Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
আক্ষেপ, পরিবেশ নেই

এ বার প্রেসিডেন্সি ছাড়ছেন চেয়ার প্রফেসর

শিক্ষার পরিবেশ নেই বলে আক্ষেপ করে প্রেসিডেন্সি ছাড়তে চাইলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগদীশচন্দ্র বসু’ অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য। টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর) থেকে লিয়েন নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে এসেছিলেন বিশিষ্ট ওই শিক্ষক।

সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

শিক্ষার পরিবেশ নেই বলে আক্ষেপ করে প্রেসিডেন্সি ছাড়তে চাইলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জগদীশচন্দ্র বসু’ অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য।

টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ (টিআইএফআর) থেকে লিয়েন নিয়ে প্রেসিডেন্সিতে এসেছিলেন বিশিষ্ট ওই শিক্ষক। আবার সেখানেই ফিরতে চান বলে তিনি গত ১৪ জুলাই প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। ২০১২-র শেষাশেষি সব্যসাচীবাবুকে প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের সদস্য করা হয়। ২০১৪-র সেপ্টেম্বরে তিনি প্রেসিডেন্সির ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ইন ন্যাচরাল সায়েন্সেস’ পদে নিযুক্ত হন।

কিন্তু এরই মধ্যে তিনি ছেড়ে যেতে চাইছেন কেন? রাখঢাক না-করে সব্যসাচীবাবুর জবাব, ‘‘এখানে শিক্ষা নিয়ে আলোচনা কম, অন্য বিষয়ে বেশি। একটা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যা হওয়ার কথা নয়!’’ ‘অন্য বিষয়’ বলতে কী বোঝাচ্ছেন, তা অবশ্য তিনি খোলসা করতে চাননি। যদিও রাজ্যের শিক্ষানুরাগীদের বড় অংশের মতে, যাত্রার শুরুতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা আশা জাগালেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বাম আমলের মতো তৃণমূল-জমানাতেও ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানটিতে সরকার বারবার নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার চেষ্টা করছে, যেমনটি দেখা যাচ্ছে গোটা রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে। এতে আখেরে শিক্ষার পরিবেশ মার খাচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

এমতাবস্থায় শিক্ষকদের প্রেসিডেন্সি ত্যাগও নতুন নয়। ইতিহাস বিভাগের বেঞ্জামিন জাকারিয়া অনেক আগেই চলে গিয়েছেন। সম্প্রতি ওই বিভাগেরই প্রধান শুক্লা সান্যাল ইস্তফা দিয়েছেন। রাজ্য সরকারও পরের পর বেশ কয়েক জন শিক্ষককে বদলি করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি যার নেপথ্য কারণ বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের ইঙ্গিত।

সব্যসাচীবাবু অবশ্য সরাসরি রাজনীতির অভিযোগ তোলেননি। তবে পদার্থবিদ্যার ওই শিক্ষকের স্পষ্ট আক্ষেপ, ‘‘যে ভাবে প্রতিষ্ঠান চলছে, আমার ভাল লাগছে না। যে ভূমিকায় আমি কাজ করার কথা ভেবেছিলাম, সে ভাবে কাজ করতেই পারছি না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে আলোচনা না-করেই সব সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এটা বাঞ্ছনীয় নয়। আমি চলে গেলে কারও কিছু এসে যায় না। তাই এই সিদ্ধান্ত।’’

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির পরে পাঁচটি বিশেষ ‘চেয়ার প্রফেসর’-এর পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। এর মধ্যে বিবেকানন্দ ও কাজী নজরুল ইসলাম চেয়ার প্রফেসরপদে নিয়োগই হয়নি। অন্য তিনটি পদে ছিলেন সব্যসাচীবাবু, স্বপন চক্রবর্তী ও সজল নাগ। সব্যসাচীবাবু অব্যাহতি নিলে চেয়ার প্রফেসরের তিনটি পদই ফাঁকা পড়ে থাকবে। কর্তৃপক্ষ কী বলছেন?

প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া বলেন, ‘‘সব্যসাচীবাবুকে শ্রদ্ধা করি। ওঁর মতো মানুষ ছেড়ে চলে গেলে খারাপ তো লাগবেই। কিন্তু নিয়মের বাইরে কিছু করার উপায় নেই।’’ উপাচার্যের দাবি, সব্যসাচীবাবুর ছাড়তে চাওয়ার কারণটা আর্থিক। ‘‘উনি যেখান থেকে লিয়েন নিয়ে এসেছেন, সেখানে প্রেসিডেন্সির তুলনায় বেশি বেতন পেতেন। কিন্তু এখানে চালু বেতনক্রমের অন্যথা করা যাবে না।’’— মন্তব্য অনুরাধাদেবীর। তিনি জানান, এ সত্ত্বেও বিষয়টি সম্পর্কে তিনি রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরকে ইতিমধ্যে অবহিত করেছেন। সরকারের কী বক্তব্য?

রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও ঘটনার পিছনে ‘আর্থিক’ কারণের ইঙ্গিত পাচ্ছেন। ‘‘এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর মধ্যে ঢুকতে চাই না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের দফতরে যে খবর পৌঁছেছে, তাতে মনে হয়, ওই শিক্ষকের প্রেসিডেন্সি ছাড়তে চাওয়ার পিছনে কোনও আর্থিক বিষয় রয়েছে।’’— পর্যবেক্ষণ পার্থবাবুর। শিক্ষকের প্রতি তাঁর এ-ও আহ্বান, ‘‘আমি অনুরোধ করব, এই বিষয়টিকে বড় করে না-দেখে প্রেসিডেন্সির সামগ্রিক ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেকে

যুক্ত রাখুন।’’

ঘটনা হল, টিআইএফআর থেকে প্রেসিডেন্সিতে আসায় তাঁকে যে আর্থিক ভাবে ক্ষতি স্বীকার করতে হচ্ছে, সব্যসাচীবাবু নিজেও তা অস্বীকার করেননি। ‘‘আমার পে ফিক্সেশন হয়নি। কেন হয়নি, এত দিনেও জানতে পারলাম না!’’— খেদ করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুর দাবি, সব্যসাচীবাবুর মুখে ব্যাপারটা জানতে পেরে তিনি উপাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছিল। সুগতবাবুর কথায়, ‘‘সব কিছুর পরেও সব্যাসাচীবাবুকে অনুরোধ করেছিলাম, আর একটা বছর অন্তত থেকে যান।’’

সব্যসাচীবাবু অবশ্য ছেড়ে যাওয়াই মনস্থ করেছেন। কিন্তু এর কারণ হিসেবে তিনি তো শিক্ষার পরিবেশের অভাবকেও দায়ী করেছেন! তা হলে?

উপাচার্য অনুরাধাদেবীর জবাব, ‘‘বুঝতে পারছি না, উনি কেন এমন বললেন! আমরা সকলে চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ভাল রাখতে।’’ আর সুগতবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘সপ্তাহ দুই আগে একটি বক্তৃতা দিতে প্রেসিডেন্সিতে গিয়েছিলাম। শিক্ষার পরিবেশ তো ভালই রয়েছে দেখলাম!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE