Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

রাজ্যপালের কাছে কারা, বলতে ভয় শঙ্কুস্যারের

তাঁর ভয়ে গোটা শিক্ষা মহল থরহরিকম্প! রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, যে কারও ঘরে তিনি ঢুকে পড়তে পারেন বুক ফুলিয়ে! সেই শঙ্কুস্যার ও তাঁর বাহিনীকেই কি না রাজভবন থেকে বেরোতে হলো মুখ লুকিয়ে! রাজভবন অভিযান হয়েছে সোমবার। কিন্তু তার পর দিনও শঙ্কুদেব পণ্ডার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) জানিয়ে উঠতে পারেনি, ঠিক কারা দেখা করেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৪
Share: Save:

তাঁর ভয়ে গোটা শিক্ষা মহল থরহরিকম্প! রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, যে কারও ঘরে তিনি ঢুকে পড়তে পারেন বুক ফুলিয়ে! সেই শঙ্কুস্যার ও তাঁর বাহিনীকেই কি না রাজভবন থেকে বেরোতে হলো মুখ লুকিয়ে!

রাজভবন অভিযান হয়েছে সোমবার। কিন্তু তার পর দিনও শঙ্কুদেব পণ্ডার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) জানিয়ে উঠতে পারেনি, ঠিক কারা দেখা করেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে! অজ্ঞাতকূলশীল কোনও সংগঠনও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাজভবনের বাইরে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দেন, ছবি তোলেন। সেটাই দস্তুর। অথচ শঙ্কুরা সোমবার রাজভবন ছেড়ে কার্যত চম্পট দিয়েছেন! কাউকে ধরাছোঁয়ার সুযোগই না দিয়ে! এবং ২৪ ঘণ্টা পরেও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে তাঁদের প্রবল অনীহা!

কেন এমন অদ্ভুত গোপনীয়তা? শঙ্কুদের সংগঠনের বক্তব্য, রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেছিলেন যাদবপুরের তিন পড়ুয়া। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ ওই পড়ুয়াদের নামধাম জানাজানি হলে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়েই সংশয় দেখা দিতে পারে। যে যুক্তি শুনে এসএফআইয়ের এক ছাত্র-নেতার কটাক্ষ, “এ তো ভূতের মুখে রাম নাম! নেশাখোরদের আন্দোলনকে তবে এত ভয়?”

যাদবপুর-কাণ্ডে ছাত্রদের বিরাট প্রতিবাদ মিছিলের পাল্টা মিছিলে সোমবার মাথা উঁচিয়েই ঘুরে বেড়িয়েছিলেন শঙ্কুস্যার। মেয়ো রোডের জমায়েতে রাজ্যপালকে এক চোট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “যাদবপুরে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস রাজ্যপালকে দিতে হবে। উত্তর না-পেলে আমরা এখান থেকে উঠব না!” কিন্তু এই গর্জনের পরের শঙ্কু সম্পূর্ণই অন্য মানুষ! গাঁধীমূর্তির পাদদেশ থেকে তিনি বারংবার ফোন করেছেন রাজভবনে। ঘনঘন আর্জি জানিয়েছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের। রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি যদি জোগাড় করা যায়! দলের একেবারের উঁচুতলার ফোনেও রাজ্যপালের মন গলছে না দেখে শেষমেশ বিনা অনুমোদনেই ঢুকে গিয়েছেন রাজভবনে। ছাত্র-জমায়েতের কাছে মুখরক্ষা করতে হবে তো! রাজভবন থেকে বেরিয়ে সে মুখই অবশ্য ঢেকে ফেলতে হয়েছে রহস্যময় গোপনীয়তার আড়ালে!

রাজ্যপাল ত্রিপাঠী যাদবপুর-কাণ্ডে আর কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কথা বলতে নারাজ থাকায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরে শঙ্কুদের তরফে যাদবপুরের তিন পড়ুয়াকে সামান্য সময়ের জন্য ভিতরে পাঠানো হয়েছিল। শঙ্কু-সহ টিএমসিপি-র নেতারা তখন বাইরে অন্য ঘরে বসে। পরে রাজভবনে গৃহীত হওয়ার ছাপ মারা স্মারকলিপির একটি প্রতিলিপি দেখিয়েই তাঁরা বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁদের অভিযান সফল!

শঙ্কুর বক্তব্য, “আমাদের প্রতিনিধিদলে কোনও বহিরাগত ছিল না! ছিল যাদবপুরের ছাত্রছাত্রীরা। যাদবপুরে কী হয়েছে, তা তাঁরা রাজ্যপালকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনটে সিডিও তাঁরা রাজ্যপালকে দিয়েছেন।” কিন্তু তাঁরা কারা? তাঁদের নামপ্রকাশে কীসের আপত্তি? শঙ্কুর জবাব, “যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ যে, টিএমসিপি-র তরফে কারা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন, তা বলা যাবে না। বললে তাঁদের বিপদ হতে পারে!”

শঙ্কুর সঙ্গেই রাজভবনে গিয়েছিলেন টিএমসিপি-র আরও দুই নেতা কলকাতার তমোঘ্ন ঘোষ এবং হাবড়ার বুবাই বসু। ছিলেন টিএমসিপি কর্মী গৌতম ভট্টাচার্য। রাজভবন চত্বরে এঁদের ছবিও উঠেছে। তা হলে যাদবপুরের সেই পড়ুয়ারা কোথা দিয়ে ঢুকলেন? টিএমসিপি সূত্রের বক্তব্য, সংগঠনের আর এক নেতা অনিন্দ্য রাউতের সঙ্গে অন্য একটি গাড়িতে ওই তিন জনকে চুপিসাড়ে রাজভবনে ঢোকানো হয়েছিল!

তবে শঙ্কুদেবেরা আড়ালে রাখতে চাইলেও রাজভবনের নিয়ম মেনে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারীদের নাম নথিভুক্ত করতে হয়েছে। সেই তিন নাম অবশ্য শঙ্কুস্যারের বিধি মেনে মুখ খুলতে নারাজ। কী কথা হয়েছিল রাজ্যপালের সঙ্গে? প্রশ্ন শুনে ওই তিন নামের এক জন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া এ দিন বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না! আকাশ থেকে পড়েছেন বাংলার স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের এক পড়ুয়া। বাংলা বিভাগেরই আর এক এম ফিল পড়ুয়া একটা শব্দ উচ্চারণ পর্যন্ত করেননি।

রকমসকম দেখে শাসক দলেরই এক প্রাক্তন ছাত্র-নেতার সহাস্য মন্তব্য, “সারদা-কাণ্ডে ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ হওয়ার পর যাদবপুর-কাণ্ডে দেখছি, রাজভবনে অশরীরী!”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE