মঙ্গলবার সন্দেশখালিতে মুখ ঢেকে মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের কাছে আভিযোগ জানাচ্ছে গ্রামের মহিলারা। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
নির্যাতনের অভিযোগ প্রচুর। কিন্তু মঙ্গলবার দিনভর গ্রামে গ্রামে ঘুরে প্রাথমিক ভাবে ধর্ষিতা কারও দেখা পেলেন না পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের সদস্যরা। পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের সূত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে।
জাতীয় মহিলা কমিশনের দু’জন প্রতিনিধিও মঙ্গলবার দুপুরে আসেন এবং সন্দেশখালির হালদারপাড়া, পুকুরপাড়া ও লস্করপাড়ার মহিলাদের সঙ্গে কথা বলেন।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ ডিআইজি সিআইডি সোম দাস মিত্রের নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলের ১০ জন সদস্য ৬টি টোটোয় চেপে গ্রামের ভিতরে ঢোকেন। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন, আশ্বাস দেন সব রকম সহযোগিতার। প্রায় সকলেই জানান, শিবপ্রসাদ হাজরা ও তাঁর দলবল এলাকায় জোর-জুলুম, অত্যাচার করত। বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করাত। প্রতিবাদ করলেই মারধর জুটত। তৃণমূলের মিটিং মিছিলে মহিলাদের যেতে বাধ্য করত। কিন্তু যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের শিকার কোনও মহিলার বয়ান, তদন্ত শুরুর দিন সংগ্রহ করতে পারলেন না তদন্তকারীরা।
সোমবার রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় সন্দেশখালিতে নির্যাতিতাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। মহিলাদের অভিযোগ শুনে তদন্ত হবে ও পুলিশের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হবে বলে জানান তিনি। গ্রামের মহিলারা তাঁর হাতে একটি গণস্বাক্ষরিত অভিযোগপত্র তুলে দেন। সন্দেশখালি মাঝেরপাড়া, পুকুরপাড়ার মহিলাদের অভিযোগ গভীর রাতে শিবপ্রসাদ হাজরা তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ডাকত এবং দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রাখত বলে অভিযোগ। না গেলে স্বামী, সন্তানের উপরে অত্যাচার চলত বলে দাবি। পুলিশের কাছে সুবিচার মিলত না বলেও অভিযোগ। শিবপ্রসাদের বিরুদ্ধে ইচ্ছেমতো জমি জায়গা দখল করার অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে নির্যাতিতার বয়ান তিনিও পাননি বলে জানান লীনা।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন ফিরে যাওয়ার পরে ডিআইজি বারাসত সুমিত কুমার সোমবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, মহিলা পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে ১০ সদস্যর একটি তদন্তকারী দল তৈরি হবে। তদন্তকারী দলে ছিলেন ডিআইজি সিআইডি সোমা দাস মিত্র, ডিআইজি এসটিএফ দেবস্মিতা দাস, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুন্দরবন (সদর) চারু শর্মা-সহ দশ জন। সন্দেশখালির বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে মহিলাদের অভিযোগ শোনার কথা তাঁরা। এ দিন দুপুরে ৮ নম্বর পুকুর পাড়ায় মহিলা তদন্তকারীরা যৌন নিগ্রহের বিষয়ে প্রশ্ন করার সময় এক মহিলা বলেন, ‘‘শিবপ্রসাদ মেয়েদের গভীর রাতে ডেকে নিয়ে যেত দলীয় কার্যালয়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখত। না যেতে চাইলে স্বামী সন্তানদের মারধর করত। এটাও তো নির্যাতন!’’
আর এক মহিলা মুখ ঢেকে এসে বলেন, ‘‘আপনাদের কাছে কিছু বললে শিবপ্রসাদের লোকেরা যদি আবার অত্যাচার করে? ভয়ে কেউ মন খুলে কথা বলতে পারছে না।’’ মহিলা পুলিশ কর্তারা আশ্বাস দিলেও নির্দিষ্ট করে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন— এমন কথা কেউ বলেননি বলে দাবি প্রশাসনের। ষাটোর্ধ্ব এক মহিলা বলেন, ‘‘আমি আনাজ বিক্রি করি। আমাকে পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাত দু’টোর সময় আনাজ কেনার নাম করে শিবপ্রসাদের সঙ্গীরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এর পর দলীয় কার্যালয়ে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বসিয়ে রেখেছিল।’’ তাঁর কথায়, ‘‘গভীর রাতে এ ভাবে দাসীর মতো ডেকে পাঠিয়ে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রাখা— এটাও তো নির্যাতন।’’ ওই মহিলার কথায়, ‘‘কোথায় কী বলছি, জেনে আবার যদি পুলিশ অত্যাচার শুরু করে? তাই এখন মুখ ঢেকে সবার সামনে আসছি। নাম-পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা করছি সংবাদমাধ্যমের সামনে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্তকারী দলের এক মহিলা আধিকারিক বলেন, ‘‘পাড়ায় পাড়ায় একাধিক মহিলার সঙ্গে কথা বলা হল। মহিলারা যাতে ভয় না পান, তাই পুলিশের পোশাকে যাওয়া হয়নি। নিরাপত্তা কর্মীরাও দূরে ছিলেন। কিন্তু কেউ যৌন নিগ্রহের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে বলে জানালেন না। সবাই বলছেন, অন্যের সঙ্গে হয়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy