Advertisement
১১ অক্টোবর ২০২৪
Durga Puja 2024

ফল খেয়ে ‘দোষ’, মাঝরাতে গাছ থেকে বেলপাতা পাড়া, পুজোর অঞ্জলির স্মৃতিতে ডুব দিলেন তারকারা

অঞ্জলি ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। অষ্টমীর সকালে আনন্দবাজার অনলাইনে রইল চার অভিনেতার পুজোর অঞ্জলির স্মৃতিচারণা।

Bengali actors shares their Durga Puja Anjali memories on Ashtami

(বাঁ দিক থেকে) খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, পাওলি দাম এবং অরুণিমা ঘোষ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৪ ০৭:৫৮
Share: Save:

পুজোর অবিচ্ছেদ্য অংশ অঞ্জলি। ভগবানের কাছে ভক্তের প্রার্থনার মাধ্যম। বাঙালি এবং দুর্গাপুজোর অঞ্জলি— ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সুদীর্ঘ যাত্রাপথ। শৈশবে মন্ত্র না বুঝতে পারা থেকে কৈশোরে পছন্দের মানুষটির দিকে ফুল ছুড়ে দেওয়া অঞ্জলির ভাল লাগা। আবার বয়সের সঙ্গেই সেই অঞ্জলির মাধ্যমেই আগামী বছরের পুজোর প্রস্তুতির সলতে পাকানোর সূত্রপাত। অষ্টমীতে অঞ্জলি ‘মাস্ট’। সপ্তমী থেকে দশমী— অঞ্জলি নিয়ে বাঙালির নানা অভিজ্ঞতা। কখনও তা মজাদার, কখনও তা গুরুতর। দুর্গাপুজোর অঞ্জলি নিয়ে অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন টলিপাড়ার চার অভিনেতা।

পুজোর সময়ে সাধারণত শহরের কোলাহল থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন খরাজ মুখোপাধ্যায়। প্রত্যেক বছর বীরভূমের পাথাই গ্রামে পৈতৃক বাড়ির পুজোতে সপরিবার উপস্থিত হন অভিনেতা। এ বছর তিনি সম্ভবত কলকাতায় থাকছেন। অনুষ্ঠানের ব্যস্ততা রয়েছে। তবে, পরিবারের বাকি সদস্যেরা বাড়ির পুজোতে যোগ দিতে যাবেন। খরাজ জানালেন, বাড়ির পুজোয় থাকলে তিনি পুজোর চার দিনেই দেবীর সামনে অঞ্জলি দেন। তা-ও নির্জলা উপোসের পর। খরাজের কথায়, “ছোটবেলায় তো অঞ্জলি দিতে না চাইলে বাবা, কাকারা কান ধরে নিয়ে যেতেন। তবে আমাদের বাড়িতে আচারবিধি মেনে পুজো হয়। তাই ফাঁকি দেওয়ার অবকাশ ছিল না।”

অঞ্জলি প্রসঙ্গে শৈশবেরই একটি অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন খরাজ। অভিনেতা জানালেন, এক বার পুজোয় অষ্টমীর অঞ্জলির বেলপাতা জোগাড়ের দায়িত্ব পড়েছিল তাঁর উপর। খরাজ বললেন, “দাদু কিন্তু বেলপাতায় হাত দিয়েই বুঝতে পেরেছিলেন যে ওটা বাসি বেলপাতা! সঙ্গে সঙ্গে ধমক খেলাম।” তার পর গভীর রাত্রে কয়েক জন মিলে টাটকা বেলপাতা নিয়ে আসতে গেলাম। খরাজ বললেন, “গ্রামের দিকে রাতে বেলগাছে ব্রহ্মদৈত্যের ভয়! কিন্তু দাদুর ধমক খেয়ে আমাদের ভয় কেটে গিয়েছে। পড়িমরি করে গাছে উঠে সে যাত্রায় বেলপাতা পেড়েছিলাম।”

পুজোর দিনগুলোয় সাধারণত শহরেই থাকার চেষ্টা করেন অভিনেত্রী পাওলি দাম। তাঁর মতে, বয়সের সঙ্গে পুজোর অভিজ্ঞতা বদলে গিয়েছে। বিশেষ করে তিন বার ঠিকানা বদলের মাধ্যমে পুজোর স্মৃতিও তাঁর কাছে সময়ের সঙ্গে নতুন আঙ্গিকে ধরা দিয়েছে। পাওলি বললেন, “সাধারণত প্রতি বছর অষ্টমীর অঞ্জলিটাই দেওয়ার চেষ্টা করি। তার সঙ্গেই অষ্টমীর ভোগ খেতেই হবে। আশেপাশের মানুষগুলো হয়তো বদলে গিয়েছেন। কিন্তু পুজো এবং অঞ্জলিটা একই রকম রয়ে গিয়েছে।” মধ্য কলকাতার ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির পাশের বাড়িতে পাওলির জন্ম। তাই ছোট থেকেই পুজোর অঞ্জলির সঙ্গে তাঁর একাধিক স্মৃতি। বিশেষ করে ভাই-বোনেদের সঙ্গে একসঙ্গে অঞ্জলি দেওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর মনে আজও টাটকা। পাওলি বললেন, “ছোটবেলায় অনেকেই হয়তো অঞ্জলির মন্ত্র বুঝতে পারে না। তবে আমি কিন্তু মন দিয়ে শোনার চেষ্টার করতাম। পিছিয়ে পড়লেও আবার পুরোহিতের ঠোঁট দেখে মন্ত্রোচ্চারণে ফিরে আসতাম।” পুজোর অঞ্জলিতে পুরোহিতের ভুল মন্ত্রোচ্চারণের সাক্ষীও থেকেছেন পাওলি। তাঁর কথায়, “এক জন বয়স্ক মানুষ বিষয়টা লক্ষ্য করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। কিন্তু দুর্গাপুজো খুব বড় পুজো। পুরোহিতদেরও সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে পুজো করতে হয়। আমাদেরও একটু বিবেচনা করা উচিত।”

পাওলি এখন দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। তাঁর কথায়, “লেক গার্ডেন্সেও পাড়ার সকলের সঙ্গে অঞ্জলি দিতাম। আর এখন যেখানে থাকি, সেই আবাসনে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। তাঁরা কিন্তু অঞ্জলির সময় আমার জন্য অপেক্ষা করেন। আশা করেন যে আমি সন্ধিপুজোয় থাকব। আমিও উপস্থিত থাকার চেষ্টা করি।” কাজের জন্য কোনও বছর পুজোয় কলকাতার বাইরে থাকতে হলেও মনে মনে পুজোর শহরকেই খোঁজেন পাওলি। তাঁর কথায়, “বাইরে থাকলে তো সম্ভব নয়। তাই মনে মনে অঞ্জলি দিয়ে দিই, শুধু আচার মেনে হয় না, এটাই যা।”

পুজোর সময়ে শহরে থাকেন না বিশ্বনাথ বসু। পুজোর দিনগুলোয় তাঁর ঠিকানা বসিরহাটের আরবেলিয়া গ্রাম। সেখানকার পৈতৃক ভিটেয় দুর্গাপুজোর এ বার ৩৫৪তম বর্ষ। বিশ্বনাথের কথায়, “এটা আমার জীবনের ৪৬তম পুজো। জ্ঞানত কোনও বছর অঞ্জলি বাদ পড়েনি।” বাড়ির পুজোয় রীতিনীতি মেনেই পুজো হয়। তিন দশক ধরে সেই পুজো করছেন মধুসূদন চট্টোপাধ্যায়। বিশ্বনাথের কথায়, “পুজোর সময়ে তাঁর মন্ত্রোচ্চারণে গমগম করে ঠাকুরদালান। সেখানে দাঁড়িয়ে থেকে একটা অন্য রকমের অভিজ্ঞতা হয়।”

বিশ্বনাথের মতে, পুজোর অঞ্জলিতে কোনও রকম ফাঁকি থাকতে পারে না। বললেন, “অনেককেই দেখি বলেন, ‘অঞ্জলিটা একটু ছোট করে দেবেন!’ এখানে আমার আপত্তি রয়েছে। প্রয়োজনে অঞ্জলি দেব না। দাঁড়িয়ে সমস্যা হলে বসে দেব, কিন্তু সেখানে কোনও ‘শর্টকাট’ থাকতে পারে না।” তবে শুধু অষ্টমী নয়। পুজোর দিনের প্রতিটা অঞ্জলিই তাঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন বিশ্বনাথ।

দুর্গাপুজোর অঞ্জলি প্রসঙ্গে অরুণিমা ঘোষের জ্ঞান মামার বাড়ির সৌজন্যে। প্রতি বছর পুজোয় অঞ্জলি দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এই বছর পুজোর অঞ্জলিতে যোগ নিতে পারবেন না অরুণিমা। কারণ বছরের শুরুতেই অভিনেত্রীর পিতৃবিয়োগ হয়েছে। বললেন, “আমার মা অঞ্জলি না দেওয়া পর্যন্ত জলস্পর্শ করেন না। আমি অষ্টমীর দিন অঞ্জলি দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এ বার এক বছরের বিরতি। আগামী বছর থেকে আবার পুজোয় অঞ্জলি দেব।”

আমহার্স্ট স্ট্রিটের হৃষিকেশ পার্কের দুর্গাপুজোয় শৈশবের একটি ঘটনা ভাগ করে নিলেন অভিনেত্রী। অঞ্জলি একাধিক পর্বে হয়। অরুণিমার কথায়, “আগে এক জন অঞ্জলি দিয়েছেন। আমি ভুল করে তার থেকে একটা পেয়ারা খেয়ে নিই। তার পর শুরু হল বিবেক দংশন! মনের মধ্যে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, তা হলে কি আমার পরীক্ষার ফল খারাপ হবে!” কিন্তু সে যাত্রায় দিদিমার হস্তক্ষেপে বিবেক দংশনের হাত থেকে মুক্তি পান অরুণিমা। তাঁর কথায়, “দিদিমা বললেন, মা দুর্গাকে গিয়ে বলতে ভুল করে খেয়ে ফেলেছি। কোনও দোষ হবে না। সে বছর খুব ভাল ফল হয়েছিল, অঙ্কে মনে হয় ৮৫ নম্বর পেয়েছিলাম।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE