বৃহস্পতিবার সিউড়ি আদালতে কার্তিকমোহন ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।
অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরা আদালতে হাজির থাকলেও সাক্ষ্যদানে বারবার গরহাজির থাকছেন তাঁরাই। বধূ নির্যাতন মামলায় এ বার তাই সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূ এবং তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল সিউড়ি আদালত।
বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দেন সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়। সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দিষ্ট কোনও কারণ ছাড়াই সাক্ষ্যদানে ওঁরা বারবার অনুপস্থিত থাকছেন। তাই বিচারক এই নির্দেশ দিয়েছেন।’’ এর মধ্যে নির্যাতিতার স্বামীর বিরুদ্ধে পরোয়ানাটি জামিন অযোগ্য। নির্যাতিতা এবং তাঁর স্বামী অবশ্য দাবি করেছেন, অসুস্থতার কারণেই আদালতে হাজির হতে পারেননি।
প্রসঙ্গত, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে বোমাবাজিতে অভিযুক্ত এক বিজেপি সমর্থকের খোঁজে সাত্তোরের এক বধূকেকে তাঁর বাপের বাড়ি বুদবুদের কলমডাঙায় গিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বর্বরোচিত অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ উঠেছিল। এমন ঘটনার কথা শুনে শিউরে উঠেছিলেন সকলে। তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। আদালতের নির্দেশে ঘটনার তদন্তভার নেয় সিআইডি। নির্যাতিতার স্বামী ও বুদেবুদে দু’টি পৃথক মামলা রুজু হয়। এসডিপিও (বোলপুর) অম্লানকুসুম ঘোষ, সিআই (বোলপুর) চন্দ্রশেখর দাস, ওসি (এসওজি) কার্তিকমোহন ঘোষ, ইলামবাজারের তৎকালীন ওসি শেখ মহম্মদ আলি-সহ পুলিশকর্মী এবং পাড়ুই এলাকার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নাম ছিল তাতে। যদিও প্রথম থেকেই সে দিনের অভিযানে পুলিশের বাইরে অন্য কেউ ছিলেন না বলেই দাবি করে আসছেন জেলা পুলিশের কর্তারা।
এ দিকে, গত ১৭ এপ্রিল তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি আদালতে চার্জশিট দেয়। তাতে কার্তিকমোহনবাবু, এসওজি-র দুই কনস্টেবল দীপক বাউড়ি, কাশীনাথ দাস এবং ইলামবাজার থানার এক মহিলা কনস্টেবল আল্পনা লোহারের নাম রয়েছে। সিউড়ি সিজেএম আদালতে অভিযুক্ত চার পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে গত ৬ মে চার্জও গঠন হয়ে যায়। মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন ছিল ১৮ মে। সে দিন আদালতে উপস্থিত থাকলেও সাক্ষ্যদানে বিরত ছিলেন নির্যাতিতার স্বামী।
ঘটনা হল, এর পরেও একাধিক বার সাক্ষগ্রহণের দিন আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৪ অগস্ট নির্যাতিতার স্বামীর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক। পরে মুচলেকা দিয়ে পরবর্তী দিন চান নির্যাতিতার স্বামী। এর পরে উভয়ের সক্ষ্যদানের জন্য বৃহস্পতিবারের দিনটি নির্দিষ্ট করেছিল আদালত। এ দিন সেই মতো আদালতে উপস্থিত ছিলেন কার্তিকমোহন ঘোষ ও অন্য তিন অভিযুক্ত পুলিশকর্মী। কিন্তু, এ দিনও অভিযোগকারী এবং ঘটনার মূল সাক্ষী আদালতে অনুপস্থিত ছিলে। সে কথা প্রথমেই বিচারকের নজরে আনেন অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবীরা। বিচারক সরকারি আইনজীবী কুন্তলবাবুর কাছে জানতে চান, কী কারণে সাক্ষীরা আদালতে অনুপস্থিত। সরকারি আইনজাবী বিচারককে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কেন ওঁরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না, এ ব্যাপারে তাঁর কাছে কোনও তথ্য নেই। এর পরেই ওই নির্দেশ দেন ক্ষুব্ধ সিজেএম।
বারবার এমনটা হচ্ছে কেন? এ ক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়াকে পরোক্ষে বন্ধ রাখার চেষ্টারই অভিযোগ উঠছে নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম বিচার প্রক্রিয়াটা চলুক। কিন্তু, সাক্ষীরা অনুপস্থিত থাকলে শুনানি হবে কী করে! এ ভাবে চলতে থাকলে বিচার প্রক্রিয়াই কিন্তু দীর্ঘায়িত হবে।’’ এ দিকে, নির্যাতিতার পরিবারের যুক্তি, সিআইডি-র যে চার্জশিটের উপর ভিত্তি করে মামলা চলছে, তার তদন্তই পক্ষপাতদুষ্ট। সে কারণে তাঁরা উচ্চ আদালতেও গিয়েছেন। এ দিন নির্যাতিতা নিজে জানান, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তাঁরা আদালতে যেতে পারেননি। আইনজীবীদের একাংশ অবশ্য জানাচ্ছেন, শুধু উচ্চ আদালতে নতুন করে তদন্ত করার দাবিই নয়, নিম্ন আদালত কেন অভিযুক্ত ওসি কার্তিকমোহন ঘোষকে জামিন দিয়েছে, তার বিরুদ্ধেও মামলা করেছে নির্যাতিতা পরিবার। নির্যাতিতাদের গরহাজির থাকার নেপথ্যে ওই দুই মামলাও থাকতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশের অনুমান। তবে, আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পরে নির্যাতিতার পরিবার কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy