ভাষার লড়াইয়ে অপভাষা। ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবার বক্তব্যে ফারাক থাকলেও তাতে যুদ্ধের আবহ ছিল না। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানের জেরে নতুন ভাষা যুদ্ধ শুরু হল বাইশে ফেব্রুয়ারি। বাংলা ভাষায় ‘পানি’ বা ‘দাওয়াত’-এর মতো শব্দের অনুপ্রবেশ নিয়ে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। মঞ্চে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই মন্তব্যের বিরোধিতা করেন। একই সঙ্গে ভাষায় শব্দবৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির মন্তব্যকে সমর্থন জানান। ওই একই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা কবিতা পাঠ করেন কবি সুবোধ সরকার।
মুখ্যমন্ত্রীর ‘আপত্তি’ নিয়ে তিনি যে ভাবিত নন, তা জানাতে গিয়ে বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে নৃসিংহপ্রসাদ ও সুবোধ সম্পর্কে ‘তেলবাজ’ শব্দটি ব্যবহার করেন শুভাপ্রসন্ন। প্রবীণ প্রাবন্ধিক এবং বর্ষীয়ান কবি তা শুনে প্রবীণ শিল্পীর ভাষার ব্যবহার নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তবে দু’জনের কেউই শুভাপ্রসন্নকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি। উল্টে ‘শ্রদ্ধা’ জানিয়েছেন। যেমন মুখ্যমন্ত্রী শুভাপ্রসন্নকে শ্রদ্ধা জানিয়েও তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠান মঞ্চে ভাষণ দিতে গিয়ে শুভাপ্রসন্ন বলেছিলেন, ‘‘বাংলা ভাষার উচ্চারণ, বাংলা ভাষার তাৎপর্য, বাংলার ভাষার বৈশিষ্ট্য থেকে আমরা সরে আসছি। আমরা দেখছি বহু কারণে, নানান সাম্প্রদায়িক ছাপ বাংলা ভাষায় চলে এসেছে।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি ‘পানি’, ‘দাওয়াত’ শব্দের অনুপ্রবেশ নিয়ে সরাসরি আপত্তি তোলেন। যা নিয়ে নিজের ভিন্ন মত জানাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, ‘‘আমি নৃসিংহ’দার সঙ্গে একমত। কথায় যত বেশি বাংলা শব্দ বৃদ্ধি পাবে, তত বেশি বাংলা ভাষার বৃদ্ধি হবে। আমরা যদি হৃদয়টাকে ছোট করে রাখি, তা হলে হৃদয় কোনও দিনই বৃদ্ধি পাবে না। যত বেশি দেওয়া-নেওয়া হবে, মূল ঐতিহ্যটাকে ঠিক রেখেই আমি ভাষাটাকে বাড়াব।’’ মুখ্যমন্ত্রীর অব্যবহিত আগে বক্তৃতা করতে গিয়ে নৃসিংহপ্রসাদ বাংলার শব্দভান্ডার বাড়ানোর কথা বলেছিলেন।
তাঁকেই বুধবার ‘তেলবাজ’ বলে অভিহিত করেছেন শুভাপ্রসন্ন। ওই মন্তব্য শোনার পর নৃসিংহপ্রসাদ খানিকটা বিস্মিতই হন। শুভাপ্রসন্ন বলেছেন, ‘‘নৃসিংহ-ফৃসিংহ কিছু আছে না, তেলবাজ, যাদের জীবনে কখনও আগে দেখিনি আন্দোলন বা অমুক-তমুকে। পরিবর্তনের সরকারের আগে আমরা এত কিছু করেছি! এই লোকগুলো ছিল কোথায়? আজকের সুবোধই বা ছিল কোথায়? ওরা তো উল্টে আমাদের গালাগাল দিত! সেই এরা এখন সবচেয়ে বড় তেলবাজ হয়ে গিয়েছে। আমরা ভাষা বুঝি না, এই সব বড় বড় কথা বলেছে!’’
এর জবাবে নৃসিংহপ্রসাদ বলেন, ‘‘সত্যিই তো ওঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। উনি নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় সত্যিই মমতার সঙ্গে খুব জড়িয়ে আছেন।’’ এর বেশি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি প্রবীণ প্রাবন্ধিক। ‘তেলবাজ’ শব্দটির প্রয়োগে কি শুভাপ্রসন্ন তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি সুযোগসুবিধা নেওয়ার কথা বলতে চেয়েছেন? সে প্রশ্নের জবাব দেননি নৃসিংহপ্রসাদ। তবে তিনি জানান, তিনি লেখাপড়া নিয়েই থাকেন। ভাষা নিয়েও চর্চা করেন।
প্রায় একই প্রতিক্রিয়া কবি সুবোধের। তিনি প্রশ্ন শুনেই ‘‘শুভাদা এমনটা বলেছেন’’ বলে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকেন। তার পরে বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘রাস্তার ধুলো’ কবিতাটা ওই অনুষ্ঠানে পাঠ করেছি। কবিতাটা সত্যিই খুব ভাল। সেটা যদি তেল মারা হয়ে থাকে, তবে আমার কিছু বলার নেই। তবে চিরকাল কবিতা পাঠ করে এসেছি। যে যা-ই বলুক, সেটা আমি চালিয়ে যাব। সে যাঁরই কবিতা হোক! কেউ ‘তেলবাজ’ বললেও কবিতাপাঠ বন্ধ করতে পারব না।’’ পাশাপাশিই নৃসিংহপ্রসাদের মতোই সুবোধও জানিয়েছেন, শুভাপ্রসন্নকে তিনি খুবই ‘শ্রদ্ধা’ করেন। সেই শ্রদ্ধা অটুট থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy