বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে শান্তিনিকেতন। ফাইল চিত্র।
রবীন্দ্র জন্ম সার্ধ শতবর্ষের প্রাক্কালেই বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্ভাব্য তালিকায় তার উঠে আসা। তখনই শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যের গুরুত্ব ইউনেস্কোর দরবারে মেলে ধরতে উদ্যোগী হয় দেশের সংস্কৃতি মন্ত্রক। এক যুগেরও পরে সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার পথে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট) হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে শান্তিনিকেতন। আগামী সেপ্টেম্বরে সৌদি আরবের রিয়াধে বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় শান্তিনিকেতনের স্বীকৃতি ঘোষণা করা হবে বলে কেন্দ্রের সংস্কৃতিমন্ত্রী জি কিষান রেড্ডি বুধবার টুইটে জানান।
শান্তিনিকেতনের অন্তর্ভুক্ত বিশ্বভারতী তাঁর সারা জীবনের আহরণ, সঞ্চয়ের আধার, যার সুরক্ষার কাজ দেশবাসীর একটু বিশেষ যত্ন, আদর দাবি করে বলে গান্ধীকে চিঠি লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯০১ সালে স্কুল এবং ১৯২১এ বিশ্বভারতী শুরুর পরে ১৯৫১য় তা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। তবে শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতীর নাম ইদানীং নানা গোলমেলে কারণে উঠে আসে। সে-দিক দিয়ে এই সুসংবাদ খানিক ব্যতিক্রম। তবে শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতীতে রবীন্দ্র আদর্শের পরিচর্যা নিয়ে এ দিন কিছু বলতে চাননি ইতিহাসবিদ তথা রবীন্দ্র গবেষক উমা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, “যা-ই ঘটুক রবীন্দ্রনাথের আদর্শ কখনওই অসার হতে পারে না। শান্তিনিকেতন হল রবীন্দ্রনাথের সৌন্দর্যচেতনা ও বিশ্ববোধের ইতিহাস। একটি অসাধারণ সুন্দর ক্যাম্পাস। এই স্বীকৃতি তাই অত্যন্ত আনন্দের।”
মঙ্গলবার পঁচিশে বৈশাখ, রবীন্দ্রনাথের ১৬২ বছরের জন্মদিনেই জানা যায়, ইউনেস্কোর ওয়র্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা সংস্থা আইকোমস (ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মনুমেন্টস অ্যান্ড সাইটস)-এর তরফে শান্তিনিকেতনের নাম সুপারিশ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং দেশের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের হয়ে শান্তিনিকেতনের জন্য দাবিপত্রটি সংরক্ষণ স্থপতি আভা নারায়ণ লাম্বাহ এবং মনীশ চক্রবর্তী মিলে তৈরি করেছিলেন। মনীশ বলেন, “আইকোমসের পরীক্ষায় পাশের পরে শান্তিনিকেতনের স্বীকৃতিমোটামুটি নিশ্চিত।”
বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় এর আগে এ রাজ্যের দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন বা সুন্দরবন উঠে এসেছে। তবে সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং টয়ট্রেনের সঙ্গে নীলগিরি পাহাড় ও শিমলার রেলগাড়িও গৌরবের শরিক। আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে দুর্গাপুজোর স্বীকৃতি আসে ইউনেস্কোর অন্য একটি তালিকায়। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে নেওড়াভ্যালি জাতীয় পার্ক এবং বিষ্ণুপুরের মন্দিরও দীর্ঘদিন ঐতিহ্যস্থল হিসেবে ‘টেনটেটিভ’ (শর্তসাপেক্ষ) তালিকায় রয়েছে। সুপারিশ অনুযায়ী স্বীকৃতি এলে এ রাজ্যে শান্তিনিকেতনই একক ভাবে চূড়ান্ত ঐতিহ্য তালিকায় থাকবে। ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব জহর সরকার এবং পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তৎকালীন মহানির্দেশক গৌতম সেনগুপ্তের তত্ত্বাবধানে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য প্রথম বার মেলে ধরার চেষ্টা শুরু হয়। জহর বলছেন, “ইউনেস্কো তখন শান্তিনিকেতনের এলাকায় পুরসভা, পঞ্চায়েত, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার সুদ্ধ বিভিন্ন মালিকানার জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শান্তিনিকেতনের এলাকায় বেশ কিছু নির্মাণ কাজও ঐতিহ্য বিরোধী বলে ওঁরা আপত্তি করেন।” ২০২১ সালে নতুন করে আঁটঘাট বেঁধে শান্তিনিকেতনের জন্য আর্জি জানানো হয় বলে জানান স্থপতি আভা নারায়ণ। তিনি বলেন, “শুধুমাত্র বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন ৩৬ হেক্টর জমিই ঐতিহ্য ক্ষেত্র বলে চিহ্নিত করে আর্জি জানাই। ওই এলাকার জন্য সংসদের বিশ্বভারতী আইনের সুরক্ষা কবচের কথাও বলা হয়।”
বিশ্ব ঐতিহ্য ক্ষেত্রের স্বীকৃতি পেতে ইউনেস্কোর সামনে বিশেষ সর্বজনীন মূল্য তুলে ধরতে হয়। আভা বলেন, “শান্তিনিকেতন উপনিবেশ ধাঁচের নকল নয়। প্রাচ্যের আধুনিকতারহাত ধরেই রবীন্দ্রনাথ সারস্বত সমাজ ও সংস্কৃতি জগৎকে মেলান। এই বিষয়টিতে জোর দেওয়া হয়েছে।” রবীন্দ্র ভাবনা ও সাহিত্যের ছায়ায় শান্তিনিকেতনের ভবনে ভবনে স্থাপত্য, চিত্রকলা, গৃহসজ্জার সঙ্গে নিসর্গের বিন্যাসও স্থায়ী ঐতিহ্য স্মারক হিসাবে ইউনেস্কোর শর্ত পূরণ করছে। তবে গর্বের দিনে প্রবীণ আশ্রমিকদের দুশ্চিন্তাও কিন্তু কাজ করছে। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রপৌত্র, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর যেমন বলেন, “বিশ্বভারতী তার সম্মান কতটা রাখতে পারবে তা নিয়ে সংশয়ও থাকছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy