রবিবার শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন বন্ধ থাকায় দুর্দশা বেড়েছে যাত্রীদের। —নিজস্ব চিত্র।
টানা দু’সপ্তাহ ধরে শিয়ালদহ মেন লাইনে ভোগান্তির শিকার ট্রেন যাত্রীরা। রবিবারও তার অন্যথা হল না। রবিবার এই লাইনে ১৮ জোড়া ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, ৩ জোড়া ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করেছেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে, রবিবার দিনভর বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনে লোকাল ট্রেন পরিষেবা কার্যত বন্ধ। দুইয়ে মিলিয়ে ছুটির দিন হলেও দুর্ভোগে যাত্রীরা। সোমবার থেকে পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
মাস ছয়েকের অপেক্ষার পর দক্ষিণ ভারতের এক অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞের কলকাতা চেম্বারে রবিবার অ্যাপয়েনমেন্ট পেয়েছিলেন নদিয়ার কালীনারায়ণপুরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দম্পতি সুধন্য চক্রবর্তী এবং তাঁর স্ত্রী। রবিবার সময় মতো স্টেশনে পৌঁছে শুনলেন, বাতিল নির্দিষ্ট ট্রেন। দীর্ঘ দিন ধরে মেরুদণ্ডের ‘স্লিপডিস্ক’-জনিত সমস্যায় ভুগছেন সত্তরোর্ধ্ব সুধন্য। সব মিলিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার পথ সড়কপথে যাওয়া তাঁর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। ট্রেন বন্ধ থাকায় চিকিৎসকের কাছে পৌঁছতে পারেননি তিনি।
নৈহাটি স্টেশনের রেল সেতু রক্ষণাবেক্ষণের কাজের জন্য শিয়ালদহ মেন লাইনে আগেই ২৫ মার্চ শনিবার রাত ১০টা থেকে ২৬ মার্চ রবিবার রাত ৯টা পর্যন্ত মোট ২১ জোড়া ট্রেন বাতিল করেছিলেন পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। তবে শুধু মাত্র রবিবারই বাতিল ১৮ জোড়া ট্রেন। বাতিল ট্রেনের তালিকায় শিয়ালদহ-নৈহাটি ৫ জোড়া, শিয়ালদহ-কল্যাণী সীমান্ত ৪ জোড়া, শিয়ালদহ-রানাঘাট ৩ জোড়া, শিয়ালদহ-ব্যারাকপুর ২ জোড়া। এ ছাড়াও ১ জোড়া করে ট্রেন বাতিল থাকবে শিয়ালদহ-শান্তিপুর, শিয়ালদহ-কৃষ্ণনগর, শিয়ালদহ-গেদে, দমদম-ব্যারাকপুর লাইনে।
বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনেই লোকাল ট্রেন কার্যত বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সুমিত শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘সকলের কাছে স্মার্টফোন নেই। তাই ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে কি না, তা জানতে পারছেন না তাঁরা। সারা বছরই ভোগান্তি লেগে রয়েছে। আজ মেন লাইন, তো কাল কর্ডে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা নিত্যদিন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দুর্গাপুজোর সময় মাসখানেক ধরে মেন লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বছরখানেক ধরেই নানা পর্যায়ে মেন ও কর্ড লাইনে বার বার কাজ চলেছে বলে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করা হচ্ছে। কখনও ব্লক নেওয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ট্রেন বন্ধ থাকছে।’’
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার রাত ১২টা পর্যন্ত (২৬ মার্চ দিনভর) বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের সমস্ত লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। যাত্রিসুরক্ষার কথা মাথায় রেখেই এই কাজ করছে রেল। বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের বেলানগর স্টেশনে ইলেকট্রনিক ইন্টারলকিং বদলের কাজ করা হবে। সে কারণে রবিবার ২৩ ঘণ্টার জন্য ট্রাফিক ও পাওয়ার ব্লক করতে হবে। ফলে রবিবার প্রায় সারা দিন বর্ধমান-হাওড়া কর্ড লাইনের ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হবে। এই কাজের জন্য রেলের পক্ষ থেকে কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনেরও রুট বদল করা হয়েছে। পাশাপাশি, কর্ড লাইনে চলাচল করে, এমন কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনকে মেন লাইন দিয়ে অর্থাৎ ব্যান্ডেল হয়ে চলাচল করানো হবে রবিবার।’’
রেল সূত্রে খবর, আপ ও ডাউন হাওড়া-ধানবাদ কোলফিল্ড এক্সপ্রেস, হাওড়া-দেহরাদূন কুম্ভ এক্সপ্রেস, হাওড়া-মুম্বই এক্সপ্রেস, যেগুলির ২৬ মার্চ যাত্রা শুরু করার কথা, সেগুলি হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল হয়ে যাবে। গুয়াহাটি-হাওড়া সরাইঘাট এক্সপ্রেস, হাওড়া–ইলাহাবাদ বিভূতি এক্সপ্রেস, যেগুলির ২৫ মার্চ যাত্রা শুরু করার কথা, সেগুলিও ব্যান্ডেল হয়ে যাবে।
রবিবার সরকারি চাকরির পরীক্ষা থাকায় নির্ধারিত সময়ের আগে মেট্রো চলাচল শুরু হয়েছে। কর্ডে পরিষেবা বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন সরকারি চাকরির পরীক্ষার্থী পরিমল সাহা। তিনি বলেন, ‘‘গাড়ি ভাড়া করে আমাকে বর্ধমান আসতে হল। কারণ স্পেশাল ট্রেন পরিষেবার উপর ভরসা রেখে ঠিক সময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানো যাবে না।’’ যদিও রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে রবিবার ১০ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে এই শাখায়। কর্ড লাইনের বর্ধমান ও ডানকুনির মধ্যে ৮ জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। বর্ধমান থেকে প্রথম স্পেশাল ট্রেন ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে ও শেষ স্পেশাল ট্রেন সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে ছাড়বে। ডানকুনি থেকে প্রথম স্পেশাল ট্রেন ৭টা ২৫ মিনিটে ও শেষ স্পেশাল লোকাল রাত সাড়ে ৮টায় ছাড়বে। বর্ধমান থেকে সকাল ৮টা ১০ মিনিট ও ৯টা ১৫ মিনিটে এবং হাওড়া থেকে দুপুর ২টো ৪৫ মিনিট ও ৩টে ৩৫ মিনিটে ছাড়বে স্পেশাল লোকালগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy