একলাই থাকেন ওঁরা। কারও ছেলেমেয়ে বিদেশে, কারও শরীর ভেঙেছে অকাল শোকে! বুড়ো হয়েছে মনও। অসুখ থেকে একাকীত্ব— নিত্যসঙ্গী। প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরটাও জানা! এই বয়সে কে খেয়াল রাখবে ওঁদের?
উত্তর একটা মিলেছে। যেমন সল্টলেকের সেই বৃদ্ধের কথা। একমাত্র ছেলে কর্মসূত্রে সানফ্রানসিস্কোয়। সল্টলেকের বাড়িতে একাই থাকতেন বাবা। তাঁর দেখভাল তো বটেই এমনকী, মানসিক ভাবে পাশে থাকার জন্যও কলকাতার একটি সংস্থার দ্বারস্থ হন ছেলে। সংস্থাটি কাজও করেছিল বেশ কিছু দিন। শেষে বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর ছেলের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল ফোনে। খবর পেয়ে ছেলে জানিয়েছিলেন, ‘মানুষটাই যখন রইল না তখন দেশে ফেরার কারণও রইল না!’ তাই শেষকৃত্যের ভারও নিয়েছিল সেই সংস্থাই।
ধরা যাক সেই ভদ্রমহিলার কথা। যিনি স্বামী, একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কী রকম যেন হয়ে গিয়েছিলেন। সারা দিন কাঁদতেন। রাত জেগেই কাটাতেন। শেষে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সেই সংস্থার সদস্য হয়ে যান। পাল্টাতে থাকে ছবিটা। সংস্থার আয়োজিত আড্ডায় নিয়ম করে আসতে শুরু করেন ভদ্রমহিলা। ছন্দে ফিরতে শুরু করে জীবন!
প্রবীণদের একাকীত্ব যে ক্রমশ ভয়ানক চেহারা নিচ্ছে, তা মানছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানান, পৃথিবীর সর্বত্রই মানুষের জীবনকাল বাড়ছে। বাড়ছে একাকীত্ব। তাঁদের মতে, ‘‘চাকরি বা অন্য কারণে ছেলেমেয়েরা দূরে। ফলে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রবীণরা সমস্যায় পড়ছেন।’’ তার মোকাবিলায় এই প্রবীণদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে ‘ডিগনিটি ফাউন্ডেশনে’র মতো কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। দেশ জুড়ে টাকার বিনিময়ে তারা দেখভাল করছে প্রবীণদের।
এমনই কিছু সংস্থাকে নিয়ে ৯-১০ এপ্রিল সম্মেলন হচ্ছে কলকাতার রোটারি সদনে। এ দিন সম্মেলন এসেছিলেন বহু বয়স্ক। বয়স্কদের কী পরিষেবা দিচ্ছে সংস্থাগুলি? কেউ অসুস্থ হলে বাড়িতে আইসিইউ তৈরি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। বা অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে এবং সেখানে কেউ কাউন্সেলিং করছে, কেউ শেখাচ্ছে গিটার, কম্পিউটার। বাদ পড়ছে না জন্মদিন উদ্যাপনও!
অঘটন ঘটলে ছেলেমেয়েরা না-আসা পর্যন্ত দেহ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করছে সংস্থাগুলোই। কেউ কেউ আবার এই প্রবীণ প্রজন্মের অভিজ্ঞতাকে ষোলো আনা কাজে লাগাচ্ছে। এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দিয়ে শুরু করছে ক্যাটারিং সার্ভিস। ভাগ হচ্ছে লাভের অঙ্ক। ব্যস্ততার সঙ্গে যেমন মন ভাল হচ্ছে ওঁদের, তেমনই লক্ষ্মীলাভও হচ্ছে। ব্যাপারটা মিলে যাচ্ছে জনপ্রিয় এক হিন্দি ছবির সঙ্গে। এ-ও তো এক ‘সেকেন্ড ইনিংস হাউস’!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy