Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জোর করেই হাসপাতালে, বাড়ি ফিরতে ব্যাকুল বুদ্ধ

দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসায় এখন অনেকটাই স্থিতিশীল ৭৫ বছরের বুদ্ধবাবু। ফুসফুসে সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়া আছে।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল।—ফাইল চিত্র।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই স্থিতিশীল।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৯
Share: Save:

দলের নেতারা অজস্র বার বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। তাঁর বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিওপিডি-র রোগীর জন্য পাম অ্যাভিনিউয়ের ওই ঘুপচি ফ্ল্যাট কোনও ভাবেই স্বাস্থ্যকর নয়। স্বাস্থ্যের জন্যই ঠিকানা বদলানো উচিত তাঁর। কিন্তু প্রতি বারই পত্রপাঠ অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।

এর পরের লড়াই তাঁকে হাসপাতালে যেতে রাজি করানোর। কৃত্রিম অক্সিজেন নিয়ে দিনের পর দিন চলছে, সঙ্গে আছে আরও ওষুধ। ভিতরে শরীর যে ভাবে ভাঙছে, সেই অনুপাতে রক্ত তৈরি হচ্ছে না। শরীরে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের অনুপাতও গোলমাল করছে। পরিবারের লোক, দলের সহকর্মী— কারও আর্জিতেই তিনি সাড়া দেননি। হাসপাতালে তিনি যাবেন না।

শেষ পর্যন্ত শুক্রবার শারীরিক কষ্টে আচ্ছন্ন হয়ে পড়া বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাধা পরাস্ত হওয়ায় আপাতত হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন চিকিৎসকেরা! দক্ষিণ কলকাতার হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টার চিকিৎসায় এখন অনেকটাই স্থিতিশীল ৭৫ বছরের বুদ্ধবাবু। ফুসফুসে সংক্রমণ এবং নিউমোনিয়া আছে। তবে তিন ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। তার ফলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়েছে, স্থিতিশীল হয়েছে রক্তচাপও। প্রথমে অরুচি থাকলেও শনিবার দুপুর থেকে নিজেই খাচ্ছেন, কথা বলছেন। তাঁর মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসক কৌশিক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘উনি নিজেই ওঁর সমস্যাগুলোর কথা আমাদের ভাল ভাবে বলতে পারছেন। তাতে চিকিৎসায় সুবিধা হচ্ছে। কিছু সময় অন্তর ওঁকে বাইপ্যাপ দেওয়া হচ্ছে, যাতে বাড়তি কার্বন ডাই অক্সাইড বার করে দেওয়া যায়।’’ প্রসঙ্গত, এই ব্যবস্থায় মুখে মাস্ক লাগিয়ে কাজ সেরে নেওয়া যায়। গলায় পাইপ ঢোকাতে হয় না।

শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলেও বুদ্ধবাবুর মন অবশ্য বদলায়নি। তিনি কেবলই বলছেন, বাড়ি যেতে চান। এমন কিছু তাঁর হয়নি, যার জন্য হাসপাতালে এ ভাবে থাকতে হবে— এমনই মনোভাব তাঁর। চিকিৎসকেরা অবশ্য জানিয়েছেন, আপাতত কয়েক দিন হাসপাতালের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক সিপিএম নেতার মন্তব্য, ‘‘যে ধরনের খাওয়া-দাওয়া করলে রক্ত তৈরি হতে পারে শরীরে, সেটা উনি করেন না। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও দরকার আছে। হাসপাতালে থাকলে এ সব কাজে সুবিধা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যত দিন প্রয়োজন মনে করবেন, তত দিনই রাখবেন।’’

সিপিএমের নেতা ও চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম এবং বুদ্ধবাবুর আরও এক চিকিৎসক যাতে তাঁর চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকতে পারেন, সে দিকে খেয়াল রেখেই দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতাল বেছে নেওয়া হয়েছে। মাঝে এক বার সেখানেই সিটি স্ক্যান করাতে গিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। আচ্ছন্ন হয়ে পড়ার আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে রক্ত দেওয়ার জন্য ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার যুক্তিতেই রাজি করিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।

দিনভর হাসপাতালে বুদ্ধবাবুর শরীরের খোঁজ নিতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের সোমেন মিত্র ও প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিজেপির মুকুল রায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়েরা। ছিলেন মহম্মদ সেলিম। সন্ধ্যায় দলের আরও এক চিকিৎসক-নেতা রামচন্দ্র ডোমকে নিয়ে হাসপাতালে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Buddhadeb Bhattacharya Health Woodlands Multispeciality Hospital Limited
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy