Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নেতাদের জানিয়েই টাকা নিয়েছি, দাবি শঙ্কুর

সারদা তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের তৎপরতা ফের প্রকাশ্যে আসার পরে গত সোমবার আমতার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ব্যক্তিগত ভাবে কেউ চুরি করলে তার জন্য দলকে দায়ী করা যাবে না।

সিজিও কমপ্লেক্সে শঙ্কু। বুধবার দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

সিজিও কমপ্লেক্সে শঙ্কু। বুধবার দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৪:১৩
Share: Save:

সারদা তদন্ত নিয়ে সিবিআইয়ের তৎপরতা ফের প্রকাশ্যে আসার পরে গত সোমবার আমতার সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ব্যক্তিগত ভাবে কেউ চুরি করলে তার জন্য দলকে দায়ী করা যাবে না।

এর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক শঙ্কুদেব পণ্ডাকে জেরা করার পরে সিবিআই গোয়েন্দাদের দাবি, সারদা ও রোজভ্যালির কাছ থেকে নেওয়া টাকার একটি অংশ দলের কাজে খরচ করেছেন বলে কবুল করছেন তিনি। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতিসাপেক্ষেই ওই টাকা নেওয়া এবং খরচ করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন শঙ্কু। শঙ্কুর দাবির সত্যতা যাচাই করতে তাঁকে প্রয়োজনীয় তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে বলেছেন সিবিআই গোয়েন্দারা।

সারদা ও রোজভ্যালি দুর্নীতির তদন্তে সম্প্রতি টেলিফোনে শঙ্কুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সিবিআই। তাঁকে হাজিরা দেওয়ার নোটিস পাঠানোর তোড়জোড় শুরু হলেও এখনও তা পাঠানো হয়নি। তার আগেই বুধবার সাতসকালে সল্টলেকের সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান শঙ্কু। ঘড়িতে তখন সাড়ে আটটা। সিবিআই দফতরে কোনও কর্তাই নেই। দফতরের দরজায় দাঁড়িয়ে ফোন করে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন শঙ্কু। সাড়ে নটার পরে সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা দফতরে পৌঁছন। শেষ পর্যন্ত বিকেল চারটে নাগাদ কয়েক দফায় শঙ্কুকে জেরা করা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

জেরায় কী বলেছেন শঙ্কু? তৃণমূল নেতা নিজে কোনও মন্তব্য করেননি। সিবিআইয়ের তরফেও সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে সূত্রের খবর, দলনেত্রী যখন দুর্নীতির আঁচ দলের গা থেকে ঝেড়ে ফেলতে ব্যগ্র, তখন শঙ্কুর দাবি, তিনি যা করেছেন দলের জন্যই করেছেন। তদন্তকারীদের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে শঙ্কুদেব কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তিনি সারদা ও রোজ ভ্যালি থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর দাবি, নিজের জন্য নয়, রাজ্যের সাংস্কৃতিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই ওই টাকা নিয়েছিলেন তিনি। যার একটা অংশ খরচ হয়েছে দলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বাকিটা অরাজনৈতিক অনুষ্ঠানে।

সিবিআই সূত্রের খবর, শঙ্কু এই কথা বলার পরে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, টাকা নেওয়ার বিষয়টি কি দলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন? তদন্তকারীদের দাবি, শঙ্কু জবাবে বলেন, শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন। শঙ্কু এ ব্যাপারে কোন কোন নেতার নাম করেছেন তা অবশ্য তদন্তকারীরা এখনই জানাতে চাননি। সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘প্রমাণ ছাড়া ওই নেতাদের ব্যাপারে এখনই কোনও মন্তব্য করা যাবে না। শঙ্কুকে আরও তথ্য প্রমাণ জমা দিতে বলা হয়েছে।’’

সিবিআই সূত্রের দাবি, সারদার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শঙ্কুর অ্যাকাউন্টে প্রায় আধ কোটি টাকা জমা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সারদার অধীনস্থ একটি সংবাদমাধ্যমের কর্মচারী হিসেবে তিনি ৫৫ লক্ষ টাকার কাছাকাছি তুলেছেন। এর বাইরেও নানা সময় শঙ্কু আরও কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছেন বলে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ও অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় সিবিআই-কে জানিয়েছেন। তদন্তকারীরা জানান, এ দিনের জেরায় শঙ্কু বলেন, সারদা-কর্তার সঙ্গে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের পরিচয় তিনিই করিয়ে দিয়েছিলেন।

সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, তদন্তকারীরা এ দিন রীতিমতো আটঘাট বেঁধে শঙ্কুকে জেরা শুরু করেন। গত বছর ডিসেম্বরে ইডি-র জেরার সময়ে তিনি যে বয়ান দিয়েছিলেন, তা-ও তাঁর সামনে রাখা হয়। সারদার আর্থিক লেনদেনের প্রশ্ন উঠতেই শঙ্কু রীতিমতো ভেঙে পড়েন বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। একটা সময় তিনি প্রায় কেঁদে ফেলে টাকা নেওয়ার দায় দল ও শীর্ষনেতাদের উপরে চাপিয়ে দেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি।

সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে শঙ্কু সটান ঢুকে যান তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে। দৃশ্যতই তখন তাঁকে বিধ্বস্ত লাগছে। তৃণমূল ভবনের একতলার কনফারেন্স রুমে তখন দলের ছাত্র সংগঠনের সভা চলছে। সে দিকে না-গিয়ে শঙ্কু উঁকি মারেন বাঁ দিকে, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতির ঘরে। তবে ঘরে না-ঢুকে এগোলেন সিঁড়ির দিকে। সিবিআই-তে কী হল জানতে চাইলে শঙ্কুর জবাব, ‘‘আমি স্নান করতে যাচ্ছি।’’ দোতলায় উঠেই দলের রাজ্য সভাপতির ঘরে ঢোকার মুখে মা কালীর ছবির সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করলেন তিনি। মিনিট কুড়ি বাদে স্নান সেরে ফের ছবির সামনে প্রণাম ঠুকে নীচে নেমে এলেন। জেরা নিয়ে ফের প্রশ্ন করতেই ক্লান্ত স্বরে বললেন, ‘‘কী বলব? আমার কিছু বলার নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

shankudeb panda money cbi saradha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE