ফাইল চিত্র।
সন্ত্রাস-অশান্তি এখন অতীত। বদলের জঙ্গলমহলে প্রসার ঘটেছে পর্যটনের। দলে দলে লোকে বেড়াতে আসছেন। এমন আবহে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ-কর্তাদের এসকর্ট গাড়ি ও নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হল। জেলা পুলিশের তরফে সোমবার এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করেছেন পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা। এ দিন থেকেই ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।
পুলিশ সুপার মানছেন, ‘‘আপাতত আমার ও অন্য পুলিশ আধিকারিকদের এসকর্ট গাড়ির সংখ্যা কমানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে।’’ পুলিশের এক সূত্রে খবর, মাওবাদী সন্ত্রাস পর্বে তৎকালীন শাসকদলের নেতা, পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকদের নিরাপত্তায় কয়েকশো পুলিশকর্মীকে ব্যবহার করা হত। সরকার বদলালেও নিরাপত্তার বহর কমেনি। এতদিন এই জেলায় পুলিশ-প্রশাসনের ২৯ জন আধিকারিক, ১১ জন বিচারক, শাসকদলের ২০ জন নেতা, বিজেপি সাংসদ, এক প্রাক্তন বাম বিধায়ক ও এক কোচিং সেন্টারের মালিক-সহ মোট ৬৩ জনকে নিরাপত্তা দিতে বহাল ছিলেন ৩২৪ জন সশস্ত্র পুলিশকর্মী। বিরোধীদের মধ্যে ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রম কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেলেও দু’জন রাজ্য পুলিশকর্মীও তাঁর নিরাপত্তায় রয়েছে। এ ছাড়া বিনপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক দিবাকর হাঁসদার নিরাপত্তায় একজন পুলিশকর্মী বহাল রয়েছেন। সব মিলিয়ে এই নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা অর্ধেক করে অতিরিক্তদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা-সহ পুলিশের বিভাগীয় নানা কাজে ব্যবহার করা হবে।
জেলায় গত কয়েক মাসে মাওবাদী নামাঙ্কিত ভুয়ো পোস্টার মিলেছে। কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে পুলিশের হোমগার্ডও। তবে সামগ্রিক ভাবে জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষণ, ঝাড়গ্রামে শান্তির পরিবেশ বজায় থাকায় নিরাপত্তার বোঝা কমানোই যায়। প্রথম ধাপে পুলিশ সুপার, দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিন জন এসডিপিও, পাঁচ জন ডিএসপির নিরাপত্তারক্ষী ও এসকর্ট গাড়ির সংখ্যা কমছে। এতদিন পুলিশ সুপারের সঙ্গে ২ বা ৩টি এসকর্ট গাড়িতে থাকতেন ১৩-১৪ জন সশস্ত্র পুলিশ কর্মী। পুলিশ সুপারের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে আরও ৩-৪ জন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন। এ দিন থেকেই সংখ্যাটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। একটি এসকর্ট গাড়ি-সহ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন সাকুল্যে ৭-৮জন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারদের জন্য দু’টির জায়গায় একটি এসকর্ট গাড়ি বরাদ্দ হচ্ছে। আর ১৪-র বদলে সশস্ত্র রক্ষী কমে হয়েছে ৭ জন।
একই ভাবে এসডিপিও পদমর্যাদার অফিসারদের একটি এসকর্ট গাড়িতে এতদিন ৬-৮ জন সশস্ত্র রক্ষী থাকতেন। এ ছাড়াও ৩ জন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন। তবে এ দিন থেকে একটি এসকর্ট গাড়িতে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন ৫-৬ জন। ডিএসপিদের এসকর্ট গাড়ি থাকে না। তাঁরা পেতেন ৩ জন নিরাপত্তারক্ষী। সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ২ জন।
শাসকদলের একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিরাও ২ থেকে ৫ জন নিরাপত্তারক্ষী পান। কয়েকজনের বাড়িতে আলাদা সশস্ত্র নাইট গার্ডও রয়েছে। পরের ধাপে কি সেই নিরাপত্তার বহরও কমবে? এ প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর খোঁচা, ‘‘স্বজনপোষণ আর দুর্নীতি করে তৃণমূলের নেতা-জনপ্রতিনিধিরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন। পুলিশের এই সিদ্ধান্তে আগামী দিনে শাসকদলের নেতা-জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা রক্ষীর বহর কমলে ওদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে।’’ জেলা তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদার পাল্টা বক্তব্য, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করছে। এতে সুবিধাই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy