তিথি পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেন মিছিল হচ্ছে রামনবমীর? প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রামনবমী উপলক্ষে বিজেপির মিছিল ঘিরে গত কয়েকদিনে অশান্তি হয়েছে হাওড়া এবং হুগলির কয়েকটি এলাকায়। গত বৃহস্পতিবার রামনবমীর দিন তো বটেই, তার তিন দিন পরে রবিবারও রামনবমীর মিছিলে অশান্তি হয়েছে হুগলির রিষড়াতে। জারি করতে হয়েছে ১৪৪ ধারা। হাওড়ায় অশান্তির পরেই মুখ্যমন্ত্রী ‘নাটের গুরুদের’ ধরা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও রবিবার রিষড়ায় গণ্ডগোল হয়েছে। এর পরেই সোমবার মেদিনীপুরের খেজুরির প্রশাসনিক সভায় রামনবমী প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘দিনের দিন মিছিল করো। আমার কোনও আপত্তি নেই। আপত্তি করিওনি। কিন্তু রামনবমীর মিছিল পাঁচ দিন ধরে কেন হবে?’’
অন্নপূর্ণা পুজোর নবমী তিথিতেই পালিত হয় রামনবমী। দেশ জুড়ে রামের ভক্তরা দিনটি সমারোহ সহকারে উদ্যাপন করেন। গত বৃহস্পতিবার ছিল রামনবমী। হাওড়ায় সেই তিথি উপলক্ষে ডাকা মিছিল ঘিরে অশান্তি বাধে। ওইদিন রামনবমী তিথি শেষ হলেও মিছিল এবং উদ্যাপন থামেনি। তার পরেও বিভিন্ন এলাকায় মিছিল চলতে থাকে। রবিবার রাতে রিষড়াতেও মিছিল হয়। যদিও পঞ্জিকা মতে সেদিন নবমী পেরিয়ে দ্বাদশী। ওই মিছিলে ছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। সেই মিছিলও অশান্তি ছড়ায়।
অশান্তির খবর পেয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কড়া বিবৃতি দেন। রাজভবন সূত্রের খবর, রবিবার তিনি কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও। সোমবার মমতাও রামনবমী উদ্যাপন ‘দীর্ঘায়িত’ করা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যা থেকে স্পষ্ট যে, ওই মিছিলের মাধ্যমে ইচ্ছা করে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গে। সোমবার মমতা বলেন, ‘‘এখন রমজান মাস চলছে। ওদের অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও রামনবমীর মিছিল করছে আর সংবেদনশীল এলাকাগুলোয় ঢুকে পড়ছে। ফলের গাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এমনকি, মিছিলে বন্দুক নিয়েও নাচানাচি করছে! বন্দুক নিয়ে মিছিল কেন হবে?’’
আরও পড়ুন:
রিষড়ায় অশান্তিতে আহত হয়েছেন পুরশুড়ার বিজেপি বিধায়ক। পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে জখম হন স্থানীয় ওসি এবং একাধিক পুলিশকর্মী। তাই সোমবারের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতার ওই বিষয়ে মুখ খোলা প্রত্যাশিতই ছিল। এক দিকে যেমন দিনক্ষণ না মেনে সরকারি অনুমতির পরোয়া না করে আয়োজিত রামনবমীর মিছিল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মমতা, তেমনই রাজ্যে ‘অশান্তি’ তৈরি করার অভিযোগ এনেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে। ‘পাপিষ্ঠ’, ‘চোরডাকাত’ বলে বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, ‘‘এরা ঘর পোড়াচ্ছে! বুলডোজ়ার নিয়ে মিছিল করছে! বুলডোজ়ার নিয়ে কেউ মিছিল করে? বুলডোজ়ার নিয়ে রাস্তা বানাতে যায়। আর এরা মিছিল করছে! পঞ্চায়েত নির্বাচনে আর ২০২৪ সালে এ সব মনে রাখবেন। এদের আপনারা ভোট দেবেন না।’’
বিজেপির পাশাপাশি রাজ্যে অশান্তি বাধানোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রেরও ‘ইন্ধন’ রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।সোমবারের সভায় তিনি বলেছেন, ‘‘১৬০টা কেন্দ্রীয় টিম পাঠানো হয়েছিল। তারা এসেছে। ফাইভ স্টার হোটেলে থেকেছে। তার পর বিজেপির ঘরে দেখা করে চলে গিয়েছে।’’