Advertisement
E-Paper

ডিজে বক্স-এলইডি? না কি খাঁটি সনাতনী ঢাক-ঢোল? রামনবমীর আয়োজন ঘিরে মতভেদ, সঙ্ঘ অগত্যা রামকৃষ্ণপথের শরণে

রাজ্যের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ রামনবমী এ বছরের ৬ এপ্রিল। ঘটনাচক্রে, এ বার রামনবমী এবং বিজেপির প্রতিষ্ঠাদিবসের তারিখও মিলে গিয়েছে।

RSS resorts to Ramkrishna Paramhans’s teaching as opinions differ among cadres regarding Ram Navami celebration features

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

পরিকল্পনা রয়েছে রামনবমীর আড়ম্বরে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার। কিন্তু আড়ম্বরের ‘বৈশিষ্ট্য’ কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে মতভেদের আভাস। কেউ চান ‘খাঁটি সনাতনী’ আয়োজন। কেউ বলছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাই ‘আধুনিকতা’। এবং আরএসএস বলছে, ‘যত মত, তত পথ’।

রাজ্যের পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনের আগে শেষ রামনবমী আগামী ৬ এপ্রিল। তায় আবার রামনবমী এবং বিজেপির প্রতিষ্ঠাদিবসের তারিখও এ বার মিলে গিয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক ইতিহাসে রামনবমী উদ্‌যাপনের সব আয়োজনকে এ বার ছাপিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে সঙ্ঘ পরিবার। আরএসএস বা সঙ্ঘের সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে কোথাও কোনও আয়োজন হচ্ছে না। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দল, হিন্দু জাগরণ মঞ্চ-সহ সঙ্ঘের ছাতার তলায় থাকা বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরাই রামনমবমী উদ্‌যাপনের আয়োজনে শামিল হচ্ছেন। শামিল হচ্ছেন বিজেপি কর্মীরাও। কিন্তু সঙ্ঘ বা বিজেপির ব্যানারে নয়। কোথাও আয়োজকের নাম ‘রামনবমী উদ্‌যাপন সমিতি’। কোথাও আবার ‘জয় শ্রীরাম কমিটি’। কারণ, ২০২৫ সালের রামনবমী উদ্‌যাপনকে ‘সামাজিক উৎসবে’র চেহারা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই ধর্মীয় উদ্‌যাপনের গায়ে কোনও নির্দিষ্ট সংগঠনের ছাপ যাতে না থাকে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা হচ্ছে। অতএব, আরএসএসের তরফ থেকে আয়োজনের বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে কোনও নির্দেশিকাও থাকছে না। গোল বাধছে সেখানেই। কেউ বলছেন, রামের জন্মদিনে খোল-করতাল নিয়ে নাম সংকীর্তন শোভাযাত্রা হোক। কারও দাবি, সঙ্গে থাক ঢাক-ঢোল-কাঁসরও। অনেকে আবার বলছেন, বিপুলাকার ডিজে বক্সে র‌্যাপ-ধাঁচের ‘জয় শ্রীরাম’ গান বাজবে, সঙ্গে থাকবে এলইডি নির্মিত চোখধাঁধানো রামের মূর্তি।

দক্ষিণ কলকাতায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ পদাধিকারী শেখর রায় গত বছরও রামনবমী উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি ছিলেন। কিন্তু এ বার আরএসএসের বার্তা, উৎসবের গায়ে সংগঠনের নিজস্ব কোনও ‘ছাপ’ লাগানো যাবে না। সুতরাং শেখর এ বার কমিটির সভাপতি হননি। বলছেন, ‘‘গত বছরও তো ছিলাম। এ বার তরুণদের একটু সামনে এগিয়ে দিয়েছি।’’ কিন্তু তরুণদের মতামত বা চাহিদা অনুযায়ী সব আয়োজন হচ্ছে না। শোভাযাত্রার আকার আগের চেয়েও বাড়ানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ডিজে-তে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান বা পশ্চিমি যন্ত্রানুষঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ গান বাজানো উচিত নয় বলে দক্ষিণ কলকাতার প্রবীণ স্বয়ংসেবকেরা মনে করছেন। তাঁদের মতে, ‘‘ডিজে ঠিক খাঁটি সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। তার উপরে ওই রকম উচ্চগ্রামে বাঁধা গান! রামচন্দ্রের জন্মদিন পালন ও ভাবে হতে পারে না।’’ অন্তত দক্ষিণ কলকাতার শোভাযাত্রায় খোল-করতাল এবং ঢাক-ঢোল-কাঁসর বাজিয়ে রামের নামে জয়ধ্বনি হবে বলে প্রবীণেরা স্থির করেছেন। তরুণেরা আবার তাতে ঈষৎ দমে গিয়েছেন। কারণ তাঁদের মতে, ‘‘গত কয়েক বছরে ডিজে-তে যে জয় শ্রীরাম গান বাজানোর চল হয়েছে, তা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয়। ডিজে-র চড়া আওয়াজ অনেককে শোভাযাত্রায় টেনেও আনে।’’

কিন্তু আপাতত প্রবীণদের মত অনুযায়ীই আয়োজন করা হচ্ছে বলে খবর। ৬ এপ্রিলের আগে যদি নবীনেরা নিজেদের মতামতের উপর ‘সিলমোহর’ আদায় করতে পারেন, তা হলে শোভাযাত্রায় ডিজে বক্স জুড়ে নেওয়ার চেষ্টা আবার হতে পারে।

বারাসত সাংগঠনিক জেলায় আবার ঠিক উল্টো ছবি। সেখানেও আয়োজক কমিটির দায়িত্ব অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রবীণেরা তাঁদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডিজে বক্সের সমর্থক। ওই অঞ্চলে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের প্রাক্তন শীর্ষনেতা নব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় এখন বিজেপিতে রয়েছেন। তিনি বললেন, ‘‘আমরা একটা নয়, তিনটে ডিজে রাখব। তার সঙ্গে এলইডি দিয়ে তৈরি রামচন্দ্রের প্রতিমূর্তি থাকবে। চোখধাঁধানো আয়োজন করছি।’’ তা হলে দক্ষিণ কলকাতার প্রবীণ স্বয়ংসেবকদের ভাবনা কি ভুল? নব্যেন্দু সে প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দিচ্ছেন না। কিন্তু রামনবমীতে সব সময় ‘নমনীয়’ অনুষ্ঠান করতে হবে বলে তিনি মানছেন না। তাঁর কথায়, ‘‘ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি, ভগবান রামচন্দ্র শৌর্যের প্রতীক। নিঝুম জায়গা দিয়ে যাওয়ার সময় গা ছমছম করলে আমরা বলতাম, রাম-লক্ষ্ণণ বুকে আছে ভয়টা আমার কী! সুতরাং রামনবমীতে খোল-করতাল ছাড়া কিছু বাজানো যাবে না, এটা আমরা মনে করি না। বরং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকতাকে আপন করে নেওয়াই জরুরি।’’

সঙ্ঘ পরিবারের লোকজন যে সব কর্মসূচিতে যুক্ত থাকেন, সে সব কর্মসূচি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে সাধারণত একই রকম হয়। অঞ্চলভেদে আয়োজনের বৈশিষ্ট্য সাধারণত আলাদা হয় না। একে সঙ্ঘের ‘অনুশাসনের সুফল’ বলে অনেকে দাবি করেন। এ বারের রামনবমী উদ্‌যাপন ঘিরে তা হলে এত রকমের মতামত কেন? আরএসএসের ক্ষেত্রীয় কার্যকারিণী সদস্য শচীন্দ্রনাথ সিংহ বললেন, ‘‘আমরা কোনও নির্দেশিকা এ বার বেঁধে দিইনি। রামনবমী তো শুধু সঙ্ঘের অনুষ্ঠান নয়। গোটা হিন্দুসমাজের অনুষ্ঠান। আমরা চাই, এই উদ্‌যাপন একটা সামাজিক উৎসব হয়ে উঠুক। তাই সমাজের হাতেই বিষয়টা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা যেখানে যে ভাবে আয়োজন করতে চান, তাঁরা সে ভাবেই করবেন। সঙ্ঘের এখানে কিছু বলার নেই।’’

Ram Navami 2025 Ram Navami Rally RSS

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}