শেখ শাহজাহান। —ফাইল চিত্র।
আদালত চত্বরে যে ভঙ্গিতে তাঁকে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল, তা দেখে প্রশ্ন উঠেছিল অনেক। সন্দেশখালির শেখ শাহজাহান বসিরহাট আদালত চত্বরে যে ভঙ্গিমায় তর্জনী তুলেছিলেন, তাতে পাহাড়প্রমাণ ঔদ্ধত্যের প্রমাণ মিলেছিল বলে মনে করেছিলেন অনেকেই।
সিআইডি সূত্রের দাবি, সেই ঔদ্ধত্য বজায় ছিল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্তও। সিআইডির হেফাজতে এসে চেয়ারে বসে তদন্তকারী অফিসারদের প্রশ্নের জবাবে এমন মুখভঙ্গি করতে দেখা গিয়েছে শাহজাহানকে তাতে মনে হয়েছে, পুলিশের উঁচুস্তরের কর্তাদের সামনেই তিনি বসতে অভ্যস্ত। বাকিরা তো সব ‘চুনোপুঁটি’।
যদিও সিআইডি সূত্রের দাবি, অবিরাম প্রশ্নের মুখে শুক্রবার সকালের পর থেকে আস্তে আস্তে ভাঙতে শুরু করেছেন তিনি। পুলিশের একাংশের মতে, প্রাথমিক ঔদ্ধত্য ছিল এটা ভেবে যে দল তাঁর পাশে থাকবে। নেতা-নেত্রীর হাত থাকবে তাঁর মাথায়। কিন্তু সিআইডির পোড় খাওয়া তদন্তকারীদের একের পর এক প্রশ্নবাণ এবং তাঁদের আচরণ থেকে যখন বুঝতে পারেন তাঁর অবস্থান আর-দশটা সাধারণ অভিযুক্তের মতোই, তখন থেকে বিধ্বস্ত হতে শুরু করে তাঁর মুখ-চোখও।
এই তদন্তে সিআইডি ইডির সেই কর্তাকেও তলব করেছে, যাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছিল। সিআইডি সূত্রের দাবি, ওই ডেপুটি ডিরেক্টর গৌরব ভারিলকে রবিবার তদন্তকারীদের সামনে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে। তাঁর বয়ান রেকর্ড করতে চায় সিআইডি।
এডিজি সিআইডি আর রাজশেখরণ জানিয়েছেন, ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় ইডির উপরে যে হামলার অভিযোগ হয়েছিল, তা নিয়ে ইডির কাছে কী তথ্য বা নথি রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। এডিজির কথায়, “সে দিন ইডির মোবাইল, ল্যাপটপ খোওয়া গিয়েছিল বলে শোনা গিয়েছে। অনেকেআহত হয়েছিলেন বলেও আমরা শুনেছি। ইতিমধ্যেই হাসপাতালে যোগাযোগ করে আমরা সেই সব তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছি।’’
তদন্তকারীদের দাবি, শুক্রবার সকালে রুটিন শারীরিক পরীক্ষার পরে শাহজাহানকে বসিয়ে যখন জেরা শুরু হয়েছিল তখন তিনি দাবি করেন ৫ জানুয়ারির হামলার সঙ্গে তাঁর যোগ নেই। ইডির তদন্তকারীরা তাঁর বাড়িতে এসেছেন জানার পরে গ্রামবাসীরাই নাকি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সেখানে চলে আসেন। ইডির অভিযোগ ছিল, সে দিন শাহজাহানের দু’টি মোবাইলে বারবার ফোন করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।আদালত ইডি জানিয়েছে, সে দিন সেই সময়ে বাড়ির ভিতরেই ছিলেন শাহজাহান। তাঁদের অভিযোগ, বাড়িতে বসেই দু’টি মোবাইল থেকে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে অন্তত ২২টি ফোন করে শাহজাহান নিজের বাহিনীকে উত্তেজিত করে ইডির উপরে হামলায় উস্কানি দিয়েছিলেন। আবার শাহজাহানকে গ্রেফতার করে আদালতে তুলে ন্যাজাট থানার তরফেও আদালতে দাবি করাহয়েছে, তাঁর নির্দেশেই যে ওই হামলা হয়েছিল তা নাকি শাহজাহান স্বীকার করে নিয়েছেন।
সিআইডির একটি সূত্রের দাবি, সে দিন (৫ জানুয়ারি) শাহজাহান কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তা জানতে তাঁর দু’টি ফোনের ‘কল ডিটেলস’ খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে, সিআইডির হাতে ধৃত তৃণমূলের আর এক নেতা আমির আলি গাজির সঙ্গে সে দিন সকালে কথা বলেছিলেন শাহজাহান। পাশাপাশি শাহজাহান তাঁর ভাই ও আর এক অভিযুক্ত সিরাজের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন। তাঁর খোঁজ চলছে বলে সূত্রের দাবি। সন্দেশখালির একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা শাহজাহানের সঙ্গে তাঁর ভাই সিরাজের বিরুদ্ধেও জমিকেড়ে নেওয়া, মারধর করার মতো অভিযোগ তুলেছেন।
সিআইডি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে এবং শুক্রবার সকালে শাহজাহান খাবার খেতে নিমরাজি ছিলেন। তার পরে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করেন। সিআইডি জানিয়েছে, জেলা পুলিশের হাত থেকে ওই মামলার তদন্তের ভার নেওয়ার পরে তা তুলে দেওয়া হয়েছিল সিআইডির বারাসাত জেলার তদন্তকারীদের হাতে। কিন্তু ওই শাখার হাতে প্রচুর মামলা জমে থাকায় বৃহস্পতিবার তা তুলে দেওয়া হয়েছে সিআইডির বিধাননগর শাখার হাতে। বিধাননগর শাখার এক মহিলা অফিসারকে তদন্তকারী অফিসার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy