Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Ayan Sil

‘চাকরিদাতা’ অয়ন নিজে কাজ পান ‘গুরু’ ধরে! রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় সেই শ্রীকুমারের

সরকারি কর্মী শ্রীকুমারের লেখা নোটে মৃত্যুর জন্য অয়নকে দায়ী করা হয়। অয়নের প্রতি ক্ষোভ প্রতি ছত্রে ধরা পড়েছে ওই লেখায়। তাতে শ্রীকুমার দাবি করেন, তিনিই অয়নকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন।

ayan sil

অয়নের ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছিল তাঁর ‘গুরু’কে? ফাইল চিত্র।

সুদীপ দাস
চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:১৭
Share: Save:

কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ধৃত প্রোমোটার অয়ন শীল নিয়োগ দুর্নীতি চক্রের অন্যতম মাথা। এ হেন অয়ন নিজে চাকরি পাওয়ার জন্য ‘গুরু’ ধরেছিলেন? পরে অয়নের ফাঁদে পড়ে সেই মানুষটিকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয়েছিল? সাড়ে চার বছর আগে হুগলির দেবানন্দপুরে এক বাবা-ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোট’ থেকে এমন অভিযোগ উঠেছিল। মৃতদের পরিবারের তরফে অয়নের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল চুঁচুড়া থানায়। কিন্তু, সে সব নিয়ে বিশেষ নাড়াচাড়া হয়নি বলেই অভিযোগ।

সরকারি তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর দেবানন্দপুরের বাসিন্দা শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ওরফে গুরু এবং তাঁর ছেলে রূপকুমারের দেহ উদ্ধার হয় ঘর থেকে। ময়নাতদন্তে জানা যায়, বিষক্রিয়ায় তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। সূত্রের দাবি, সরকারি কর্মী শ্রীকুমারের লেখা সেই নোটে মৃত্যুর জন্য অয়নকে দায়ী করা হয়। অয়নের প্রতি ক্ষোভ প্রতি ছত্রে ধরা পড়েছে ওই লেখায়। সেই সূত্রের মতে, তাতে শ্রীকুমার দাবি করেন, তিনিই অয়নকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন।

২০০৭ সালে এগ্‌জ়িকিউটিভ অফিসার হিসেবে পান্ডুয়া পঞ্চায়েতে চাকরি জীবন শুরু করেন অয়ন। পরে বলাগড় ব্লকের ডুমুরদহ-নিত্যানন্দপুর-১ পঞ্চায়েতে বদলি হন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে কাজ ছেড়ে দেন। তত দিনে তিনি রীতিমতো ফুলেফেঁপে উঠেছেন। লঝঝড়ে মোটরবাইক বদলে গিয়েছে দামি গাড়িতে। হাত পাকিয়েছেন প্রোমোটারি ব্যবসায়। অভিযোগ, নিয়োগ দুর্নীতিতে কামানো কোটি কোটি টাকা তখন তাঁর পকেটে। চাকরি দেওয়ার জন্য টাকা তুলতে তিনি শ্রীকুমার-রূপকুমারকে কাজে লাগান বলে দাবি। ‘সুইসাইড নোটে’ও তা স্পষ্ট।

শ্রীকুমার কোষাগার ভবনে চাকরি করতেন। সূত্রের দাবি, তাঁর সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, তাঁর সরলতার সুযোগ নিয়ে ২০১২ ও ২০১৪ সালের প্রাথমিকের টেটে প্রায় দু’কোটি এবং ২০১৫-র টেটে ৬৫ লক্ষ টাকা চাকরিপ্রার্থীদের থেকে তাঁর মাধ্যমে নিয়েছেন অয়ন। কিন্তু চাকরি হয়নি। আত্মহত্যা না করলে অয়ন তাঁদের মেরে দেবেন বলেও সেই নোটে লেখা ছিল বলে দাবি করা হয়।

তাঁর পরিচিতদের দাবি, চাকরি জীবনে কংগ্রেস সমর্থক ছিলেন শ্রীকুমার। ২০১১ সালের পরে অবসর নেন। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, অবসরের পরেই তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। দেবানন্দপুরের কংগ্রেস, সিপিএম থেকে কর্মীদের তৃণমূলে আনার পিছনে তাঁর ভূমিকা ছিল।

কংগ্রেসের একটি সূত্রের দাবি, বাম আমলে কংগ্রেসের সমর্থক হলেও নানা সুবিধা পাওয়ার জন্য সিপিএমের সঙ্গে সখ্য বজায় রেখে চলতেন শ্রীকুমার। তাই, কর্ম-বিনিয়োগ কেন্দ্রের মাধ্যমে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ‘ক্ষমতা’ ছিল তাঁর। সেই ‘ক্ষমতার’ বলেই অয়নকে তিনি চাকরি পাইয়ে দিয়েছিলেন বলে অনেকের মত।

কংগ্রেস নেতাদের একাংশের দাবি, সুযোগ পেয়ে শ্রীকুমার দু’এক জন পরিচিতকে চাকরি পাইয়ে দিলেও বিনিময়ে টাকা নিতেন না। কিন্তু, পরে টাকা নিয়ে অয়নের চাকরি দেওয়ার বহর দেখে লোভে পড়ে যান। চাকরিপ্রার্থীদের থেকে টাকা তুলে অয়নের হাতে দেন। আখেরে, তারই মাসুল গুনতে হয় প্রাণ দিয়ে।

হুগলি জেলা কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিদ্যুৎবরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরাও বলছি, বাম আমলে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হত। কিন্তু তৃণমূলের জমানার মতো টাকার বিনিময়ে নয়। শ্রীকুমারবাবুও হয়তো সিপিএমের সঙ্গে সখ্যের জোরেই অয়নকে চাকরিটা দিয়েছিলেন। না হলে সুইসাইড নোটে কেন লিখবেন?’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘আমাদের সময়ে কোথাও যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, গত এগারো বছরে তৃণমূল তা খুঁজে বের করতে পারেনি কেন?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ayan Sil Recruitment Scam Shantanu Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE