ফুলের বাগানে নেমে চলছে ছবি তোলা। ছবি: কিংশুক আইচ
নদীর চরে যেন ফুলের উপত্যকা। যত দূর চোখ যায় রংবেঙের, নানা দেশি-বিদেশি ফুলের বাহার। তার টানেই ভিড় আছড়ে পড়ছে চরে। পর্যটনের সম্ভাবনা বাড়ছে, ফুলচাষিদের আয়ের পথ খুলছে।
সঙ্গে রয়েছে বিপদও। অনিয়ন্ত্রিত ভিড়, নিজস্বী তোলার হিড়িকে ফুলের বনই যে তছনছ হতে বসেছে!
হাওড়া-মেদিনীপুর রেলপথে পড়ে ক্ষীরাই স্টেশন। রেললাইন ধরে মেদিনীপুরের দিকে মিনিট কুড়ির হাঁটাপথে কংসাবতী নদীর উপরে রেলসেতু। এই সেতুর দু’দিকেই বিস্তীর্ণ বাগিচা। দক্ষিণ দিকে রঙিন ফুলের চাষ। আর উত্তরে বেশি সাদা চন্দ্রমল্লিকা। সাত দিনই ভিড় লেগে থাকে। শনি-রবি ও ছুটির দিনে ভিড় পাঁচ হাজার ছাড়ায়। মেদিনীপুরের তিন জেলা তো বটেই, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা, বর্ধমান, এমনকি দার্জিলিং থেকেও পর্যটকেরা আসছেন। ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি তো হাজার দশেক লোক এসেছিল। অনেকে আসছেন ট্রেনে, অনেকে গাড়ি নিয়ে।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে জাহাজবন্দি ২৬০০, ফিরতে চেয়ে ফেসবুকে আর্জি বাঙালি যুবকের
ডিসেম্বর থেকে মার্চ, এই ক’মাস ফুলের মরসুম। ফুলের বেশিরভাগটাই যায় হাওড়ার মল্লিকঘাটে, কোলাঘাট আর পাঁশকুড়ার ফুলবাজারে। স্থানীয় দোকান্ডা গ্রামের কৃষকেরা জানাচ্ছেন, কংসাবতীর চরে পঞ্চাশ বছরেরও বেশি তাঁরা ফুলের চাষ করছেন। তবে আগে এখানকার ফুলের এত নামডাক ছিল না। এখন সমাজ মাধ্যমের দৌলতে ফুলের ছবি ছড়িয়ে পড়ছে। আর তাতেই পর্যটকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। দোকান্ডার চাষি মনোরঞ্জন জানা বলছিলেন, ‘‘কয়েদিন আগেই লন্ডন থেকেও একজন এসেছিলেন। বাগান ঘুরে দেখে ফুলও কিনে নিয়ে গিয়েছেন।’’
ফেসবুকের এক ট্রাভেল গ্রুপে খবর পেয়ে ক’দিন আগে মা তাপসী গুপ্তকে নিয়ে কলকাতার চিকিৎসক অর্চিতা গুপ্ত গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন দোকান্ডায়। ছবি তুলে মোবাইলের মেমোরি কার্ড প্রায় ভরে গিয়েছে। আরও তিন চিকিৎসক মৃত্যুঞ্জয় হালদার, ভাস্কর সাহা, চঞ্চল দোলইরা আবার এসেছিলেন বন্ধুদের মুখে খবর পেয়ে। মৃত্যুঞ্জয় বলছিলেন, ‘‘কলকাতার এত কাছে অনবদ্য একটা জায়গা।’’ কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থা ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’-তে প্যাকেজ টুরও করাচ্ছে দোকান্ডায়।
পর্যটকের আনাগোনায় আশপাশে গুটিকতক খাবারের দোকান বসেছে। চলছে টোটো। ফুলও বিক্রি হচ্ছে ভালই। চাষিরা জানালেন, পর্যটকেরা গড়ে ৫০ টাকার ফুল কেনেনই। আর ২৩ ও ২৬ জানুয়ারি প্রায় দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সব মিলিয়ে বাড়ছে পর্যটন সম্ভাবনা। পানীয় জল, শৌচাগার-সহ বিভিন্ন পরিকাঠামোর দাবি উঠছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলছেন, ‘‘যদি রাস্তাঘাট-সহ অন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার জায়গা পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করা হবে।’’
চাষিরা অবশ্য এ সবে প্রমাদও গুনছেন। কারণ, পর্যটকদের অনেকেই হুড়োহুড়ি করে বাগানে ঢুকে নিজস্বী তুলছেন। তাতে গাছ ভাঙছে, নুইয়ে পড়ছে ফুল। জমির সরু আল দিয়ে হাঁটতে গিয়ে অনেকে আবার ফুলগাছের ওপর গিয়ে পড়ছেন। সব সময় তো চাষিদের পক্ষা পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। ফুলচাষি অশোক দাস বলেন, ‘‘১০ কাঠা জমিতে অ্যাস্টর চাষ করেছি। কিন্তু পর্যটকদের ছবি তোলার দাপটে প্রায় অর্ধেক গাছ ভেঙে গিয়েছে।’’ জেলা উদ্যান পালন দফতরের উপ অধিকর্তা মানসরঞ্জন ভট্টাচার্য জানালেন, ফুলচাষে ক্ষতি হলে খরচের ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হুজুগের ভিড় থেকে ফুলগাছ বাঁচবে কী করে? আপাতত তার কোনও জবাব নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy