শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর মেরামতির কাজ। —ফাইল চিত্র।
১ নভেম্বর, বুধবার থেকে শুরু হচ্ছে দ্বিতীয় হুগলি সেতু (বিদ্যাসাগর সেতু) মেরামতির কাজ। আট মাস ধরে ধাপে ধাপে চলবে এই কাজ। সে সময় নিয়ন্ত্রিত থাকবে যান চলাচল। সেই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। এ বার কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের তরফেও কিছু শর্ত দিয়ে নির্দেশিকা জারি করা হল।
হাওড়া থেকে কলকাতায় যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হল দ্বিতীয় হুগলি সেতু। এই সেতু মেরামতির কাজের কারণে যানজট তৈরি হতে পারে। বিঘ্নিত হতে পারে যাতায়াত ব্যবস্থা। তা ছাড়া এই রাস্তা দিয়েই রোজ প্রশাসনিক দফতর নবান্নে যাতায়াত করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সেতুর একাংশে উচ্চ নিরাপত্তা মোতায়েন থাকে। দিল্লি ও বম্বে রোড দিয়ে দ্রুত কলকাতায় প্রবেশ করতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই সেতুটি ব্যবহার করা হয়। তাই কাজ শুরু আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখেছেন পিডব্লুডি, হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশন (এইচআরবিসি), কলকাতা এবং হাওড়া ট্রাফিক পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা। এই নিয়ে গত ১০ অক্টোবর বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। সেতু মেরামতির কাজে কী কী বাধা আসতে পারে, তা-ই নিয়ে আলোচনা হয়। তার পরেই যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে নির্দেশিকা জারি করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার। এবার কাজ শেষ করার কিছু শর্ত দিল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ডেপুটি কমিশনার। এইচআরবিসির সচিবের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে এই নির্দেশিকা।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে সেতু মেরামতির প্রাথমিক কাজ শুরু হবে। সেতুর দুই প্রান্তের কাজ আগে শেষ করতে হবে। এর পর হাওড়াগামী দু’টি লেন বন্ধ করে মূল কাজ চলবে। সেই কাজ শেষ হলে কলকাতাগামী দু’টি লেন বন্ধ করে কাজ চলবে। কাজ শুরু আগে হাওড়া পুলিশকে বিষয়টি জানাতে হবে। হাওড়া, কলকাতার ট্রাফিক গার্ডের ওসিদের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করতে হবে। মেরামতির কাজের বিষয়ে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ফ্লেক্স, বোর্ড টাঙাতে হবে। কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হবে। তাঁদের হেলমেট, জ্যাকেট দিতে হবে। কাজের সময় সেতুতে স্বেচ্ছাসেবী মোতায়েন করতে হবে। কাজ শেষ হলে নির্মাণের জিনিসপত্র রাস্তায় ফেলে রাখা যাবে না। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য সংবাদ মাধ্যমে ট্রাফিক সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করতে হবে।
দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের কাজ না হওয়ায় দ্বিতীয় হুগলি সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি হয়ে পড়েছে। সামগ্রিক সংস্কারের কাজ করতে গেলে দীর্ঘ সময় সেতুটি বন্ধ রাখতে হবে। যা বাস্তবিক পক্ষে সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিক আলোচনায় উঠে এসেছে, ছয় লেনের সেতুর যে অংশে কাজ হবে, তার দুটি লেন বন্ধ রেখে পাশের একটি অংশ খোলা রাখা হবে যান চলাচলের জন্য। ‘হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স’ (এইচআরবিসি) -এর তত্ত্বাবধানে জার্মানির একটি সংস্থা এই সেতুর নকশা তৈরি করেছিল। তাদের নজরদারিতেই সংস্কারের কাজ হবে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানান, সেতুটির বিষয়ে যাবতীয় তথ্য ওই সংস্থার কাছে রয়েছে। তাই সংস্কারের ক্ষেত্রেও তাদের উপরেই ভরসা রাখছে রাজ্য সরকার। মোট ১৫২টি কেব্ল দিয়ে এই সেতুটি ধরে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টির বেশি কেব্লের অবস্থা তুলনামূলক ভাবে বেশি খারাপ। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংস্কারের এই পর্যায়ে সব ক’টি কেব্লেরও সংস্কার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে সংস্কারের এই কাজে প্রায় ১৬৩ কোটি টাকা খরচ হতে পারে বলেই জানা যাচ্ছে। সেটি বরাদ্দ করা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই প্রশাসনের অন্দরে। তবে প্রয়োজনে ওই আর্থিক বরাদ্দ বাড়তেও পারে। সংস্কারের কাজের জন্য ৪ থেকে ৬ মাস সময় ধার্য করা হয়েছে। ১৯৯২ সালের অক্টোবর মাসে তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর উপস্থিতিতে সেতুটির উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাও। তার পর প্রায় ৩১ বছর হয়ে গেলেও সে ভাবে সংস্কারের মুখ দেখেনি দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সম্প্রতি সেতুটির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হয়। তার পরেই সেতু সংস্কারের কাজে হাত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy