ভোটের দু’দিন আগেও রণংদেহী মেজাজ ছিল তাঁদের। আর ভোটের দিনে অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হল সেই সিটিজেন্স ফোরামের সদস্যদের।
দিন দুই আগে রীতিমত হুঁশিয়ারি দিয়ে সদ্য গঠিত ফোরামের আহ্বায়ক অরুণাভ ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘ভোটারদের ভোটদানে কোনও রকম বাধা তৈরি করা হলে পথে নামবেন সদস্যরা। প্রয়োজনে থানায় অবস্থান বিক্ষোভে বসা হবে।’’
বাস্তব ছবিটা বলছে, শনিবার সকাল থেকে দুপুর, ভয়ে বুক কেঁপেছে বহু সাধারণ ভোটারের। বিধাননগরে অবাধে ভোট লুট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারেবারেই। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এত বহিরাগতদের নিয়ে আসা হয়েছিল যে এক সময়ে মনে হচ্ছিল, সল্টলেকের সমগ্র জনসংখ্যার চেয়ে বহিরাগতদের সংখ্যাই বোধহয় বেশি।
বাড়ির দরজায় বা বুথ থেকে খানিক দূরে ইতিউতি জটলায় অনেকরই অভিযোগ, নীরব দর্শকের ভূমিকায় এর আগে কখনওই এত পারদর্শী দেখায়নি সল্টলেকের পুলিশকে। অনেক ভোটার এই প্রশ্নও তুলছেন, কোথায় সিটিজেন্স
ফোরাম? কোথায় তাঁদের অবস্থান-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ?
শনিবার দুপুরে অরুণাভবাবুকে ফোনে ধরা হলে তাঁর হতাশ গলা ভেসে আসে, ‘‘আমরা অসহায়। দু’-এক জায়গায় গন্ডগোল হলে সামলানো যায়। প্রতিবাদ করা যায়। কিন্তু, সর্বত্র সমস্ত বুথ দখল হয়ে গেলে কিছু করার থাকে না।’’ তিনি জানান, গন্ডগোলের খবর পেয়ে বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমকে বারবার ফোন করা হলে প্রতি বারেই এক উত্তর পাওয়া গিয়েছে, ‘‘দেখছি।’’ যদিও ফল হয়নি কিছুই।
ফোরামের আর এক সদস্য অমিতাভ মজুমদারও এ দিন বলেন, ‘‘যেখানে প্রকাশ্যে সশস্ত্র অবস্থায় দুষ্কৃতীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুলিশ নিষ্ক্রিয়, সেখানে আমরা নিরস্ত্র বাসিন্দারা কী ভাবে লড়তে পারি?’’
তবে কি পুলিশের উপরে ভরসা করেই প্রতিবাদ করা হবে বলে মনে করেছিল সিটিজেন্স ফোরাম? উত্তর পাওয়া যায়নি।
সকাল ১১টা। এবি-এসি ব্লকের একটি বুথ থেকে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলেন এক চিকিৎসক। নাম প্রকাশ করা যাবে না, এই শর্তে বললেন, ‘‘ভোট দিতে সবে বুথের মধ্যে ঢুকেছি, দেখি এক দল যুবক সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আমাকে দেখেই প্রথমে অশ্লীল গালিগালাজ এবং তার পরে মারধর শুরু করে দিল। পুলিশ আটকাতে এল না। শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল কোনও রকমে বুথ থেকে বেরোতে পেরেছি।’’
ওই চিকিৎসক বাড়িমুখো হলেন এই বলে, ‘‘আর কোনও দিন ভোট দেব না।’’
এবি-এসি ব্লকে তা-ও কিছু বাসিন্দা বার বার বহিরাগতদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন। প্রতিরোধের খণ্ডচিত্র দেখা গিয়েছে তিন নম্বর সেক্টরের আইএ, এইচএ ব্লকে। কিন্তু চোখের সামনেই সাংবাদিকদের আক্রান্ত হতে দেখে সল্টলেকের অধিকাংশ জায়গাতেই অনেক আর ভোট দিতে যাওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি।
সিটিজেন্স ফোরামের সভায় হাজির ছিলেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল প্রার্থী অনুপম দত্ত। তিনি অবশ্য দিনভর লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। অভিযোগ, তাঁকে বেধড়ক মারধর করেছে শাসক দলের বহিরাগতরা। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় বুথের সামনে দেখা গিয়েছে। যে ওয়ার্ডে এই অভিযোগ, সেই ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় পাল্টা অভিযোগ করেছেন, এ দিন সকালে অনুপম দত্তর লোকজন সিপিএম ও বিজেপির লোকেদের সঙ্গে নিয়ে তাঁকে মারধর করেছে।
দিনভর কী করলেন সিটিজেন্স ফোরামের আহ্বায়ক অরুণাভ ঘোষ?
অরুণাভবাবু নিজে অবশ্য পথে নেমেছিলেন। কখনও বিসি ব্লকে, কখনও এবি ব্লকে গিয়ে তিনি বহিরাগতদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন হাতে গোনা কয়েক জন যুবক। কিন্তু, অন্য পক্ষে যে শক্তি নিয়ে, যত যুবক ভোট করতে নেমেছিল তাদের দাপটে খড়-কুটোর মতো উড়ে গিয়েছে অরুণাভবাবুর প্রতিবাদ। দুপুর একটার মধ্যে এত দিক থেকে এত অভিযোগ আসতে শুরু করে যে তিনি বাধ্য হন চুপচাপ বাড়ি ফিরে যেতে।
ভোটদানের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে তৃণমূল যা নিয়ে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে, ‘‘স্রেফ ধান্দবাজির জন্য কোনও সংগঠন গড়ে উঠতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy