সুভাষ পালের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছনোর পর শোকার্ত স্ত্রী ও মেয়ে। — অভিজিৎ সিংহ
বিয়াল্লিশ বছরের সুনীতা হাজরা যখন পাহাড়ের উপরে দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে ‘মিরাকল’ শব্দটাকে সত্যি করে তুলছিলেন, আর একটা লড়াই চলছিল সমতলে। ফিরিয়ে আনার লড়াই। কার্যত সব আশাই যখন প্রায় শেষ, তখনও হাল না ছেড়ে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ওঁরা। সুনীতার স্বামী-বন্ধুরা।
রাজ্য সরকারের তরফে কাঠমান্ডুতেই ছিলেন পর্বতারোহী দীপঙ্কর ঘোষ। শুক্রবার ক্যাম্প ফোর থেকে বেরোনোর পর থেকে শনিবার সারা দিন ধরে সুনীতার খবর পাওয়া যাচ্ছে না, জানার পরে রবিবার সকালেই কাঠমান্ডু পৌঁছে যান সুনীতার স্বামী সুদেব হাজরা আর পারিবারিক বন্ধু জয়দীপ রায় ও কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন পর্বতারোহণ আয়োজক সংস্থার কর্ণধার লোবেন শেরপা।
সুনীতার খবরটা পাওয়ার পরে সুদেবের মুখে থেকে একটাই কথা বেরোল, ‘‘আমরা পারলাম!’’
বেসক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল সুনীতার। শনিবার দুপুরের পর থেকে আর কোনও খবর নেই। দুশ্চিন্তায় চুপ হয়ে গিয়েছিলেন সুদেব। বিকেল ফুরোতেই জানলার দিকে তাকিয়ে এক বার কেঁপে উঠে বলেছিলেন, ‘‘পাহাড়ে তো অন্ধকার নেমে আসছে। কী হবে এ বার!’’ জয়দীপ বললেন, ‘‘এই কথাটা শুনেই সিদ্ধান্ত নিই, দেরি হয়ে যাচ্ছে। কাঠমান্ডু যাব কালকেই।’’
কিংশুক বলছিলেন, কাঠমান্ডু পৌঁছনোর পরের পর্বটার কথা। রবিবার গোটা দিনটা কেটেছে খবর আর পাল্টা খবরে। এই মুহূর্তে পাওয়া তথ্য পরের মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে। দিনভর ফোন কানে বেসক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন লোবেন। যদি কোনও খবর আসে ! ‘‘এক একটা সময়ে সত্যিই মনে হচ্ছিল, শেষরক্ষা করা যাবে না বোধ হয়,’’ বললেন তিনি।
চেষ্টার ত্রুটি হয়নি এক মুহূর্তের জন্যও। লোবেন যে দ্রুততা ও তৎপরতার সঙ্গে হেলিকপ্টার জোগাড় করে পাঠিয়েছেন, সেটা না হলে সুনীতাকে ফিরে পাওয়া কঠিন হতো। সব রকম সাহায্যের আশ্বাস নিয়ে পাশে ছিলেন দীপঙ্কর। জয়দীপ বললেন, ‘‘সোমবার দুপুরে যখন খবর পেলাম ক্যাম্প টু থেকে হেলিকপ্টারে উঠেছেন সুনীতা, তখনও ঠিক জানতাম না, কেমন অবস্থায় দেখতে পাব ওঁকে। শুধু প্রার্থনা করছিলাম যে এতটা লড়াই চলেছে, আর একটু চলুক।’’
কী বলছেন সুদেব? লুকলা থেকে ফোনে যখন প্রথম গলার আওয়াজ পেলেন, কোনও কথা বলতে পারেননি কিছু ক্ষণ। ‘‘বিশ্বাস হচ্ছিল না, সুনীরই গলা শুনছি,’’ হেসে বললেন সুদেব। কাঠমান্ডু এয়ারপোর্টে হেলিকপ্টার পৌঁছনোর পর অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাইরে আনা হয় সুনীতাকে। তখনই প্রথম দেখা সুদেবের সঙ্গে। কেঁদে ফেলেছিলেন সুনীতা। ‘‘কাঁদছ কেন?’’ সুনীতা বলেন, ‘‘সুভাষ, গৌতমদা, পরেশদারা কোথায় হারিয়ে গিয়েছে...!’’
ডান হাতে তুষার ক্ষত হয়েছে সুনীতার। এ ছাড়া আর তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা নেই। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শুধু মানসিক জোরেই এই কঠিন পথ পার করেছেন সুনীতা। দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে প্রাথমিক পরীক্ষা সারার পর বলে ওঠেন, ‘‘খেতে দেবে কিছু? খাওয়া হয়নি অনেক দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy