পরে শুনতে হত। প্রথম যখন কম্পিউটার ব্যবহার করতে আরম্ভ করি, তখন থেকেই এই ক্যাসেট থেকে গানগুলিকে প্রযুক্তির সাহায্যে ডিজিটালি কনভার্ট করে স্টোর করতে থাকি। এর সব থেকে বড় সুবিধা হল যখন যে গান শুনতে ইচ্ছে করত তখন সেটা লিখে দিলেই গান বেরিয়ে আসত। খুঁজতে হত না। ডিজিটাল আর্কাইভের দিকে এই আমার প্রথম পদক্ষেপ। ক্রমে এটিকে আমি সফ্টওয়্যারের রূপ দিতে থাকি, খুব সহজেই যাতে রবীন্দ্রনাথকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় তার জন্যই এই প্রয়াস। ২০০৬ সালে সুচিত্রা মিত্র এবং দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় এটির উদ্বোধন করেন। এরপর আমি পুরোটাই বই আকারে প্রকাশ করার কাজ শুরু করি। ২০০৮ থেকে শুরু করি। ২০১৯-এ বইরূপে প্রকাশ পায়, নাম ‘গীতবিতান তথ্য ভাণ্ডার’।” ২০২৩-এ এই বইয়ের জন্য তিনি আনন্দ পুরস্কার পেয়েছেন।
টাইম ম্যানেজমেন্ট:
চক্ষু বিশেষজ্ঞ হওয়ার সুবাদে ব্যস্ততা সারাদিনের। তার মধ্যেই এমন ব্যতিক্রমী কাজের সময় কেমন করে বার করলেন, প্রশ্ন দেবাশিস বসুর। ডা. সরকার উত্তরে বলেন, “পুরোটাই টাইম ম্যানেজমেন্ট। ব্যস্ততা তো আছেই কিন্তু তার মধ্যে থেকেই সময় বের করে আনি। প্রথম প্রথম রাত ১০টা থেকে ৩টে অবদি কাজ করতাম। যখন যেটা পড়েছি সেটাই ডকুমেন্ট করে রেখেছি কম্পিউটারে। ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট আর ডকুমেন্টেশন’ এই দুইয়ের ওপর আমি নির্ভরশীল।”
গীতবিতান আর্কাইভ ও গীতবিতান তথ্যভাণ্ডার:
গীতবিতান আর্কাইভ একটি সফ্টওয়্যার যার মাধ্যমে গীতবিতান-এর সমস্ত গান ও গানের তথ্য পাবেন আর এই তথ্যগুলির ছাপা সংস্করণ ‘গীতবিতান তথ্যভাণ্ডার’ বইটি। এই সফ্টওয়্যার বা বইয়ের প্রত্যেকটি শব্দ আমার নিজের টাইপ করা। বিদেশে গীতবিতান আর্কাইভ যখন খুবই সমাদৃত হতে থাকে তখন ইংরেজিতে অনুবাদও আমি নিজেই করেছি। গত বইমেলাতে আমার আরেকটি বই বেরিয়েছে যার নাম ‘রবীন্দ্র চর্চার অন্তরালে’। বইটিতে দু’শো পাঁচটি রবীন্দ্রসংগীত বেছে নিয়েছি। গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত গল্প বা তথ্য যেমন পাবেন আবার সঙ্গে পাবেন একটি কিউআর কোড যা কিনা স্ক্যান করলেই নিয়ে যাবে ওই গানের লিঙ্কে। কোথাও সার্চ করতে হবে না।’ শুধু রবীন্দ্র অনুরাগীদের জন্য নয়, নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের জন্য এক এক অনন্য ডিজিটাল লিঙ্ক।
সৌমিত্র মিত্র, নাট্য ব্যক্তিত্ব
প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন ও পূর্ব পশ্চিম নাট্য দলের যৌথ উদ্যোগে এবং আখর বাংলার আয়োজনে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন লেখকদের নিয়ে প্রতি মাসে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। ইউটিউবে এই অনুষ্ঠান দেখানো হয়। অতিমারীর সময় এই অনুষ্ঠান ফেসবুক পেজ থেকে করা হত। গত এক বছরেরও বেশি যাবৎ আমরা অনুষ্ঠান করছি। আজকের অতিথি ডা. পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার। তাঁর গীতবিতান, রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়ে কাজ সম্পর্কে সবাই অবহিত। এই কাজের মধ্যে তাঁর মনন, ধী-শক্তি, নিজস্ব বোধ প্রকাশ পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাজের এক দীর্ঘ সড়ক তিনি তৈরি করেছেন।
বর্ণালি সরকার (পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকারের স্ত্রী)
প্রথম যখন গীতবিতান আর্কাইভ তৈরি করেন পূর্ণেন্দুবিকাশ সরকার, সেই সময় থেকেই তাঁর প্রত্যেকটি কাজের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে আমি জড়িয়ে। ২০০৬-তে প্রথম প্রকাশ এবং ২০১১ -তে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। প্রকাশ করেন সুচিত্রা মিত্র ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়। সুচিত্রাদিকে যখন এটি দিতে যাই আমরা তখন তিনি বলেন ‘ডাক্তারবাবু এই কাজে আমি বাকরুদ্ধ। কিন্তু যেহেতু এটা একটি সফ্টওয়্যার আর আমি কম্পিউটার সম্পর্কে একেবারেই অবগত নই, তাই এই কাজটা যদি বই আকারে পাওয়া যেত আমার মতো আরও অনেকে উপকৃত হত।’ এইটাই ছিল যাকে বলে ‘কি-পয়েন্ট’। এই অনুপ্রেরণা থেকেই পরবর্তী কালে ২০০৮ সাল থেকে বইয়ের কাজ আরম্ভ করেন। এই সময় শঙ্খদা (শঙ্খ ঘোষ) ওঁকে প্রচুর উৎসাহ দেন। ২০১৯-এ একেবারে একক প্রচেষ্টায় বই আকারে প্রকাশ পায়। ‘গীতবিতান তথ্য ভাণ্ডার’ আনন্দ পাবলিশার্স-এর সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। ২০২৩ -এ বইটি আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন। শুধু গান নয়, রবীন্দ্রনাথের কবিতা নিয়েও আর্কাইভ তৈরি করেন তিনি। চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে অনেকটা সময় সেখানে ব্যয় হয়। উনি খুব টেক স্যাভি মানুষ। ‘রবীন্দ্রগানের অন্তরালে’ যে নতুন বইটি সম্প্রতি বইমেলায় প্রকাশ পেয়েছে, সেখানে গানের যে কিউআর কোড রয়েছে, সেগুলো ওঁর নিজের তৈরি করা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy