বিজেপির দলীয় অনৈক্য চাপা দেওয়া গেল না। নিজস্ব চিত্র
সোমবার রাজ্য বিজেপির তিন দিনের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে কলকাতায়। বৈদিক ভিলেজে দলের সব সাংসদ, বিধায়ক ও রাজ্য নেতাকে ডাকা হয়েছে। আসতে বলা হয়েছে জেলা সভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও। কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, সেখানে গরহাজির রাজ্য থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় জায়গা পাওয়া তিন মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামাণিক এবং জন বার্লা। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এসেছেন শুধু কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়েই শিবিরে এসেছেন বিজেপির এই ‘আদি’ নেতা।
তিন জনের সঙ্গেই যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বার্লা এবং স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ ফোন ধরেননি। তবে জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর গলায় বেশ অভিমানী সুর। সেই অভিমান কেন, তার উত্তর না দিয়েও তিনি বলেন, ‘‘আমি এখন ব্যক্তিগত কাজে গুজরাতে রয়েছি। শিবিরে যাইনি। এই কাজটা আমার কাছে খুব দরকারি।’’ কিন্তু সকলেরই তো শিবিরে থাকার কথা? তিনি কি আমন্ত্রণ পাননি? নাকি শিবির গুরুত্বপূর্ণ নয়? শান্তনু বলেন, ‘‘আমন্ত্রণ পেয়েছি। কিন্তু ওখানে গিয়ে কী হবে? যাঁরা দায়িত্বে আছেন তাঁরাই করুন। আমরা তো আর পার্টির দায়িত্বে নেই। যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁরাই চালান না। তাঁরাই তো সব চালাচ্ছেন।’’ তবে তিনি যে শিবিরে যোগ দেবেন না, সেটা তিনি দলীয় নেতৃত্বকে বলেননি বলেও জানান শান্তনু।
দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরীকে বাদ দিয়ে রাজ্যের অন্য চার সাংসদকে মন্ত্রী করেছিল বিজেপি। বাবুল বিজেপি ছেড়ে এখন রাজ্যে তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী। দেবশ্রী এসেছেন শিবিরে। এসেছেন বর্তমানে মন্ত্রী সুভাষও। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চেও ছিলেন তিনি। কিন্তু বাকিদের দেখা মেলেনি মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত। বাকি দেড় দিনের শিবিরেও তাঁরা আসবেন না বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবির। তাঁর মতো বাকি দু’জনও যে আসবেন তা জানিয়ে দিয়েছেন শান্তনু। তিনি বলেন, ‘‘কেউই আসবেন না। কেন আসবেন না, আমি বলতে পারব না। তবে আসবেন না।’’
বনগাঁর সাংসদ শান্তনুকে আগেই ‘বিদ্রোহী’ হতে দেখা গিয়েছে। তিনি কলকাতায় রাজ্য বিজেপির ‘বিদ্রোহী’-দের নিয়ে বৈঠকও করেছিলেন। সেটাও আবার মন্ত্রী হওয়ার পরে সরকারি গেস্ট হাউসে। বার বার ‘পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্য চাই’ দাবি তুলে দলকে অস্বস্তিতে ফেলতে দেখা গিয়েছে বার্লাকে। আবার সরাসরি বিদ্রোহ না দেখালেও রাজ্য বিজেপির বিদ্রোহী শিবিরের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করতে দেখা গিয়েছে নিশীথকে। সবক’টি ঘটনাতেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে রাজ্য বিজেপিকে। প্রতি বারই রাজ্যের নেতারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রসঙ্গে মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ বার রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। কারণ, শিবিরের নিয়ম অনুযায়ী সেখানে হাজির সকলেই একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলছেন না।
রাজ্যের পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে সর্বভারতীয় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সুনীল বনসল এই শিবিরে যোগ দেওয়ার মাধ্যমেই রাজ্যে কাজ শুরু করলেন। শিবিরের শেষ দিনে হাজির থাকার কথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষের। কিন্তু তাঁদের সামনেও রাজ্য বিজেপি ঐক্যের ছবি দেখাতে পারল না। ওই তিন মন্ত্রী যে শিবিরে না-ও আসতে পারেন, সেটা অবশ্য আগে থেকেই রাজ্য বিজেপির কোনও কোনও নেতা আন্দাজ করেছিলেন। সেই সময়েই তাঁরা বলেছিলেন, ‘‘সুভাষ’দা অনেকদিন বিজেপিতে রয়েছেন। তিনি দলের রীতি, আদবকায়দা জানেন। কিন্তু বাকি তিন জনই তো আলাদা আলাদা কোটায় মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। এক জন উত্তরবঙ্গের এবং আদিবাসী, এক জন মতুয়া এবং এক জন রাজবংশী কোটায়।’’ ওই নেতার বক্তব্য অনুযায়ী, মন্ত্রী হওয়ার পরে ওই তিন সাংসদকে সে ভাবে দলীয় কর্মসূচিতেও পাওয়া যায়নি। অনেক বৈঠকেই আমন্ত্রণ জানানো সত্ত্বেও তাঁরা আসেননি। নিশীথ ও শান্তনুকে শেষ বার সক্রিয় দেখা গিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরের সময়ে। এর পরে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে দ্রৌপদী মুর্মু প্রচারে এলেও ওঁরাও আসেন।
বিজেপি এই শিবিরে যোগ দেওয়ার যে নিয়ম করেছে, তাতেসব স্তরের নেতা বা মন্ত্রীকেই নিজস্ব নিরাপত্তা থেকে ব্যক্তিগত সহকারীদের বাইরে রেখে শিবিরে দুই রাত্রি, তিন দিন কাটানোর কথা। বাড়ির বিছানা ছেড়ে শিবিরেই থাকার কথা। যদিও বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈদিক ভিলেজে মন্ত্রীদের জন্য তুলনায় ভাল ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে খালিই রয়ে গেল তিন মন্ত্রীর ঘর। খালি রয়েছে আরও তিন সাংসদ দার্জিলিঙের রাজু বিস্তা, বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনের সাংসদ এসএস অহলুওয়ালিয়া এবং ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমের ঘরও। যদিও তাঁরা নাকি আগে থেকেই সংসদীয় কমিটির কাজে ব্যস্ত থাকার কথা দলকে জানিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy