নুর আলম হোসেনের নামে সেই এফআইআর।
ধর্ষণের অভিযোগে তাঁর নামে পোস্টার পড়ল দিনহাটা শহরে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা আবার ‘ভ্যানিশ’ও হয়ে গেল। শোরগোল হল সামাজিক মাধ্যমেও। কিন্তু তিনি নির্বিকার। বললেন, ‘‘জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে অসহায় মানুষের হাতে ত্রাণের স্লিপ দিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছি।’’
ধর্ষণের অভিযোগে তো তৃণমূল আপনাকে বহিষ্কার করেছে? এ বারে একটু চটে উঠে বলেন, ‘‘তৃণমূলটা হামরায় (আমরাই) করি। বহিষ্কারের কোনও দাম নাই।’’ তাই? দ্রুত সংযত নুর আলম হোসেন, তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি এবং জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। বলেন, ‘‘দল যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা তো মাথা পেতে নিয়েছি। কিন্তু আমি তৃণমূলই করি।’’ তাই তিনি নানা কাজে দিনহাটা এবং সিতাই বিধানসভা কেন্দ্রে অবাধে ঘুরছেন।
অথচ, লকডাউনের মধ্যে নুরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠেছে, এফআইআর-ও হয়েছে। পুলিশ তাঁকে ধরেনি। দিনহাটার এক পুলিশের বক্তব্য, ‘‘অভিযোগ হলে আমরা আগে খতিয়ে দেখি, তার পরে ব্যবস্থা নিই।’’ আর সিতাইয়ের বিধায়ক জগদীশ বসুনিয়া বলেন, ‘‘নুর তো হাইকোর্টে জামিন নিয়েছেন।’’ তার আগে? এই নিয়ে দিনহাটার পুলিশ চুপ। জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও কিছু বলতে চাননি।
যে শিক্ষিকা ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছিলেন, তিনি ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন তাঁর স্বামী। তাঁদের এক আত্মীয় বলেন, ‘‘এর মধ্যে ওদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে নুর বাহিনী। কথা বলবে কোন ভরসায়!’’
গোসানি রোডের উপরে নুরের গ্রামের বাড়ি। দিনহাটা শহর থেকে যে দিন এই বাড়িতে এসে থাকেন নুর, বাইরে ভিড় করে থাকেন কয়েক জন যুবক। অচেনা কেউ দেখা করতে গেলেই শুরু হয় জেরা। ওই যুবকরা সন্তুষ্ট হলে তবেই মিলবে ছাড়পত্র। পেশায় তিনি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। কিন্তু যখন দামি গাড়িতে এলাকা দেখতে বার হন, ঘিরে থাকে ভিড়।
নুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য একটা-দুটো নয়। তাঁর নামে যেমন আছে ‘কমিশন’ নেওয়ার নালিশ, তেমনই আছে রাজনৈতিক মারপিটের অভিযোগও। যদিও দিনহাটা পুলিশ বলছে, কোনওটাই গ্রেফতার করে হেফাজতে নেওয়ার মতো বড় অভিযোগ নয়। তাঁর অনুগামীদের অনেকেই অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয়েছেন। তার পরেও দাপট কমেনি তাঁর। এমনকি, ধর্ষণের অভিযোগ, দল থেকে বহিষ্কারের পরেও বিধায়ক তাঁর হয়েই কথা বলেন। কেন? স্থানীয় লোকজনদের দাবি, নুর না থাকলে ভোটবাক্সে জগদীশের ভরাডুবি হবে। নুর নিজে সব অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, ‘‘সব মিথ্যে অভিযোগ।
এই এলাকায় তৃণমূলের শক্তিশালী সংগঠন দেখেই এমন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’ যদিও দলেরই অনেকে জানাচ্ছেন, জেলার এক শীর্ষস্থানীয় নেতার হাত রয়েছে এই জনপ্রতিনিধির মাথায়।
দ্বন্দ্বে দীর্ণ কোচবিহার তৃণমূলের মজা হল, মাথায় ‘দাদার’ সংখ্যা অনেক। তাই নুরের মাথায় যদি থাকে জেলার কোনও শীর্ষ নেতার হাত, তা হলে সমান ওজনের আর এক নেতা আবার ‘মেন্টর’ তুফানগঞ্জের অনন্ত বর্মার।
দলীয় সূত্রেই খবর, অনন্ত বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছিল পিকে-র দলের কাছে। যা সেখানে বলা হয়েছিল, ঘর বিলি থেকে একশো দিনের কাজ— অনন্তর ঝুলিতে ‘কমিশন’ না ঢুকলে কোনও কাজই হয় না। এই নালিশ নিয়ে কয়েক দিন হইচই হয়। তার পরে সব চুপচাপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় নতুন করে দাপট বাড়ছে অনন্তর। কিন্তু তিনি নিজে বলছেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে বিজেপি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যে অভিযোগ করছে। এ ছাড়া, আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। আমাকে কেউ কোনও বিষয়ে জানায়ওনি।’’ তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘আমাকে খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’’
কোচবিহারের এক দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত, যেখান দিয়ে অহরহ পাচারের অভিযোগ ওঠে। অন্য দিকে অসম এবং আলিপুরদুয়ার সীমানা। নুরের ‘এলাকা’ যদি হয় বাংলাদেশ ঘেঁষা সিতাই, অনন্তর দাপট তা হলে অসমের নিকটবর্তী তুফানগঞ্জে। তাঁদের ‘প্রতাপ’ নিয়ে বিরোধীরা তো অভিযোগ তুলেছেনই, দলের অভ্যন্তরেও প্রশ্ন উঠেছে—শুদ্ধকরণ অভিযান যখন শুরু হয়েছে, তখন এঁদের কি কিছুই বলা হবে না?
বিনয়কৃষ্ণ অবশ্য সাফ বলেন, “কারও বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে দল ব্যবস্থা নেবে। ধর্ষণের মামলার অভিযোগ ঘিরে ব্যবস্থা হয়েছে। কোনও অন্যায়কে আমরা প্রশ্রয় দেব না, এটুকু বলতে পারি।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কথায়, “এই ব্যাপারে জেলা ও রাজ্য নেতৃত্ব যা বলার বলবেন।” আর বিরোধীদের দিকে আঙুল তোলেন তৃণমূলের কোচবিহার জেলার কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়। বলেন, “বিরোধীরা নানা অপপ্রচার করছে। দল অন্যায় কাজ দেখলে ব্যবস্থা নেবে। ইতিমধ্যে তা শুরুও হয়েছে।”
সাধারণ মানুষকে নিশ্চিন্ত করতে কোচবিহার জেলা পুলিশের এক কর্তাও বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারও কথায় কাউকে ছাড় দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy