প্রাকৃতিক কারণেই জল কমছে পদ্মায়। মঙ্গলবার ফরাক্কা বাঁধ পরিদর্শন করে বিষয়টি মেনে নিল বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। বিভিন্ন সময় গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ অভিযোগ করে এসেছে যে, তারা শুখা মরসুমে ফরাক্কা বাঁধ থেকে পর্যাপ্ত জল পায় না। যদিও ভারতের তরফে বার বার দাবি করা হয়েছে যে, জলপ্রবাহের স্বাভাবিক ওঠানামার কারণেই জলের পরিমাণ কমবেশি হয়ে থাকে। মঙ্গলবার ভারতের সেই দাবিকেই কার্যত মান্যতা দিলেন ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের প্রধান মহম্মদ আবুল হোসেন।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের এই সফর ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। সোমবার শতাব্দী এক্সপ্রেসে ফরাক্কার উদ্দেশে রওনা দেন প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা। সন্ধ্যায় তাঁরা নিউ ফরাক্কা স্টেশনে পৌঁছোলে প্রতিনিধি দলটিকে স্বাগত জানান ফরাক্কা বাঁধের জেনারেল ম্যানেজার আরডি দেশপাণ্ডে। মঙ্গলবার সকালে ব্যারাজ পরিদর্শন করেন প্রতিবেশী দেশের নদী বিশেষজ্ঞেরা। গঙ্গা থেকে পদ্মায় প্রবাহিত জলের পরিমাণ এবং অবস্থা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। গঙ্গা থেকে জল কী প্রক্রিয়ায় পদ্মায় প্রবাহিত হচ্ছে, তা-ও সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দলটি।
বাঁধ পরিদর্শনের পর ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটির প্রধান বলেন, “জানুয়ারি মাসে আমাদের জলপ্রবাহ ভাল ছিল। ফেব্রুয়ারিতে কমেছে। জল কমা একটি প্রাকৃতিক বিষয়।” তিনি আরও বলেন, “যাবতীয় কাজ জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী বাস্তবায়িত হচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করবে বিশেষ কমিটি। কলকাতায় রুটিন বৈঠক হবে।”
মঙ্গলবারের পরিদর্শনের পর আগামী ৬ মার্চ ইন্দো-বাংলাদেশ জয়েন্ট রিভার কমিশনের ৮৬তম বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিরা গঙ্গা-পদ্মার জলবণ্টন ছাড়াও তিস্তা-সহ ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে আলোচনা করবেন। পরের দিন, অর্থাৎ ৭ মার্চ কলকাতায় একটি কারিগরি পর্যায়ের বৈঠক হবে বলেও জানা গিয়েছে। ৮ মার্চ কলকাতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নির্দিষ্ট উড়ানে ঢাকা রওনা দেবেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যেরা।
আরও পড়ুন:
১৯৯৬ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এর ফলে দুই দেশ গঙ্গার জল ভাগ করে নেওয়ার একটি নির্দিষ্ট কাঠামো তৈরি করে। চুক্তির মেয়াদ ছিল ৩০ বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে এটি শেষ হবে। আগামী বছর চুক্তির ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে নতুন করে কিছু পর্যালোচনা ও সংশোধন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ গঙ্গার জলের প্রবাহ ও বণ্টন নিয়ে নিয়মিত বৈঠকে বসে।