পরিচালক শঙ্কুদেব পণ্ডা। — নিজস্ব চিত্র
টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতেন এক সময়ে। হাতে থাকত ‘বুম’। ভূমিকাটা ছিল সাংবাদিকের।
ক্যামেরার পিছনেও যে একেবারে ছিলেন না, তা নয়। সাংবাদিক হিসেবেই চালিয়েছিলেন ‘স্টিং অপারেশন’। বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু সেই ‘স্টিং’-এর ধাক্কায় ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে রাজনৈতিক কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে যায় নন্দীগ্রামের তৎকালীন সিপিআই বিধায়ক মহম্মদ ইলিয়াসের।
সে অবশ্য প্রাচীন ইতিহাস— ২০০৮। তিনি এর পর সাংবাদিকতা ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে চলে আসেন। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দাপুটে নেতা হিসেবে খ্যাতিও পাচ্ছিলেন। আচমকা সারদা-নারদের জোড়া কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে গেল নাম। দলে একরকম ব্রাত্যই হয়ে পড়লেন তিনি।
শঙ্কুদেব পণ্ডা এখন বলছেন, ‘‘রাজনীতি থেকে এখন আমি অনেক দূরে। তবে আমার ছবি রাজনীতির বাইরে নয়।’’
‘তাঁর’ ছবি। প্রথম ছবি। নাম— ‘কমরেড’। সাংবাদিক থেকে নেতা, নেতা থেকে পরিচালক। ছবি বানাচ্ছেন শঙ্কু। পুরোদস্তুর রাজনৈতিক থ্রিলার!
শনিবারের শ্যুটিং লোকেশন ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা। কাজের ফাঁকে নবীন পরিচালক বললেন, ‘‘সাংবাদিকতা করতে গিয়ে যা যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার সবটা লিখে উঠতে পারিনি। কমরেড-এ সেই না-বলা কথাই বলার চেষ্টা করব।’’ জানা গেল, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম-জঙ্গলমহলে সিপিএমের ‘কার্যকলাপ’, তাপসী মালিক, রাধারানি আড়ি— তাঁর ‘না-বলা কথা’য় রয়েছে সবই।
ছবির প্রযোজক আত্রেয়ী ইজেল। অভিনয়ে খরাজ মুখোপাধ্যায়, সাহেব ভট্টাচার্য, এনা সাহা, মৈনাক। ছবির সঙ্গীত পরিচালক ‘ভূমি’-খ্যাত সুরজিৎ। অকপট শঙ্কু জানালেন, চিত্রনাট্য লিখতে তাঁকে খুবই সাহায্য করেছে যাদবপুর ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েক জন ছাত্রের গবেষণা। এবং বললেন, ‘‘এ ছবিতে এমন ‘মশলা’ থাকবে, যা হল-এ ছাড়া দেখা যাবে না। টিভিতে অথবা ইন্টারনেটে ডাউনলোড করে দেখলে ছবির ‘ফিল’-ই আসবে না।’’
সেই চ্যালেঞ্জ! কোথাও যেন উঁকি দিয়ে গেলেন পুরনো ‘শঙ্কু-স্যার’। যিনি ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) রাজ্য সভাপতি। তৃণমূল শাসনের প্রথম কয়েক বছরে যাঁর উত্থান হয়েছিল উল্কার মতোই। পরপর দুই শিক্ষামন্ত্রী তাঁকে বাগে আনতে বিস্তর বেগ পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত টিএমসিপি-র পদ গেলেও তাঁকে সাধারণ সম্পাদক পদে তুলে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শঙ্কু থাকতেনও বাইপাসের ধারে, তৃণমূল ভবনে।
এই পর্যন্ত ঠিক ছিল। আচমকা সারদা-কাণ্ডে নেমে শঙ্কুকে জেরা করে সিবিআই। দলও তাঁকে আস্তে আস্তে ঝেড়ে ফেলতে শুরু করে। সেই ঘা শুকোনোর আগেই প্রাক্তন সাংবাদিক টিভিতে দেখেন, নারদ নিউজের স্টিং অপারেশনে তাঁর নিজের ছবি! আরও বাড়তে থাকে ব্যবধান।
এই মুহূর্তে দলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন? শঙ্কু নিজে কিছু বলতে না চাইলেও সম্প্রতি ‘দূরত্বের’ প্রমাণ পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সূত্রের খবর, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসের সরস্বতী পুজোয় গিয়েছিলেন শঙ্কু। তা জানতে পেরে প্রথমে যাবেন বলেও সেই পথ মাড়াননি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়!
রাজনীতি থেকে ব্রাত্য হয়ে ছবি তৈরিতে আসার ক্ষেত্রে শঙ্কুই প্রথম নন অবশ্য। বাম আমলে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সেই সময়ে সিপিএমের প্রথম সারির নেতা নেপালদেব ভট্টাচার্য। তৈরি করেন ‘চাকা’ নামে একটি বাংলা ছবি। ছবির নায়ক মিঠুন চক্রবর্তী হলেও তেমন বাণিজ্যসফল হয়নি সেই ছবি।
‘কমরেড’ নেপালবাবু অবশ্য ফিরে এসেছেন পুরনো দলে। ভোটেও লড়েছেন। আর শঙ্কু? ছবিই কি তাঁর রাজনৈতিক হাতিয়ার?
পরিচালক বলছেন, রাজনীতি নয়। এই ছবি বানিয়েই তিনি ঘুরে দাঁড়াতে চান!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy