Advertisement
০৭ অক্টোবর ২০২৪

খুনে অভিযুক্ত বিজেপির সদাইও কেষ্ট-শরণে

পাড়ুইয়ে দুই তৃণমূল কর্মী খুনে তিনিই মূল অভিযুক্ত। সেই অভিযোগে সদ্য জেল খেটে জামিনে বেরিয়েছেন। দু’দিন আগেও শাসকদলের নেতাদের কাছে তিনি ছিলেন ‘সমাজবিরোধী’।

তৃণমূলে যোগ দিলেন পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা সদাই শেখ। রবিবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

তৃণমূলে যোগ দিলেন পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা সদাই শেখ। রবিবার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরীর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বোলপুর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৯
Share: Save:

পাড়ুইয়ে দুই তৃণমূল কর্মী খুনে তিনিই মূল অভিযুক্ত। সেই অভিযোগে সদ্য জেল খেটে জামিনে বেরিয়েছেন। দু’দিন আগেও শাসকদলের নেতাদের কাছে তিনি ছিলেন ‘সমাজবিরোধী’।

কিন্তু, রাজনীতি যে ডিগবাজির জায়গা! আরও বেশি জায়গাটার নাম বীরভূম হলে! অতএব পাড়ুইয়ের সেই খুনে অভিযুক্ত বিজেপি নেতা সদাই শেখ রবিবার যোগ দিলেন তৃণমূলে। যাঁকে তীব্র সমালোচনায় বিদ্ধ করে এক সময় তৃণমূল ছেড়েছিলেন, সেই জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত ওরফে কেষ্ট মণ্ডলের আশীর্বাদ নিয়েই ঘরে ফিরলেন সদাই। জল্পনা অবশ্য ছড়িয়েছিল ক’দিন আগেই। যে দিন গভীর রাতে কেষ্টর বাড়িতে বৈঠক করতে গিয়েছিলেন সদাই। এবং বেরিয়ে সদাই বলেছিলেন, ‘কেষ্টদার সঙ্গে আইনি পরামর্শ করতে গিয়েছিলাম।’

এর আগে বিজেপি-র হৃদয় ঘোষ, নিমাই দাসের মাথায় পড়েছিল কেষ্টর ‘স্নেহে’র হাত। তার পরেই যে এলাকা রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপি-কে তুমুল হাওয়া দিয়েছিল, সেই পাড়ুইয়েই গেরুয়া শিবিরকে আরও বড় ধাক্কা দিয়ে সদাইকে তুলে নিল তৃণমূল। এ দিন সন্ধ্যায় বোলপুরে তৃণমূল কার্যালয়ে সদাইকে পাশে নিয়ে অনুব্রত বলেন, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরল। ওই এলাকায় আমাদের সংগঠন আরও মজবুত হল।” বোলপুরের বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ দাবি করেন, বীরভূমে বিজেপি বলে কিছু নেই। সিপিএমের কিছু লোক বিজেপি-র নামে সন্ত্রাস করছে। সদাই আবার দাবি করলেন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে তিনি কিছু দিন তৃণমূল থেকে আলাদা ছিলেন। কিন্তু, কখনও নাকি বিজেপি-ই করেননি! বিজেপি-র কোনও পদেও থাকেননি।

পাড়ুইয়ের মাখড়ায় দুই তৃণমূল কর্মী খুনে কিংবা চৌমণ্ডলপুরে পুলিশের উপরে হামলার ঘটনায় তৃণমূল আপনাকেই অভিযুক্ত করেছিল, তখন কোন দলে ছিলেন? সদাইয়ের জবাব, ‘‘তখনও আমি তৃণমূলেই ছিলাম!’’

দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে অনুব্রতরা সাংবাদিক বৈঠক আর গড়াতে দেননি।

এক সময়ের সিপিএম সমর্থক সদাই ২০০৫ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। পাড়ুইয়ের মঙ্গলডিহি পঞ্চায়েত-সহ আশপাশের এলাকায় তিনিই ছিলেন শেষকথা। পঞ্চায়েতের ভাগবাঁটায়োরা নিয়ে অনুব্রত-শিবিরের একাংশের সঙ্গে তাঁর বিরোধের বাধে। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পরেই অনুব্রত সদাইকে দল থেকে ছেঁটে ফেলেন। সদাই যোগ দেন বিজেপি-তে। তার পর থেকেই পাড়ুই এলাকার বিজেপি-র প্রভাব এবং শাসকদলের সঙ্গে তাদের সংঘাত, দুই-ই বাড়তে থাকে। সেই সদাই কোন জাদুতে তৃণমূলে? জেলা তৃণমূলেরই এক নেতার কথায়, ‘‘বাঘকে খাঁচায় কী ভাবে বন্দি করতে হবে, তা কেষ্টদা ভালই জানেন। সদাইয়ের বিরুদ্ধে যে অসংখ্য মামলা চলছে, সেই চাপ থেকে মুক্তি পেতে দাদার শরণে আসা ছাড়া ওর কাছে আর কোনও রাস্তা ছিল না।’’

বিজেপি-র জেলা সভাপতি অর্জুন সাহার দাবি, “সবাই জানে সদাই কেন তৃণমূলে। বিজেপি কোনও ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল নয়। ও গেলেও কোনও ক্ষতি হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sadia sheikh BJP trinamool Birbhum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE