Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বৃদ্ধের আসন পাল্টে গুনাগার ইন্ডিগোর

রাই জানান, প্রথমে ফেসবুক পোস্ট এবং পরে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে ফুল পাঠিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিল ইন্ডিগো। রাই রাজি হননি। সমালোচনার পাহাড় জমতে থাকে ফেসবুকে। দিন দুয়েক আগে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা ফেরত দিয়েছে বিমান সংস্থা। সঙ্গে ভারতে এক বার সফরের বিনা পয়সার টিকিট।

দাদু-নাতনি: অজিত মিত্র ও রাই সেনগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

দাদু-নাতনি: অজিত মিত্র ও রাই সেনগুপ্ত। —নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৮
Share: Save:

দিল্লি-কলকাতা উড়ানে ৮৮ বছরের অজিত মিত্রের আসন বদলে দিয়েছিল ইন্ডিগো। তার জন্য অজিতবাবুর যে অসুবিধা হয়েছিল, সে-কথা ফেসবুকে তুলে দেন অজিতবাবুর নাতনি রাই সেনগুপ্ত। তার পরে অজিতবাবুকে বিনা পয়সায় তাদের বিমানে এক বার সফরের টিকিট পাঠিয়েছে ইন্ডিগো। ফোন করে ক্ষমাও চেয়েছে।

রাইয়ের পোস্ট দেখে ইন্ডিগোর বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দেন অনেকে। কেউ বলেন, ‘‘লজ্জাজনক।’’ কেউ বলেন, ‘আর ইন্ডিগোয় চড়ব না।’’ সেই পোস্টে ‘লাইক’ পড়ে দু’হাজারেরও বেশি। শেয়ার করেন ১৩৬৫ জন। প্রশ্ন উঠছে, সোশ্যাল মিডিয়ার চাপেই কি উড়ান সংস্থা ক্ষোভ প্রশমনের রাস্তা নিয়ে ওই যাত্রীকে টিকিট পাঠাল?

মানতে নারাজ ইন্ডিগো। যদিও ৫ মার্চের ওই ঘটনা নিয়ে রাই ফেসবুকে পোস্ট করার পরে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ারের স্রোত শুরু হতেই ইন্ডিগো নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে রাইয়ের ওয়ালে যোগাযোগ করে। তারা জানায়, ৫ মার্চ যে-বিমানে অজিতবাবু ছিলেন, তার প্রথম সারির আসনের পাশেই ইমার্জেন্সি জানলা। বিমান পরিবহণের নিয়ম অনুযায়ী অশক্ত বৃদ্ধবৃদ্ধাদের ওই সারিতে বসতে দেওয়া হয় না। কেননা জরুরি অবস্থায় ওই ইমার্জেন্সি জানলা দিয়ে যাত্রীদের বার করার ক্ষেত্রে বৃদ্ধবৃদ্ধারা সাহায্য করতে পারবেন না।

রাই জানান, অজিতবাবু একা দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরছিলেন। হাঁটুতে ব্যথা। পা ছড়ানোর জায়গা দরকার ছিল বলেই প্রথম সারির টিকিট কাটা হয়। শৌচালয়ে যেতে যাতে কষ্ট না-হয়, মাথায় ছিল সেটাও। কিন্তু সেই আসনে বসতে না-দিয়ে তাঁকে দ্বিতীয় সারিতে জানলার ধারের আসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আড়াই ঘণ্টার উড়ানে দুই সহযাত্রীকে টপকে তাঁর আর শৌচালয়ে যাওয়া হয়নি। হুইলচেয়ারে নেমে মাথা নিচু করে ট্র্যাঙ্গুলার পার্কের বাড়িতে চলে যান।

ফোনে রাই বলেন, ‘‘আমরা যখন নেটে দাদুর টিকিট কেটে, অতিরিক্ত ৬০০ টাকা দিয়ে সিট বুক করেছিলাম, তখনই তো ইন্ডিগো জানাতে পারত যে, হুইলচেয়ারের যাত্রীদের ওই আসনে বসতে দেওয়া হবে না।’’

ইন্ডিগোর যুক্তি, কোন রুটে কোন বিমান যাবে, তা ঠিক হয় শেষ মুহূর্তে। ওই বিমান যে ৫ মার্চ দিল্লি-কলকাতা রুটে যাবে, তা ঠিক হয় সে-দিন সকালেই। রাইয়ের বক্তব্য, তাঁর দাদুকে সেখান থেকে সরিয়ে জানলার পাশের আসন না-দিয়ে করিডরের পাশের আসন (‘আইল’) দিতে পারত। সে-ক্ষেত্রে শৌচালয়ে যেতে অজিতবাবুর সমস্যা হত না। কেন সেটা দেওয়া হয়নি? এর কোনও সদুত্তর নেই ইন্ডিগোর কাছে।

রাই জানান, প্রথমে ফেসবুক পোস্ট এবং পরে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে ফুল পাঠিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে চেয়েছিল ইন্ডিগো। রাই রাজি হননি। সমালোচনার পাহাড় জমতে থাকে ফেসবুকে। দিন দুয়েক আগে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা ফেরত দিয়েছে বিমান সংস্থা। সঙ্গে ভারতে এক বার সফরের বিনা পয়সার টিকিট।

সোশ্যাল মিডিয়ার চাপে পড়ে আগে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে কি? বলতে পারেনি বিমান সংস্থা। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার চাপ যে তাঁদের ক্ষতিপূরণ পেতে সাহায্য করেছে, তা স্বীকার করছেন রাই।

অন্য বিষয়গুলি:

Grandfather IndiGo ইন্ডিগো
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE