দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য। —নিজস্ব চিত্র।
ধাঁধার চেয়েও জটিল সে... ক্যানসার। এ নিয়ে কারও মনে প্রশ্ন নেই। এ রহস্য সমাধানে বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য গবেষণা চলছে। কিন্তু দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ল্যাবে তৈরি ওষুধ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পৌঁছে মানবদেহে পরীক্ষায় আর কাজ দেয় না। এক-আধটা ঘটনা নয়। বিশেষজ্ঞেরাই বলছেন, ল্যাবের গণ্ডি পেরোলেও ৯০ শতাংশ ওষুধ সরকারি অনুমোদন পায় না। গবেষণার শেষ ধাপে পৌঁছে ব্যর্থতার মুখে পড়েন তাঁরা। এর কারণ খুঁজতে গবেষণা শুরু করেছিলেন একদল বিজ্ঞানী। যে দলের নেতৃত্বে ছিলেন আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী দেবাঞ্জন ভট্টাচার্য। এই গবেষণাপত্রটি ‘সেল কেমিক্যাল বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, যথাযথ জিন-বিশ্লেষণের অভাবে কার্যক্ষেত্রে অসফল হচ্ছে বহু ওষুধ। ক্যানসারের ওষুধ তৈরির জন্য যা খুবই জরুরি।
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ইয়েল ক্যানসার সেন্টারের বিজ্ঞানী, সার্জারি ও জেনেটিকস বিভাগে অধ্যাপক জেসন শেল্ৎজ়ার। ইয়েল স্কুল অব মেডিসিনের রিপোর্টে তিনি জানিয়েছেন, অনেক সময় গবেষকেরা কোনও ওষুধ তৈরি করে দেখেন সেটা ক্যানসার কোষকে মারছে কি না। শুধুমাত্র এর উপরে ভিত্তি করেই ট্রায়াল শুরু হয়ে যায়। কোনও জেনেটিক বিশ্লেষণ করে দেখা হয় না, কী ভাবে ক্যানসার কোষকে মারছে ওই ওষুধটি বা কেন মারছে। শেলৎজ়ার বলেন, ‘‘জেনেটিক চরিত্র বোঝা না গেলে ওষুধটি কোন ক্যানসার নিরাময়ে কাজ দেবে, সেটাই বোঝা সম্ভব নয়।’’
দেবাঞ্জন জানান, তাঁরা ল্যাবে তৈরি বেশ কিছু ক্যানসারের ওষুধ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। এমনই একটি ওষুধ ম্যাপ কাইনেজ় (প্রোটিন)-কে নিশানা করে বলে জানা ছিল। দেবাঞ্জন জানান, ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। ক্যানসারের বেশির ভাগ ওষুধে দেখা যায়, টিউমার কোষগুলিকে মারার পাশাপাশি সুস্থ-স্বাভাবিক কোষগুলিরও ক্ষতি করে ফেলে ওষুধ। এই ওষুধটিতে তা হচ্ছিল না। ফলে এটি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উৎসাহ ছিল বেশি। কারণ অনেক সময়েই দেখা যায়, ক্যানসার নয়, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রোগী প্রাণ হারান। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সমস্যা ছিল, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন কম, কার্যকারিতাও কম। এই ওষুধটির জেনেটিক বিশ্লেষণ শুরু করেন দেবাঞ্জনরা। তাতে ধরা পড়ে, ওষুধটি ম্যাপ কাইনেজ় পাথওয়েতে কাজই করে না। বরং ইজিএফআর (অন্য একটি প্রোটিন) টার্গেটেড ড্রাগের সঙ্গে এর জোরদার সম্পর্ক রয়েছে।
দেবাঞ্জন জানান, সব ক্যানসারের চরিত্র এক নয়। ফলে তার সমাধানও এক নয়। ওষুধটির জেনেটিক চরিত্র জানা ছিল না বলে ভুল পথে তাকে চালিত করা হচ্ছিল। অনেকটা সচিনকে দিয়ে ক্রিকেট না খেলিয়ে কবাডি খেলানো। দেবাঞ্জন জানান, ইজিএফআর ইনহিবিটরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অর্থ এটির ফুসফুসের ক্যানসার নিরাময়ে কাজ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গবেষণার পরবর্তী ধাপে এরই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বীরভূমের ছেলে দেবাঞ্জন। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে স্নাতকোত্তরের পরে আইআইসিটি হায়দরাবাদ থেকে পিএইচডি। বর্তমানে ক্যানসার বায়োলজি নিয়ে গবেষণা করছেন। দেবাঞ্জন বলেন, ‘‘আমাদের গবেষণায় এটা স্পষ্ট হয়েছে, যে ওষুধগুলি ইতিমধ্যেই ল্যাবে তৈরি হয়েছে, সেগুলির জিন-চরিত্র যদি বোঝা যায়, সে ক্ষেত্রে ক্যানসার-রহস্যের অনেক ধাঁধারই সমাধান হয়তো মিলবে। ইতিমধ্যেই ওষুধগুলি তৈরি রয়েছে, ফলে নতুন করে খরচেরও প্রশ্ন নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy