খোশমেজাজে: পাড়ায় মদনচন্দ্র, ইমতিয়াজ, আলতাব (বাঁ দিক থেকে)। বুধবার দুপুরে। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
চারপাশে গোলমাল। বোমা পড়ছে, ভাঙচুরের খবর আসছে। হাওয়ার গতিতে ছড়াচ্ছে গুজব। ঠিক সেই সময়ে রিষড়ার একটি প্রান্তের এক জনপদে অদৃশ্য পাঁচিল তুললেন ইমতিয়াজ়, আলতাব, রঞ্জন, অশোকেরা। সকলে মিলে রুখে দিলেন সব দূষিত হাওয়া।
কাগজে-কলমে পি কে দাস লেন পাশের পুরসভা শ্রীরামপুরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। কিন্তু এলাকাটি রিষড়া ছোঁয়া। তাই রিষড়ার ৪ নম্বর রেলগেট লাগোয়া এলাকায় যখন সোমবার গোলমাল বাধে, তখন এই পাড়াতেও উদ্বেগ বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পাড়ার লোকজনই জানাচ্ছেন, এমন একটা আশঙ্কার কথা মাথায় রেখে তাঁরা রবিবার সন্ধ্যা থেকেই তৈরি ছিলেন। সেই রাতেই পাড়ার কয়েক জন যুবক বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে একসঙ্গে থাকতে বলে সতর্ক করেন। বাইরে থেকে কেউ সমস্যা তৈরির চেষ্টা করলে সংশ্লিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষই প্রতিরোধ করবেন বলেও ঠিক হয়। সোমবার রাতে ৪ নম্বর রেলগেট এলাকায় যখন অশান্তি হচ্ছিল, সেই সময়ে ওই পাড়াতেও কিছু লোক ঢুকে মারমুখী হয়ে ওঠে। কিন্তু হাতে হাত মিলিয়ে সেই পরিস্থিতিকে রুখে দেন সকলে। এখন কেউ কেউ বলছেন, ভয় যে লাগেনি, তা নয়। কিন্তু একজোট হয়েই তাঁরা বিপদ সামলেছেন।
সোমবারে যখন বিপদ আছড়ে পড়ে পাড়ায়, সব দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন ইমতিয়াজ় আহমেদ, শেখ আলতাব, রঞ্জন দে-রা। ইমতিয়াজ়, আলতাবদের দাবি, মারমুখী লোকদের সামলাতে তাঁরা এগিয়ে যান। বলেন, কোনও পরিস্থিতিতেই সম্প্রীতি নষ্ট করা চলবে না। ইমতিয়াজ়ের কথায়, ‘‘গুজব শুনে কিছু ছেলে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। আমরা তাদের বোঝাই। গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে ছিলাম, যাতে অশান্তি না হয়। এখানে গোলমাল হয়নি। একে অপরের পাশে যেমন ছিলাম, তেমনই থাকব।’’
ইমতিয়াজ়ের কথার প্রতিধ্বনি রঞ্জনের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা মিলেমিশে থাকি। কোনও সমস্যা নেই। ওঁরা আমাদের বলেন, গোলমালের আঁচ যাতে আমাদের মধ্যে না আসে। আমরাও একই কথা বলি।’’ বৃদ্ধ মদনচন্দ্র খামারুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমরা একসঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকব।’’ শুনে শেখ আলতাব, ওয়াসিম আহমেদরা মাথা নাড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, বিপদে-আনন্দে, দুর্গাপুজোয়, ইদে— সব সময় একসঙ্গে থাকেন তাঁরা। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ থাকলেও কোনও দিন সম্প্রীতি টোল খায়নি এলাকায়। এ বারেও তা হতে দিলেন না তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy