(বাঁ দিকে) কৃষ্ণনগরের চৌধুরী বাড়ির দুর্গা প্রতিমা, বাড়ির পুজোতেও আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদমঞ্চ। ছবি: কৃষ্ণনগরের চৌধুরী পরিবার সূত্রে।
দুর্গা ঠাকুরের মূর্তির কয়েক ফুট দূরেই আরও একটি অবয়ব। সাদা শার্ট। সেই শার্টের বোতামের দু’পাশে উপর-নীচ মিলিয়ে দু’জোড়া বড় পকেট। গলায় ঝুলছে স্টেথোস্কোপ। আর জামার কলার থেকে উপরে উঠে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্র। মঞ্চের প্রেক্ষাপটে লাল-হলুদ সিল্কের প্যান্ডেলের কাপড়ের গায়ে সাঁটা রয়েছে বিচারের দাবি সম্বলিত পোস্টার। এ ভাবেই কৃষ্ণনগরের চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোয় মিশে গিয়েছে আরজি কর!
কৃষ্ণনগরের শক্তিনগরের ভগৎ সিংহ রোডের বাড়িটির নাম ‘বঙ্গবীথি’। বেশ খানিকটা উঠোন। তার পর দুর্গামণ্ডপ। গত সাত বছর ধরে চৌধুরীদের যৌথ পরিবার দুর্গাপুজো করছে। মাঝে এক বছর বন্ধ ছিল। তবে এ বার দুর্গার আরাধনার সঙ্গেই মিশে গিয়েছে প্রতিবাদ। বিচারের দাবি।
এই পরিবারের অন্যতম সদস্য পারিজাত চৌধুরী। অবসরপ্রাপ্ত রেল কর্মচারী পারিজাতের উদ্যোগেই শুরু হয় পুজো। কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোতেই মূল ধুমধাম। তাই পারিজাত চেয়েছিলেন বাড়িতে দুর্গাপুজো করে পাড়ার সবাইকে জড়িয়ে রাখতে। বাড়ির পুজো হলেও পাড়ার সকলেই সেখানে অংশ নেন। তবে এ বার সেখানে দু’টি মঞ্চ। একটি দুর্গার, অন্যটি আরজি করের নির্যাতনের স্মরণে। বিচারের দাবিতে।
কেন এমন পরিকল্পনা? পারিজাত বলেন, ‘‘আমার বাড়িতেও মেয়ে রয়েছে। তাই বাবা হিসাবে বিচার চাওয়াটা আমার কর্তব্য।’’ বাড়ির সকলের সায় নিয়েই তৈরি হয়েছে প্রতিবাদের পৃথক মঞ্চ। এক দিকে চলছে দুর্গার আরাধনা, অন্য দিকে প্রতিবাদ। মাতৃ আরাধনায় প্রদীপ জ্বলছে দুর্গামূর্তির সামনে। প্রতিবাদের প্রদীপ প্রজ্বলিত হচ্ছে আরজি করের নির্যাতিতার প্রতীকী মূর্তির মঞ্চে। পারিজাত এ-ও জানিয়েছেন, প্রতিটি তিথিতে পুজো শুরু হচ্ছে নির্যাতিতার স্মরণে তৈরি হওয়া মঞ্চের সামনে খানিক ক্ষণ নীরবতা পালন করে। তাতে যেমন শামিল হচ্ছেন চৌধুরী পরিবারের সদস্যেরা, তেমনই থাকছেন প্রতিবেশীরাও।
জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অন্যতম মুখ তথা রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার বৈশালী বিশ্বাস বলেন, ‘‘কলকাতা থেকে দূরে জেলায় একটি পারিবারিক পুজোয় এই রকম ছবি আমাদের মনোবল জোগাচ্ছে। প্রতিবাদের বিভিন্ন ধরন থাকে। এটাও একটা ধরন। এই ভয়াবহ ঘটনার পরে মানুষ নিজেদের সঙ্গে বিষয়টিকে সম্পৃক্ত করতে পারছেন।’’ কবীর সুমনের গানের লাইন ধার করে বৈশালী বলেন, ‘‘যে যেখানে লড়ে যায়, আমাদেরই লড়া।’’ জুনিয়র ডাক্তার আন্দোলনের অন্যতম ‘মুখ’ রুমেলিকা কুমার বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছেন, উৎসবের মধ্যে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে আন্দোলন হচ্ছে। আসলে বিষয়টা যে তা নয়, তা প্রমাণ করে দিল কৃষ্ণনগরের এই পরিবারের পুজো। ‘উৎসবে ফিরে আসুন’ বলার পাল্টা স্বর এটা। এই মানুষগুলি রয়েছেন বলেই আন্দোলন এত দূর এসেছে। এই মানুষগুলি রয়েছেন বলেই আন্দোলন থেমে যাবে না।’’
পুজোর কলকাতায় অনেক জায়গাতেই নানা আঙ্গিকে প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই মণ্ডপে স্লোগান দিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন ন’জন আন্দোলনকারী। কোথাও মণ্ডপের বাইরে চলছে ছবি আঁকা। মফস্সলেও দেখা যাচ্ছে অনেকেই নীরব প্রতিবাদে শামিল হচ্ছেন। বুকে ‘আরজি করের বিচার চাই’ অথবা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ লেখা ব্যাজ পরে ঠাকুর দেখতে বার হচ্ছেন। এ সবের মধ্যেই ভিন্ন আঙ্গিকে পুজো হচ্ছে কৃষ্ণনগরের শক্তিনগরের চৌধুরী বাড়িতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy