উত্তপ্ত সন্দেশখালি। —ফাইল চিত্র।
সন্দেশখালিতে এ বারে গোপন জবানবন্দি দেওয়া মহিলার বাড়িতেই হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই মহিলার তরফেই দাবি করা হয়েছে, পুলিশের পোশাক পরা কয়েক জন বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর করে। যদিও পুলিশ ও স্থানীয়দের পাল্টা দাবি, বড় কোনও ঘটনা চোখে পড়েনি। বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘‘আমরা নজর রাখছি, ওঁর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
এই মহিলার গোপন জবানবন্দির ভিত্তিতেই শনিবার শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করা হয়। তার পরপরই শিবু গ্রেফতার হয়। এ দিন সংবাদমাধ্যমের নজর এড়িয়ে বসিরহাট কোর্টে তোলা হলে বিচারক তার আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। শিবপ্রসাদ হাজরার গ্রেফতারিতে সন্দেশখালির বহু পাড়ায় স্থানীয়েরা মিষ্টি বিলি করেন। একই সঙ্গে একটি অংশের তরফে দাবি করা হয়, এ বারে শেখ শাহজাহানকেও গ্রেফতার করা হোক এবং পুরনো তৃণমূলের লোকজনকে সক্রিয় করতে উদ্যোগী হোক দল। জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার দাবি করে ১৯টির মধ্যে চারটি জায়গা থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হয়েছে রবিবার দুপুরের পর থেকে।
সুপ্রিম কোর্টে আগামিকাল, মঙ্গলবার বিচারপতি বি ভি নাগরত্নের বেঞ্চে সন্দেশখালি নিয়ে মামলা শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। আজ, সোমবার জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মার সন্দেশখালি যাওয়ার কথা। মঙ্গলবার যাওয়ার কথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাটের। এ দিন সেভ ডেমোক্র্যাসির চঞ্চল চক্রবর্তীর দাবি, “এখনও যদি অভিযোগকারিণীর বাড়িতে হামলা চলে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসন কী বলবেন!”
গত দেড় মাসের গোলমালে সন্দেশখালি নিয়ে যে পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ সামনে এসেছে, তা সামলাতে এখন সচেষ্ট তৃণমূল নেতৃত্ব। রবিবার থেকেই লিজ়ের টাকা দলীয় তহবিল থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা শুরু করেছে দল। মমতা থেকে পার্থ ভৌমিক, সুজিত বসুদের মতো নেতারা দাবি করছেন, যত অভিযোগ সংবাদমাধ্যমের সামনে করা হচ্ছে, তার সব পুলিশের খাতায় আসছে না। সিউড়ির প্রশাসনিক সভায় এ দিন মমতা বলেন, “কোনও মহিলা আজ পর্যন্ত কোনও অভিযোগ করেননি। আমি পুলিশকে বলেছি, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করো। আমাদের ব্লক সভাপতি গ্রেফতার হয়েছে।” যদিও বিরোধীরা জানাচ্ছেন, সম্প্রতি গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন এক তরুণী, যার ভিত্তিতে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টার ধারা যোগ করেছে পুলিশ।
মমতা এ দিন বলেন, “কোনও মানুষের উপর কোনও অত্যাচার হলে মনে রাখবেন সরকার ব্যবস্থা নেয়। একটা ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটা ঘটানো হয়েছে। প্রথমে ইডিকে পাঠিয়েছে। তার পর ইডির বন্ধু বিজেপি ঢুকেছে। আর কিছু মিডিয়া ঢুকেছে। ঢুকে তিলকে তাল করছে। শান্তির পরিবর্তে আগুন লাগাচ্ছে।” রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিকও এ দিন বলেন, “এত যে অভিযোগ, একটাও কি সত্যি? সন্দেশখালির এক জন মা-বোন বলুন, তাঁদের বিরুদ্ধে অত্যাচার হয়েছে। ভয়ে অভিযোগ করতে পারছে না— এটা বাজে কথা।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “রাজ্য পুলিশের ডিজি শনিবার বললেন, মহিলাদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, মহিলারা অভিযোগ করেননি। আবার কয়েক জন মন্ত্রী সন্দেশখালি গিয়ে বলে দিলেন, পুলিশ দেখেছে ওই সব অভিযোগ সত্যি নয়! এর মধ্যে কোনটা তা হলে ঠিক?” তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ এফআইআর নিতে চায়নি বলে গোপন জবানবন্দির পথে যেতে হয়েছে। আর তদন্ত প্রক্রিয়ার মাঝেই যদি মন্ত্রীরা বলে দেন অভিযোগ ঠিক নয়, তা হলে তদন্তকেই প্রভাবিত করা হয়।”
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপ পোস্ট করে বিজেপির কেন্দ্রীয় সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় এক্স হ্যান্ডলে অভিযোগ করেছেন, “উটপাখির মতো বালিতে মাথা গুঁজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্দেশখালির সেই সব নারী, যাঁরা তাঁর দল, শেখ শাহজাহান ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁদের দুর্দশার কথা স্বীকার করতে চাইছেন না।” তিনিও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যে অফিসারদের কথা বলছেন, তাঁরা নির্যাতিতাদের ভয় দেখাচ্ছেন এবং তাঁদের ধর্ষণ করা হয়েছে, তা প্রমাণ করার জন্য কাগজপত্র দেখাতে বলছেন!” তাঁর মন্তব্য, “নির্যাতিতা মহিলাদের সম্ভ্রম মুখ্যমন্ত্রী ফিরিয়ে দেবেন কী ভাবে?”
মমতা এ দিনও দাবি করেন, “যাঁর যা অভিযোগ আছে, আমি অফিসার পাঠাব, তাঁরা শুনবেন এবং যদি কেউ মনে করে কেউ কারও কাছ থেকে কিছু নিয়েছে, সবটাই ফেরত দেওয়া হবে।”
জমি সংক্রান্ত ক্ষোভ কমাতে অবশ্য রবিবার থেকেই সচেষ্ট তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন সন্দেশখালির একাধিক পাড়ায় সমস্যা সমাধান শিবির চলল দিনভর। বিডিও এবং অন্য আধিকারিকেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে অভিযোগ শুনলেন। সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতোকে এ দিন দলের তরফে সন্দেশখালির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুকুমার বলেন, “দলের তরফে চাঁদা তুলে রবিবার মোট ১০ জনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৭০-৮০ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হল। উত্তম সর্দারের কাছে তাঁরা টাকা পেতেন।”
রাজ্যের তিন মন্ত্রী— বিরবাহা হাঁসদা, সুজিত বসু এবং পার্থ ভৌমিকও সারাদিন কাটালেন সন্দেশখালি ১ ব্লকের শেয়ারা রাধানগরে। স্থানীয় ভোলাখালি আদিবাসী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে সভা করেন তাঁরা। সব রকম সরকারি সহায়তার আশ্বাস দেন এবং আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের সন্দেশখালির মানুষের সঙ্গে কথা বলতে আসবেন বলে জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy