—প্রতীকী ছবি।
গর্ভে যমজ সন্তান ছিল। ঘুণাক্ষরেও তা টের পাননি মা! বাড়িতে কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁকে। পুত্রসন্তানের জন্ম হয় সেখানে। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই বধূকে জানানো হয়, কন্যাসন্তানটির মৃত্যু হয়েছে। কবরও দেওয়া হয়েছে নদীতীরে। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে সদ্যোজাত পুত্রকে আঁকড়ে দিন কাটছিল মায়ের। হঠাৎ এক দিন হাসপাতালে গিয়ে দেখলেন, অন্য এক দম্পতির কোলে ঘুরছে সেই কন্যাসন্তান! তাকে ফিরে পেতে এখন বিভিন্ন সরকারি দফতরে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে মাকে। প্রমাণ দিতে হচ্ছে, ওই সন্তান তাঁরই!
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের মাটিগাড়া ব্লকের রানানগর এলাকার বাসিন্দা ওই বধূ ইতিমধ্যেই পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে সদ্যোজাতকে অন্য দম্পতির হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্ত ওই শ্বশুর, শাশুড়ি আর সেই দম্পতিকে গ্রেফতার করেছে। শিলিগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শুভেন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘আপাতত ধৃতেরা পুলিশি হেফাজতে রয়েছে।’’ তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আগেই তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ওই বধূ। আরও একটি কন্যাসন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার সামর্থ্য পরিবারের নেই বলেই শ্বশুর-শাশুড়ি সদ্যোজাতকে ওই দম্পতির হাতে তুলে দিয়েছিলেন। শুভেন্দ্র বলেন, ‘‘বাচ্চাটিকে অন্য দম্পতির হাতে তুলে দেওয়ার সময় টাকাপয়সার কোনও লেনদেন হয়নি বলেই আমরা জানতে পেরেছি। বাকিটা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
পরিবার সূত্রে খবর, গত ৭ ডিসেম্বর গভীর রাতে বাড়িতেই কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই বধূ। এর পরেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাঁকে মাটিগাড়া প্রাথমিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁর সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকেও। পরে মাটিগাড়ার হাসপাতাল থেকে ওই বধূকে স্থানান্তরিত করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পর থেকেই অসুস্থ থাকায় কন্যাসন্তানটিকেও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সে কথা জানতেন না মা। বধূর দেওর জানান, সুস্থ হওয়ার পর মা ফিরলে তাঁকে জানানো হয়, তাঁর সদ্যোজাত মেয়েটি মারা গিয়েছে অসুস্থতার কারণে। নদীর পাশে শেষকৃত্যও করা হয়েছে। দেওর বলেন, ‘‘বাবা, মায়ের মুখে ওই কথা শুনে একটু সন্দেহ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসই করেছিলাম ওঁদের কথা। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, বাচ্চাটা সুস্থই আছে। ওকে অন্য দম্পতিকে দিয়ে দিয়েছে বাবা, মা।’’
দেওর জানান, তাঁদেরই এক প্রতিবেশী শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে কাজ করেন। তিনিই ওই সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে এক দম্পতির কোলে দেখেন। ওই খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান দেওর। জানতে পারেন, ওই দম্পতি যে শিশুটির আসল বাবা, মা নন, তা হাসপাতালে জানাজানি হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই গোল বেধেছে। দেওরের মুখে সব শুনে বধূও হাসপাতালে যান। দেওর বলেন, ‘‘মেয়ে বেঁচে আছে দেখে দিশাহারা অবস্থা হয়েছিল ওঁর (বধূ)। দেখেই চেঁচিয়ে উঠেছিল, ‘ওই তো আমার মেয়ে। ও তো মরেনি!’ কোনও ক্রমে নিজেকে সামলেছিল বৌদি। ওই দম্পতির কাছে গিয়ে সন্তানকে ফিরিয়ে দিতেও বলেছিল। কিন্তু ওরা মেয়েকে ফেরত দিতে রাজি হয়নি।’’ এর পরেই ৩১ ডিসেম্বর মাটিগাড়া থানার অন্তর্গত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের পুলিশ আউটপোস্টে শ্বশুর, শাশুড়ি এবং ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন বধূ।
কিন্তু নথিপত্রের অভাবে সদ্যোজাতকে এখনও বধূর হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। দেওর জানান, বাড়িতে জন্ম হওয়ায় সরকারি কাগজপত্র নেই তাঁদের কাছে। এই পরিস্থিতিতে নথিপত্র জোগাড়ে সরকারি দফতরে দফতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই বধূ। মাস ছয়েক আগে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে ট্রেনে কাটা পড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, সদ্যোজাতকে আপাতত চাইল্ড ওয়েলফেয়ারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সে শিলিগুড়ি জেলা হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন। দেওর বলেন, ‘‘বাচ্চাটাকে আমরা ফিরে পেতে চাই। কিন্তু কোনও কাগজপত্র নেই আমাদের কাছে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা কন্যাসন্তানের জন্মের সার্টিফিকেট, মেডিক্যাল কলেজ থেকে ছুটির কাগজপত্র, বৌদির পরিচয়পত্র চেয়েছে।’’
এ ব্যাপারে শিলিগুড়িতে চাইলন্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওরা আমাদের কাছে আসুক। কী অসুবিধা রয়েছে, তা বলুক। আমরা কিছু একটা ব্যবস্থা করতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy